সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজোয় পাহাড় ছুঁয়ে থাকা রিসর্ট বা কটেজে থেকেও মণ্ডপে গিয়ে দিতে পারবেন অষ্টমীর অঞ্জলি। ধনুচি নিয়ে নাচার ইচ্ছা হলেও হতাশ হবেন না। শুধু কি তাই, অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় একটু অন্যরকম কাটাতে ঢাকও তুলে নিতে পারেন কাঁধে। দশমীর সকালে মাততে পারেন সিঁদুর খেলায়। পুজো প্যাকেজে পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া আর ঘোরাঘুরির সঙ্গে দুগ্গাপুজোর নানা আচার অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট ইকো ট্যুরিজম।
সেইসঙ্গে থাকছে এক অন্যরকমের অ্যাডভেঞ্চার। ছিপ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুকুরেও মাছ ধরতে পারবেন আপনি। পুজোয় নিজের মতো আয়েশ করে কাটাতে পুরুলিয়ার সরকারি-বেসরকারি পর্যটক আবাসগুলো নানাভাবে তাদের পুজো প্যাকেজ সাজিয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়ে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের লিজ দেওয়া পর্যটক আবাস আকাশ হিলটপ রিসর্টও পর্যটকদের সাইট সিয়িংয়ের পাশাপাশি পুজো মণ্ডপ ঘোরাবে। এছাড়া স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পুজোর কয়েকটা দিন কাটানোরও ব্যবস্থা করে দেবে রিসর্ট কর্তৃপক্ষ। পুজো মণ্ডপের বাইরে যেমন ফুচকা, ভেলপুরি, চাট থাকে গড়পঞ্চকোটের রিসর্ট-কটেজে থাকছে সে ব্যবস্থাও। আসলে পুজো মানেই যে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া। তাই গড়পঞ্চকোটে সরকারি প্রকল্পে লিজ দেওয়া চারুলতা রিসর্টের অরণ্যে দিনরাত্রি ট্যুরিজম প্রোজেক্টেও থাকছে বাঙালির মাছের নানা পদ। তাই মহাপঞ্চমী থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট, অযোধ্যা পাহাড়ের রিসর্ট, কটেজ, হোটেল, লজ সবই হাউসফুল। একই অবস্থা বড়ন্তি, জয়চণ্ডীপাহাড়, খয়রাবেড়াতেও।
[হিন্দি ছবিতে দেখা এসব গ্রামে পাড়ি জমানোর কথা ভেবেছেন?]
আসলে উত্তরবঙ্গ ছাড়া কলকাতা-শহরতলি থেকে খানিকটা কাছেপিঠে এমন পাহাড়-জঙ্গলের হাতছানি পুরুলিয়া ছাড়া আর কোথাও নেই। সঙ্গে রয়েছে নানা ইতিহাস। তাই গত কয়েকবছর ধরেই পুজোয় বাঙালির যেন অন্যতম ডেস্টিনেশন হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া। ফলে আগস্ট মাস থেকেই এই জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ঘর পাওয়া ভীষণ মুশকিল হয়ে ওঠে। এই অক্টোবরেও জেলার সরকারি-বেসরকারি কটেজগুলিতে একটা ঘরের জন্য একের পর এক ফোন আসছে। গড়পঞ্চকোট ইকো ট্যুরিজমের ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো বলেন, “পুজোয় পর্যটকদের জন্য আমরা সব ব্যবস্থা রাখছি। কেউ যদি অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে চান বা দশমীতে সিঁদুর খেলা কিংবা ধনুচি নিয়ে নাচ বা ঢাক বাজাতে চান। তাঁদের মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে আমরা সব ব্যবস্থাই করে দেব। অ্যাডভেঞ্চারের একটু অন্যরকম নেশায় মাছ ধরার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আর ট্রেকিং তো রয়েইছে। সঙ্গে বাঙালিয়ানা খাবারের ঢালাও পদ।” যেমন অরণ্যে দিনরাত্রি ট্যুরিজম প্রোজেক্ট বা অরণ্যে দিনরাত্রি গো-বাগে পুজোয় থাকছে বাঙালির অন্যতম প্রিয় মাছের নানা পদ। ওই প্রোজেক্টের কর্ণধার সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুজো মানে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া। তাই বাঙালি ঘুরতে গিয়ে যাতে পছন্দের খাবারের কোনও সমস্যা না হয় সেই বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। তাই বাঙালির নানা পদ নিয়ে আমরা পুজোর কয়েকটা দিন প্রস্তুত থাকব। বিশেষভাবে থাকছে মাছের নানা পদ। পাবদা, চিংড়ি, ইলিশ, ভেটকি, ট্যাংরা এমনকী, চুনো মাছ, মৌরলার নানা পদও মিলবে আমাদের কটেজে।” অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ রিসর্টও পুজোয় পর্যটকদের ঘোরাতে একাধিক স্থানীয় যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাইড তৈরি করেছে। ওই রিসর্টের কর্ণধার মোহিত লাটা বলেন, “পর্যটকরা চাইলে এই পাহাড়ে প্রকৃতির কোলে থাকা নানা পুজো মণ্ডপ আমরা ঘুরিয়ে দেব। পুজোয় ছৌ-নাচ দেখতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও থাকছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.