রিংকি দাস ভট্টাচার্য ও অভিরূপ দাস: চোখে দেখতে পান না মনোজ পানিগ্রাহী। তবু তিনি দেখে ফেলেছেন ওমর খৈয়ামের পুঁথি, মহারাজা নন্দকুমারের পাগড়ি! পড়ে ফেলেছেন চার্নকের কলকাতা পত্তনের গল্প।মারকানা মার্বেলের অলিন্দে এতদিন ঐতিহাসিক মণিমাণিক্য অধরাই ছিল দৃষ্টিহীনদের কাছে। নতুন বছর থেকেই সে দূরত্ব মুছে যাবে।
ভিক্টোরিয়া মিউজিয়ামের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে দৃষ্টিহীন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ভিক্টোরিয়ার দরজা নতুন করে খুলে দেওয়ার। আপাতত ঠিক হয়েছে ভিক্টোরিয়ার মিউজিয়ামের মূল পঞ্চাশটি দ্রষ্টব্যকেই এই তালিকায় আনা হবে। প্রতিটি দ্রষ্টব্যের সঙ্গে থাকবে ব্রেল পদ্ধতিতে লেখা। উঁচু এই অক্ষর স্রেফ ছুঁয়েই পড়ে ফেলতে পারবেন দৃষ্টিহীনরা। এতদিন সাধারণ দর্শকরা ভিক্টোরিয়ায় জমে থাকা কলকাতার ইতিহাস চাক্ষুষ করলেও দৃষ্টিহীনদের কাছে তা অধরা ছিল। সেই সব জিনিস এবার হাতের মুঠোয়। কবে অন্য চোখে নতুন ভিক্টোরিয়াকে পাওয়া যাবে? চেষ্টা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসেই নতুন এই ব্যবস্থা চালু করার। এখানেই শেষ নয়। উইলিয়াম এমারসনের স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি এই মহল ১৮৪ ফুট উঁচু। রয়েছে রয়্যাল গ্যালারি, ন্যাশনাল লিডার গ্যালারি, পোট্রেট গ্যালারি, স্কাল্পচার গ্যালারির মতো পঁচিশটি গ্যালারি। উচুতলার গ্যালারিতে প্রবেশের সমস্যা মেটাতে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় একটি এলিভেটর বসতে চলেছে ভিক্টোরিয়ায়। জয়ন্তবাবুর কথায়, “এই এলিভেটরটি হবে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য। ফলে দোতলার গ্যালারিগুলো তাদের দর্শন করতে কোনও অসুবিধে হবে না।” একতলার বেশি কিছু গ্যালারির মুখে সিঁড়ি রয়েছে। ওয়াকিং স্টিক হাতে সে বাধা পেরোতে সমস্যা হয় দৃষ্টিহীনদের। ঠিক হয়েছে, গ্যালারিতে উঠতে যাতে প্রতিবন্ধীদের কোনও সমস্যা না হয়, সে কারণে ফেলে দেওয়া হবে কিছু সিঁড়ির ধাপ।
৬৪ একরের প্রাসাদ ঘুরে দেখা বড় সোজা কথা নয়। মূল তোরণ থেকে ভিক্টোরিয়ার গ্যালারির দুরত্ব অনেকখানি। ক্র্যাচ নিয়ে যাঁরা ভিক্টোরিয়ায় প্রবেশ করেন, তাঁদের জন্য নতুন সাজের ভিক্টোরিয়ায় ব্যাটারি চালিত বিশেষ গাড়ি থাকবে। জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আপাতত ঠিক হয়েছে ব্যাটারিচালিত দুটি গাড়ি রাখা হবে। তবে প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে। এখন ভিক্টোরিয়ায় নিরাপত্তার কারণে ব্যাটারি চালিত গাড়ি নিয়েই টহল দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। দর্শকদের চাপ বাড়লে সে গাড়িও ব্যবহার করা হবে প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী দর্শকদের জন্য। থ্রি-ডি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের ব্যবস্থাও প্রায় পাকা। আগামী এপ্রিল থেকেই রবীন্দ্রনাথ থেকে রামমোহন, বিদ্যাসাগর থেকে জোব চার্নক তাঁদের গল্প শোনাবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। কলকাতা শহরের ৩০০ বছরের ইতিহাস জীবন্ত হয়ে উঠবে মনীষীদের কথায়। থ্রি-ডি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেশের খুব কম জায়গাতেই আছে বলে দাবি করেছেন ভিক্টোরিয়ার কিউরেটর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.