শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: পুজোর মুখে ফের বড়সড় ধাক্কা পাহাড়ের পর্যটন শিল্পে। এতদিন শৈলরানীতে বিনামূল্যে ‘টাইগার হিল’দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন পর্যটকরা। কিন্তু এখন থেকে মাথা পিছু পর্যটককে টাইগার হিল দেখতে দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা। ১৫ সেপ্টেম্বর এই নির্দেশিকাই জারি করল বন দপ্তর।
[ আরও পড়ুন: পরিত্যক্ত সরকারি ইট কারখানাই এখন দুষ্কৃতীদের ডেরা, পুনরুদ্ধারে তৎপর অন্ডাল প্রশাসন ]
দার্জিলিংয়ের যানজট সমস্যা কমাতে সম্প্রতি টাইগার হিলে পর্যটক বোঝাই গাড়ি প্রবেশে রাশ টানে জেলা পুলিশ। আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে তিনশো গাড়ি যাতায়াত করত৷ এক ধাক্কায় সেই সংখ্যা কমিয়ে একশো নিয়ে আসা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটর ও স্থানীয় গাড়ি চালকরা৷ তবে কার্যত সেই প্রতিবাদ ধোপে টেকেনি। এরই মধ্যে পর্যটকদের উপর বাড়তি পঞ্চাশ টাকার বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা৷ তাঁদের বক্তব্য, এতদিন টাইগার হিল দেখতে কোন টাকা নেওয়ায় হত না৷ কিন্তু এবার অনেক পর্যটকই টাকা দিতে চাইবেন না। ফলে টিকিটের টাকাও তাঁদেরই দিতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্যুর অপারেটরদের একাংশ। যদিও বন দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, যে টাকা পর্যটকদের থেকে সংগ্রহ করা হবে তা স্থানীয় বনবস্তি ও জঙ্গলকে রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে। দার্জিলিং ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ওয়াইল্ড লাইফ) জিজু জেসপার বলেন, “১৫ সেপ্টেম্বর থেকে টিকিট কিনে টাইগার হিল দেখার নিয়ম লাগু করা হয়েছে। স্থানীয় বনবস্তি বাসিন্দাদের উন্নয়নে সেই টাকার একটা অংশ তুলে দেওয়া হবে। বাকি অংশ জঙ্গল দেখাশোনা ও বন দপ্তরের অন্যান্য কাজে লাগান হবে।” তিনি আরও জানান, সারা বছরে বন্য প্রাণীদের আক্রমণে বনবস্তির বেশ ক্ষতি হয়ে থাকে। ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া সারা বছর সেরকম কাজ থাকে না বনবস্তিবাসীর। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সংগৃহীত সেই টাকার কিছু অংশ তাঁদের দেওয়া হবে।
[ আরও পড়ুন: ‘মঙ্গলগ্রহ থেকে এলেও হিন্দুরা থাকবেন’, NRC প্রসঙ্গে মন্তব্য সায়ন্তনের ]
হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, “বন দপ্তরের আচমকা এই সিদ্ধান্তে পর্যটনে আঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন ও বন দপ্তরের আধিকারিকদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।” পাহাড়ের ট্যুর অপারেটর সুরেশ পেরিওয়াল বলেন, “পুজোর মরশুমের বুকিং মার্চ-এপ্রিল মাসেই নেওয়া হয়ে যায়। পর্যটকরা প্যাকেজে সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে দেয়। এখন এই নিয়ম লাগু করায় ট্যুর অপারেটরদের পকেট থেকে টিকিটের টাকা দিতে হবে।” দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টসের সম্পাদক প্রদীপ লামা বলেন, “জলদাপাড়া বা সান্দাকফুর মতো অভয়ারণ্য প্রজননের সময় বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু টাইগার হিল বন্ধ থাকে না। তাই সারা বছরই পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে হিল। তাহলে কিসের সংরক্ষিত বন হল?”
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, টাইগার হিল সিঞ্চেল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঞ্চুয়ারির অন্তর্গত। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন ধারায় কোন বনাঞ্চলে প্রবেশ মূল্য লাগু করতেই পারেন। এছাড়া টাইগার হিল সংলগ্ন ৩১ টি বনবস্তি রয়েছে। প্রবেশের টাকার ৪০ শতাংশ সরাসরি সেইসব বনবস্তির কমিটির হাতে তুলে দেবে বন দপ্তর। বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার হবে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন ও উন্নয়নের কাজে। সেজন্য টাইগার হিল সংলগ্ন এলাকায় বন দপ্তরের তরফে একটি টিকিট কাউন্টারও খোলা হয়েছে। বন কর্মীদের পাশাপাশি বন দপ্তর অনুমোদিত বনবস্তি কমিটির ১০জন সদস্য টিকিটের বিষয়টি দেখাশোনা করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.