সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: লকডাউন এর গেরোয় বিপর্যস্ত জনজীবন। এক ধাক্কায় তছনছ হয়ে গিয়েছে পুরো সামাজিক প্রক্রিয়া। ঘেঁটে গিয়েছে পূর্বনির্ধারিত বহু কর্মকাণ্ড। তা থেকে বাদ যায়নি উত্তরবঙ্গের অন্যতম অর্থনৈতিক লাভজনক ফিল্ম ট্যুরিজমও। বাতিল করতে হয়েছে বহু চলচ্চিত্রের শুটিং। তার মধ্যে টলিউড-বলিউড এমনকী দক্ষিণ ভারতীয় ছবির তালিকাও নেহাত ছোট নয়। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যেই অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। লকডাউন কতদিন চলবে, তার ওপর নির্ভর করে অন্তত কয়েকশো কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
করণ জোহরের ধর্মা প্রোডাকশন, রাজশ্রী প্রোডাকশনের মতো বলিউড প্রযোজনা সংস্থাগুলি থেকে টলিপাড়ার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল বা দক্ষিণের পরিচালক মনিরত্নম, বাতিলের তালিকায় কারা নেই! সব কিছু সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলে এই সময়ে বা আগামী কয়েক দিনে দার্জিলিং-কালিম্পং কিংবা ডুয়ার্সে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যেত এই সমস্ত প্রযোজনা সংস্থার শুটিং ইউনিটগুলিকে। এই মুহূর্তে শুটিং চলার কথা ছিল নাম ঠিক না হওয়া একটি বাংলা চলচ্চিত্রের। ১৫ মার্চ ওই সিনেমার শুটিংয়ের জন্য লামাহাটা পৌঁছে গিয়েছিলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়রা। তড়িঘড়ি তাঁদের জরুরি গাড়িতে কলকাতা ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন ওই শুটিং ইউনিটের দায়িত্বে থাকা বাবলু বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আচমকা লকডাউনের সম্ভাবনার খবর আসে আর্টিস্ট ফোরাম থেকে। ফলে দ্রুত না ফিরে গেলে পরে বিপদে পড়তে হতে পারে। ওই পরিস্থিতিতে শুটিং করানো সম্ভব ছিল না। তাই তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
একটি বলিউডের ছবির শুটিং করতে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং ছিলেন অভিনেত্রী তাপসী পান্নু। মাঝে মুম্বই ফিরে গেলেও ফের এপ্রিলে শুটিংয়ে আসার কথা ছিল তাঁর। আপাতত সেসব বিশ বাঁও জলে। করণ জোহরের ধর্মা প্রোডাকশন একটি নতুন ছবি শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলের শেষ থেকে। প্রায় গোটা মে মাস ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় শুটিং চলার কথা ছিল। চল্লিশ দিনের একটি শুটিংয়ের সমস্ত পরিকল্পনা ও অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। হোটেল-রিসর্ট-সহ অন্যান্য বুকিং আপাতত বাতিল। আপাতত সে সব মুলতুবি রাখতে হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে। জি বাংলা চ্যানেলের নিজস্ব প্রযোজনা ‘তিতলি’ নামে একটি মেগা ধারাবাহিকের ১৫ দিনের শুটিং হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলের শেষে। সে সব এখন অলীক স্বপ্ন। পাশাপাশি ডুয়ার্স এবং পাহাড়ে শুটিং আসার কথা ছিল এম রবি, অর্জুন সারিয়া-সহ আরও কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর। সেগুলোও আপাতত বাতিল।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উত্তরবঙ্গের অন্যতম ব্যবস্থাপক দীপজ্যোতি চক্রবর্তী জানান, গত কয়েক বছরে এই এলাকায় শুটিংয়ের চাহিদা বেড়েছে। সারা বছরই টানা শুটিং থাকে উত্তরবঙ্গ তথা ডুয়ার্স, তরাই, পাহাড়ে। বিশেষ করে এই সময় বসন্তে যখন পাহাড়-ডুয়ার্সে রকমারি ফুলের সমাহার ঘটে, প্রকৃতির এই দৃশ্য তুলে ধরতে এর আগে বারবার ছুটে এসেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, অনুরাগ বাসু থেকে শুরু করে শক্তি সামন্ত কিংবা রাজ চক্রবর্তীরা। তাই লকডাউনের প্রভাবে এতগুলো শুটিং বাতিল হয়ে গেলে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে বলে মনে করছে চেম্বার অব কমার্সও। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অফ কমার্স, নর্থবেঙ্গল বা ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, “চলচ্চিত্র পর্যটন এলাকার অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি। বিশেষ করে যে কোনও শুটিং ইউনিটের সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ বা কখনও তারও বেশি লোক এসে থাকেন। তাঁদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে থাকা, যাতায়াত, সমস্ত মিলিয়ে একটা বড় অংশের কর্মসংস্থান হয়। সে সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় গোটা সার্কিটটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। যার আর্থিক ক্ষতি কোটি টাকার কম নয়। আর যে সময় নষ্ট হচ্ছে, তার জন্য যে ক্ষতি তা তো আর টাকার অঙ্কে হিসেব করা সম্ভব নয়!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.