বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: জন্মদিনেই সর্বপ্রথম পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট পর্বত জয় করেন শেরপা তেনজিং নোরগে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে ওই অভিযানে সঙ্গী ছিলেন এডমন্ড হিলারি। কিংবদন্তি পর্বতারোহী তেনজিংয়ের ১০৯ তম জন্মদিন স্মরণে সোমবার ট্রেকারদের জন্য খুলে দেওয়া হল সেই রোমাঞ্চকর পাহাড়ি রাস্তা যে পথে তেনজিং এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের উদ্দেশে কয়েকবার রওনা হয়েছিলেন। রাস্তার নামকরণ হয়েছে শেরপার নামে ‘তেনজিং নোরগে হাইকিং ট্রেইল’।
এদিন শৈল শহরের চৌরাস্তায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাস্তাটিতে পর্যটকদের যাত্রার সূচনা করেন জিটিএ-র পর্যটন দপ্তরের সভাসদ নর্দার্ন শেরপা। এদিনই ছিল এভারেস্ট জয়ের ৭০ তম বর্ষ। শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ে তেনজিং নোরগের মূর্তিকে ঘিরে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সেখানে শিলিগুড়ি পুরনিগম সহ বিভিন্ন সংগঠনের তরফে তেনজিং নোরগেকে ভারতরত্ন ঘোষণার দাবি জানানো হয়। নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওই দাবির কথা জানানো হয়। পাশাপাশি সংগঠনের সদস্যরা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন।
জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, তেনজিং নোরগে হাইকিং ট্রেইল দৈর্ঘে ১২ কিলোমিটার। হাঁটা পথ। উচ্চতা সাড়ে আট হাজার ফুট। হিমালয়ের পাকদণ্ডী বেয়ে পর্যটকরা ওই পথে পৌঁছে যাবেন শেষ প্রান্ত গদ্দিখান নামে পরিচিত গ্রামে। যেখানে দাঁড়িয়ে মনে হবে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে টাইগার হিল। নৈসর্গিক পরিবেশে বিরল অর্কিড, জৈব বৈচিত্র্যে ভরা পথে মিলবে লাম্বাহাটা গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ। সাংস্কৃতিক সম্পদে ভরা গুরুংগাঁও। জিটিএ মুখপাত্র শক্তি শর্মা জানান, তেনজিং নোরগে ১৯১৪ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন।
এডমন্ড হিলারিকে সঙ্গী করে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন ১৯৫৩ সালের ২৯ মে। সর্বশেষ জয়লাভের আগে কয়েকবার চেষ্টা করেছেন তেনজিং। তিনি অধুনা ‘তেনজিং নোরগে হাইকিং ট্রেইল’ ধরে এভারেস্ট শৃঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিতেন। সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময় ঐতিহ্যবাহী দুর্গম রাস্তাটিতে বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জিটএ-র কাছে পর্যটকদের জন্য রাস্তাটি খুলে দেওয়ার আরজি জানায়। এরপরই সমীক্ষা চালিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম বিকাশের কথা মাথায় রেখে রাস্তাটি চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। জিটিএ-র পর্যটন দপ্তরের সভাসদ নর্দার্ন শেরপা জানান, ওই পথে পাহাড়ি নদী রংডং পড়বে। সেটা পারাপার করতে গিয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে। পর্যটকরা পৌঁছে যাবেন রঙ্গিরুংয়ে। সেখান থেকে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে মনে হবে হাতের কাছে। সব মিলিয়ে ছ’ঘণ্টার হাটা পথ। রয়েছে চড়াই-উতরাই। এদিন শৈল শহরের চৌরাস্তার অনুষ্ঠানে রাস্তা চালুর কথা ঘোষণা হতে খুশির হাওয়া পাহাড়জুড়ে। দার্জিলিং অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের কো-অর্ডিনেটর দাওয়া শেরপা জানান, সান্দাকফুর পাশাপাশি এখানেও ট্রেকাররা ভিড় করবেন। তেনজিংয়ের স্মৃতিবিজড়িত তাই রাস্তার নামকরণ হয়েছে তেনজিং নোরগে হাইকিং ট্রেইল।
এদিকে, এভারেস্ট শৃঙ্গ বিজয় দিবস এবং তেনজিং নোরগের জন্মদিনে শিলিগুড়িতেও ছিল বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন। শহরের দার্জিলিং মোড়ে তেনজিংয়ের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা। ছিলেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এবারও তেনজিং নোরগেকে ভারত রত্ন ঘোষণার দাবি ওঠে। নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “ওই দাবির কথা মেইল করে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও এদিন সংগঠনের তরফে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.