দীপালি সেন: বাঙালির পায়ের তলায় সরষে। তাঁরাই ঘরবন্দি! দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে চলা লকডাউন পরবর্তীকালে, বিশেষত দুর্গোৎসবের সময় দেশ-রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ভিড় কয়েকগুণ হয়েছে। পাহাড় থেকে সমুদ্র ‘ঠাঁই নাই’ দশা ছিল। এবার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক পর্যটনও। সবচেয়ে সস্তার ও প্রিয় গন্তব্য ব্যাংকক, পাটায়ার দরজা এখনও পুরোপুরি না খোলায়, ভারতীয় পর্যটকদের টানছে দুবাই (Dubai) ও মালদ্বীপ (Maldives)। বাঙালিও এই দুই দেশমুখী। ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দিকেও পা বাড়াচ্ছেন পর্যটকরা। দুর্গোৎসবের আগে থেকেই এই ট্রেন্ড ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা।
কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি, টিকাকরণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শর্তসাপেক্ষে অনেক দেশই পর্যটকদের জন্য নিজেদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে দুবাই, যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপ, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা। আরও কয়েকটি দেশ শীঘ্রই সেই পথে হাঁটতে চলেছে। যার মধ্যে রয়েছে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড। ইতিমধ্যেই যে দেশগুলিতে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে সেগুলিতে ভ্রমণ শুরু করে দিয়েছে ভারত তথা বঙ্গবাসী। যাঁরা এখনও যাননি তাঁরা শীতের ছুটিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (টিএএআই) ইস্টার্ন রিজিওনের চেয়ারম্যান মানব সোনির কথায়, “কেউ বিমানে আসন পাচ্ছে না। আবার বিমানবন্দরে ঢুকলে এক ঘণ্টা লাইন দিতে হচ্ছে। যে জায়গাগুলো পর্যটকদের জন্য খুলেছে সেই সব জায়গার এই অবস্থা। পুজোর আগে থেকেই এই চিত্র। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সব বুকিং হয়ে আছে।”
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য মানুষের প্রথম পছন্দ ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপ ও দুবাই। মানব সোনি বলেন, “ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারে দুবাইয়ের বিমান ভাড়া ৩০ হাজারের কাছাকাছি থাকত, সেটা এখন প্রায় ৭০-৭৫ হাজার হয়ে গিয়েছে। সেই ভাড়াতেই মানুষ বুক করছে।” তবে, চলতি বছর আন্তর্জাতিককে টেক্কা দিচ্ছে অন্তর্দেশীয় পর্যটন। জানিয়েছেন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার ইস্টার্ন রিজিওনের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি। তাঁর বক্তব্য, “আন্তর্জাতিকের তুলনায় ডোমেস্টিক খুব ভাল হয়েছে এ বছর। অন্য বছর আন্তর্জাতিক বেশি ভাল হত। ৪০ শতাংশ অন্তর্দেশীয় ও ৬০ শতাংশ আন্তর্জাতিক হত। এবার সেটা ৮০ শতাংশ ডোমেস্টিক ও ২০ শতাংশ আন্তর্জাতিক হয়ে গিয়েছে।” অন্তর্দেশীয় পর্যটনের এই বৃদ্ধি আশাতীত বলেই জানা গিয়েছে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদাও প্রবল বলে জানা গিয়েছে। অপেক্ষা শুধু সীমান্ত খোলার। যা নভেম্বরে খুলে যেতে পারে বলে আশাবাদী পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। ব্যাংকক, পাটায়া, সাউথ ইস্ট এশিয়া খুলে গেলে বাজেট ট্রাভেলাররাও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পথে পা বাড়াবেন।
অন্তর্দেশীয় হোক বা আন্তর্জাতিক। পর্যটনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক হয়ে উঠেছে কোভিড টিকাকরণ। ফলে, ভারতে ১০০ কোটি টিকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়াকে সুনজরে দেখছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। ১০টি জাতীয় পর্যটন, ভ্রমণ এবং হসপিটালিটি শিল্প সংস্থার মিলিত সংগঠন ফেথ (ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশনস ইন ইন্ডিয়ান টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি)-এর জন্য কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, সাংসদ, বিধায়ক ও টিকাযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। ফেথ-এর চেয়ারম্যান নকুল আনন্দ বলেন, “১০০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য এই অভূতপূর্ব যৌথ জাতীয় দলের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। যা একটি সুস্থ ভারতীয় পর্যটন, ভ্রমণ ও আতিথেয়তা শিল্পকে পুনরায় চালু করার অনুপ্রেরণা প্রদান করবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.