স্টাফ রিপোর্টার, কাঁথি: অবশেষে হেরিটেজের তকমা মিলল দেশের প্রথম ডাকঘর ভবনের। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হল খেজুরিবাসীর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরিতে থাকা ভারতের প্রথম প্রাচীনতম ডাকঘরকে হেরিটেজ তকমা দিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। ১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি প্রথম ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্যোগী হন। ১৭৭২ সালে খেজুরির বন্দর অফিসের দোতলায় প্রথম ডাকঘর ব্যবস্থা প্রচলন করেন। তখনও ডাকটিকিট প্রচলিত হয়নি। সি পোস্টেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। পরে ১৮৫১-৫২ সালে যখন ভারতে প্রথম টেলিগ্রাফ লাইন শুরু হয়, তারও অংশীদার ছিল এই খেজুরি। কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার, কুঁকড়াহাটি হয়ে এই লাইন যেত খেজুরিতে। যদিও ১৮৬৪ সালে ডাকঘরটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছর প্রবল ঝড় ও বন্যায় খেজুরি বন্দরটি ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর থেকেই পোস্ট অফিসের জন্য ব্যবহৃত ঘরটি জঙ্গলে ভরে যায়। বর্তমানে খেজুরি গ্রামের বাজকুল রেঞ্জের খেজুরি বিট অফিসের আওতাধীন এলাকায় সুবৃহৎ ডাকঘরের ত্রিতল ভবনটির সিঁড়িঘরটুকুই বর্তমানে অবশিষ্ট রয়েছে। অথচ কয়েক দশক আগে পর্যন্ত লোহার ঘোরানো সিঁড়ি-সহ সুদৃশ্য ত্রিতল ভবন ও বারোটি কক্ষ বিশিষ্ট একটি ব্যারাক ছিল এখানে।
দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে সেই প্রাচীন অট্টালিকাটির বেশিরভাগ অংশই আজ ধূলিসাৎ হয়েছে। এখনও টিকে থাকা অবশিষ্ট অংশটুকুর সরকারি স্বীকৃতি মেলায় খুশি এলাকার মানুষ। ১৯৭৮ সাল থেকে সুদীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও হেরিটেজ তকমা জোটেনি ঐতিহাসিক এই নিদর্শনের কপালে। জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল সুধাংশুভূষণ ভট্টাচার্য খেজুরিতে পরিদর্শনে এসেছিলেন এক প্রতিনিধিদলকে নিয়ে। এরপর ১৯৯৯ সালে খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ পর্ষদ (বর্তমানে সমিতি) গঠিত হওয়ার পর বহুবার সরকারি বিভিন্ন স্তরে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আবেদন করা হয়। অভিযোগ, কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। পরে ২০১৬ সালে খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতি গড়ে ওঠার পর জেলা হেরিটেজ কমিটি ও রাজ্য হেরিটেজ কমিশন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায়।
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই অবশেষে খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির আবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২১ জুন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল খেজুরি ডাকঘরটি পরিদর্শনে আসে। সেখানে খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানিয়ে ডাকঘরটির প্রাচীনত্বের প্রমাণ হিসাবে কিছু প্রয়োজনীয় নথি তুলে দেওয়া হয়। সেইসব নথি পরীক্ষা করেই অবশেষে মিলেছে স্বীকৃতি। খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির সহ-সম্পাদক সুমন নারায়ণ বাকরা ও সুদর্শন সেন বলেন, “ভারতবর্ষের প্রথম ডাকঘরটিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চেষ্টা চলছিল। এবার সেই স্বীকৃতি আমরা অর্জন করতে পাড়ায় খেজুরিবাসী আজ খুশি। দ্রুত হেরিটেজ কমিশন বোর্ড লাগবে বলে জানতে পেরেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.