সুমিত বিশ্বাস: কলিং কয়রাবেড়া!
কটেজের জানলা খুলে দেখতে পেতে পারেন বুনো হাতির দল৷ কিংবা তাঁবু থেকে উঁকি দিলে দেখা যাবে হরিণ শাবকের ছুটে বেড়ানো৷ সেই সঙ্গে পাহাড়ি পথে ট্রেকিং৷ নীল জলরাশিতে বোটিং৷ পাহাড় ছুঁয়ে থাকা কটেজের বারান্দায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার৷ কপাল ভাল থাকলে কটেজে বা তাঁবুতে রাতে শুয়েই শোনা যাবে হায়নার ডাক৷
বেড়াতে গিয়ে এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চার যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা এবার কাছেই পেয়ে যাবেন এমন পর্যটনস্থল৷ অনেক টাকা খরচ করে ছুটতে হবে না আফ্রিকা কিংবা আমাজনের জঙ্গলে৷ এই রাজ্যেই মিলবে এই সুবিধা৷ পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির কয়রাবেড়াতেই গড়ে উঠেছে এমন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম স্পট৷
বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে কয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্টের দরজা খোলে৷ রাজ্য সরকার পিপিপি মডেলে প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অযোধ্যা পাহাড়ের এই সাইট সিয়িং স্পটকে একেবারে পৃথক অ্যাডভেঞ্চার টুরিজম স্পট হিসাবে তুলে ধরল৷ পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের থেকে কয়রাবেড়া জলাধারকে নিয়ে আমরা পৃথক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলেছি৷ পর্যটন দফতরের অর্থে আমরা সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলে বেসরকারি সংস্হার হাতে লিজ দিই৷” তারপর এই সংস্থা আরও পরিকাঠামো বাড়িয়ে একেবারে পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে কয়রাবেড়াকে তুলে ধরেছে এই সংস্থা৷
অতীতে এই এলাকা কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল৷ এই এলাকা তাদের যেমন করিডর ছিল তেমনই যৌথ বাহিনীও এই পথ দিয়ে অভিযানে যেত৷ রাজ্যে পালাবদলের পর এলাকার ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল৷ তাই এই ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট এলাকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের দরজাও খুলে দিয়েছে৷ এই বেসরকারি সংস্থা স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পর্যটকদের আতিথেয়তায় এই রিসর্টে নিয়োগ করেছে৷ রাজ্যের পর্যটন দফতরের ৭৬ লক্ষ টাকা অর্থে এই পরিকাঠামো গড়ে দেয় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন৷ ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রূয়ারি পুরুলিয়ার হুড়ার লধুড়কার প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চ থেকে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তারপর এই পরিকাঠামোকে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে এখন একেবারে পৃথক ট্যুরিস্ট স্পট কয়রাবেড়া৷ এই বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বলেন, “বলতে পারি এই পরিবেশ বান্ধব পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদেরকে আমরা অন্যরকম স্বাদ দেব৷”
সেই অ্যাডভেঞ্চারকে তুলে ধরতেই ইতিমধ্যেই এই সংস্থা www.ecoadventureresorts.net নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করেছে৷ কটেজের পাশাপাশি পাহাড়-জঙ্গল-জলাধারের মজা নিতে টেন্ট বা তাঁবুতে রাত্রিযাপনেরও ব্যবস্থা রয়েছে৷ পড়ুয়াদের জন্য অবশ্য কিছু ছাড় আছে৷ ট্রেকিং, বোটিং ছাড়াও কায়াকিং, ফিশিং, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যান্ডমিন্টন, সাইক্লিং রয়েছে৷ আগামী দিনে হর্স রাইডিং, প্যারাসেলিং, প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার এই টুরিস্ট স্পটে ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে এই সংস্থার৷
রিসর্টের ম্যানেজার কৌশিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “আমাদের এই টুরিস্ট স্পটে থাকা মানে একেবারে প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখা৷ পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ছৌ, সাঁওতালি নৃত্য, ঝুমুর গানেরও ব্যবস্থা আছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.