সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাকদণ্ডি বেয়ে পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছনোর মধ্যে যে আনন্দ আছে, তা বোধহয় আর কোনও সফরেই নেই। সেই পথ যদি হয় ঘন সবুজে ঘেরা আর পাখির কলকাকলিতে মুখর, তাহলে তো পথ চলার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের জন্য সেই আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোটে ট্রেকিংয়ের নতুন রাস্তা খুলে দিল রাজ্যের বনদপ্তর। সাড়ে সাত কিলোমিটার এই ট্রেকিং রুটের পোষাকি নাম ‘নেচার ট্রেল’। বৃহস্পতিবার রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই রুটের উদ্বোধন করে দিলেন। আশাপ্রকাশ করলেন, এই রুট পুরুলিয়ার পর্যটন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।
একদিকে প্রকৃতি। অন্যদিকে ইতিহাস। এই দুয়ের মেলবন্ধনেই গড়পঞ্চকোটের পাহাড়–জঙ্গলে খুলে গিয়ছে ট্রেকিংয়ের নতুন এই রুট। পাশাপাশি, এই দুর্গম পথে পর্বতারোহণে সাহায্য করার জন্য ইকো গাইড সেন্টারও খোলা হয়েছে। পাহাড়ি পথে ট্রেকিংয়ে আপনার সঙ্গী হবে জীবন্ত ইতিহাস। ট্রেকিং রুটে থাকা বনদপ্তরের গাইডরা পথ চলতে চলতেই শোনাবেন একসময় এই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে থাকা পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের ইতিকথা। শান্ত, ঘন সবুজ, দুর্গম জঙ্গলের ২১০০ ফুট উঁচু চূড়ায় উঠতে ইতিহাসের ছোঁয়ায় পাহাড়ে ওঠার পথ আরও রোমাঞ্চময় হয়ে উঠবে বলে মনে করছে বনদপ্তর।
এই ইকো গাইড সেন্টার তৈরি হয়েছে জাইকা প্রকল্পের অর্থে। সেখানে পর্বতারোহী ও পর্যটকরা পাহাড়ে ওঠার আগে ব্যাগ ও সঙ্গে থাকা নানা সামগ্রী রাখতে পারবেন। পাহাড় চূড়ায় তৈরি হয়েছে গোলাকৃতি ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে এই পাহাড়ের ১৮ বর্গ কিমি. এলাকা দেখতে পাওয়া যাবে। সেই ভিউ পয়েন্টের নাম দেওয়া হয়েছে – গোলঘর। স্থানীয় চার যুবককেই প্রশিক্ষণ দিয়ে গাইড হিসাবে নিযুক্ত করা হবে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর।
বছর তিনেক আগে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোটকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এই পাহাড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। এই পাহাড়ের এক প্রান্তে হদহদি থেকে চূড়ায় ওঠা যায়। কিন্তু সংরক্ষিত হওয়ার পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রঘুনাথপুর বনাঞ্চলের আধিকারিক বিবেক ওঝা বলেন,
“এই পাহাড়ে উঠতে গেলে আমাদের অনুমতি নিয়ে এই নতুন রুট দিয়ে উঠতে হবে। সেই কারণেই এই নতুন ট্রেকিং রুট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এই ট্রেকিং রুট গড়পঞ্চকোটের পর্যটনেরও প্রসার ঘটাবে।”
এই নয়া ট্রেকিং রুট অপরূপ রূপে পরিপূর্ণ। যেন এক কল্পলোকের জগৎ। যেখানে সহজেই প্রকৃতির নিঃশব্দ অতল অনুভূতির মাঝে ডুব দেওয়া যায়। অনায়াসেই হারিয়ে যাওয়া যায় অরণ্যের নিস্তব্ধতায়। কানে বাজে বাতাসের মৃদু সংগীত। আবার এই স্তব্ধতার গান শুনতে শুনতেই হয়ত সামনে চলে আসে হায়না, শেয়াল, বুনো খরগোশ, বুনো শূকর। দেখা মিলতে পারে গন্ধগোকুল, প্যাঙ্গোলিন, সজারু, এমনকি লম্বাচওড়া অজগরেরও। এছাড়া রয়েছে নানা বনৌষধি, গুল্ম জাতীয় গাছ। সাড়ে সাত কিলোমিটার পথের পায়ে পায়ে যেন রোমাঞ্চের ছোয়া। রঘুনাথপুর বনাঞ্চলের নিতুড়িয়া বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাসের কথায়, “এই পাহাড়ি পথে উঠতে সময় লাগবে প্রায় পাঁচ ঘন্টা। তবে এই পাহাড়ি পথে ওঠার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে।” তাই ট্রেকিং রুট শুরুর পথেই কী করবেন, আর কী করবেন না – তা রীতিমত বোর্ড টাঙিয়ে গাইডলাইন লিখে দিয়েছে বনদপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.