চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ভরা বসন্তে যেন সন্ন্যাস নিয়েছিল এ রাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটন স্থল মাইথন। নেপথ্যে দীর্ঘ লকডাউন। আগুন রাঙা পলাশ আর শিমূলের সাজে এবার আর মাইথন দেখা হয়নি পর্যটকদের। প্রকৃতির অপরূপ থেকে এবারের মত বঞ্চিত পর্যটকরা। কারণ করোনা আতঙ্ক।
তবে সেই শূন্য দিন বিগত। আসছে বর্ষা আর শরতের হাতছানি। বিষাদ কী কাটবে নীলদগন্ত জলরাশির? সঙ্গীহীন সবুজ পাহাড় ভরে উঠবে কলরবে? ‘আনলক ওয়ান’ পর্বে সেই আশাতেই বুক বাঁধছিলেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার, ‘আনলক ওয়ান’এর দ্বিতীয় ধাপে খুলল পর্যটনকেন্দ্র মাইথন। কল্যানেশ্বরী মন্দিরের দরজা খুলতেই জীবন কল্যাণের প্রার্থনায় পুজো দিলেন ব্যবসায়ীরাও।
বছরে আট মাস লেগেই থাকে ভিড়। ঘরের কাছে আরশিনগর মাইথন। প্রাকৃতিক সরোবর-জঙ্গলের রহস্য, সবুজ পাহাড়ের গাম্ভীর্য। প্রকৃতির ডালা সাজানো থরে থরে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ বসন্তের পসরা – পলাশ আর শিমুলের ঢল, দোল উত্সব। এপ্রিল থেকে জুন, গরমের ছুটিতে বেড়ানো। অক্টোবরে পুজোর ছুটিতে পর্যটকের ঢল। নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে পিকনিক, শীতকালীন ছুটি।
কিন্তু এবছর লকডাউনে মাইথনের পর্যটন চিত্র বদলেছে অনেকটাই। দোকান খোলা, ক্রেতা নেই। সার সার নৌকা দাঁড়িয়ে ঘাটে। নৌকা, স্পিডবোট, সাইকেল বোট। সওয়ারি নেই। কর্মহীন একশো মাঝিমাল্লা। খাঁ খাঁ করছে গোটা ৫০ হোটেল। এখন বর্ষা আর পুজোর মরশুমের দিকে চোখ সকলের।
স্থানীয়দের দাবি, পুরোপুরি লকডাউনে থাকার ফলে মাইথনের মাটিতে অনেকদিন মানুষের পা পড়েনি। সবুজে দাগ পড়েনি দৌরাত্ম্যের। ফলে রূপ খুলেছে মাইথনের। সৌন্দর্যের মাঝে এই ভয়ঙ্কর রূপটিও দেখতে পাচ্ছেন না প্রকৃতিপ্রেমীরা। সকলে আশা করে আছেন, কবে শোনা যাবে মাইথনের জলে ছলাৎছল দাঁড় বাওয়ার শব্দ। কবে কোলাহল মুখর হবে মাইথন। সেই প্রস্তুতিই সোমবার থেকে শুরু করে দিল মাইথনের হোটেলগুলি। পিপিই পরে সাফাইকর্মীরা গোটা হোটেল জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু করলেন। ফেরিঘাট থেকে বাঁধনমুক্ত হল নৌকাগুলো। জলপথে দাঁড় বেয়ে মাঝি নিজেই চললেন কিছুটা দূর। এখন শুধু পর্যটক আনাগোনার অপেক্ষা। তাহলেই ফের আপন ছন্দে ফিরতে পারবেন মাইথন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.