বিশ্বজ্যোতি দাস, শিলিগুড়ি: তুষারপাতের হাতছানি মিলতেই পাহাড়ে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। এদিকে হোটেলগুলোতে ঠাঁই নেই দশা। এই সুযোগেই বরাত ফিরেছে হোমস্টে (Homestay) গুলির। শুধু পাহাড়ে নয়, সমতলের হোমস্টে গুলিতেও এখন থিকথিকে ভিড়।
বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের (North Bengal) পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার হোমস্টে গড়ে উঠেছে। সেসবের মধ্যে সাড়ে পাঁচশোটি রাজ্য সরকার অনুমোদিত। বাকি হোমস্টে মালিকরা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। সম্প্রতি চা বাগানেও হোমস্টে গড়ে উঠেছে। জলপাইগুড়ির পাঙ্গা বটতলায় নিজের চা বাগানে তেমনই হোমস্টে গড়েছেন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী।
নতুন এই হোমস্টেতে ২০ জন পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এটি আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো ভরতি। বিজয়গোপালবাবু বলেন, “ডিসেম্বর থেকেই ভিড়। বাইরের প্রচুর পর্যটক আসছেন। ওদের মনোরঞ্জনের সব ব্যবস্থাই থাকছে।” একই ছবি বক্সা পাহাড়ের সদর বাজারের ইন্দ্রবাহাদুর থাপার হোমস্টের। ইন্দ্রবাবু বলেন, “এবার দারুণ সাড়া পেয়েছি। নিরুপায় হয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। দশজনের বেশি রাখতে পারছি না।”
কার্শিয়াংয়ের হোমস্টে মালিক সুরজ থাপা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় হোমস্টে-র ছবি-সহ নম্বর দিয়েছেন। এরপর থেকে দিনে থাকার জায়গা চেয়ে গড়ে দশটি ফোন আসছে। কিন্তু ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত উপায় নেই। পাহাড় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি দীপক প্রধান বলেন, “দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে হোমস্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার। এবার প্রত্যেকে রোজগারের সুযোগ পেয়েছে। প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটেছে। ওই কারণে স্থানীয় যুবকদের আত্মনির্ভর হতে হোমস্টে খোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
কেন এমন সুযোগ আসবে না? দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং পাহাড়ে সাড়ে তিনশো হোটেল রয়েছে। কালিম্পংয়ে দু’শো। পঞ্চাশজনের বেশি পর্যটক থাকতে পারেন দুই জেলায় এমন হোটেল রয়েছে ১১২টি। ৩ স্টার টাইপের বিলাসবহুল হোটেল সংখ্যা ২৫টি। বড়-মাঝারি হোটেলে প্রায় ৭৫ হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও কিছুটা সস্তার মধ্যবিত্তদের পছন্দের ছোট হোটেল যেখানে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক থাকতে পারবেন।
১২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি হোটেল বুক হয়ে রয়েছে। তাই এখন পর্যটকদের ভরসা পাহাড়-সমতলের হোমস্টে। মিরিকের বাসিন্দা জিপ চালক গোপাল লামা জানান, তুষারপাতের সম্ভাবনা বাড়তে পর্যটকরা ভিড় করতে শুরু করেছে। তুষারপাত শুরু হলে হোমস্টেগুলোতেও থাকার জায়গা মিলবে না। কেন এমনটা আশা করবেন না? গত বছরের স্মৃতি যে টাটকা এখনও। তুষারপাত হয়েছিল বর্ষশেষের প্রাক্কালে। সেটাও প্রায় এক দশক পরে।
দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় খান্না বলেন, “এরপর কয়েকদিনে অন্তত ২ লক্ষ পর্যটকের ভিড় হয়েছিল। এবারও পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে। প্রতিটি বড় হোটেলে রুম বেড়েছে। তবু জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” ট্যুর অপারেটর সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বরের শেষ থেকে পাহাড়ে হোটেলের পাশাপাশি হোমস্টের রুম বুকিং শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমনই যে দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ির হোমস্টে মালিক মদন সার্কি বলেন, “আগাম রুম বুক না করে জানুয়ারিতে পাহাড়ে এলে সমস্যায় পড়তে হবে।” তিনি জানান, পাহাড় এখন শান্ত। প্রত্যেকে উৎসবের মেজাজে আছে। এরমধ্যে তুষারপাত হলে ‘সোনায় সোহাগা’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.