মানসী দাস মণ্ডল: গরমের জেরে প্রাণ একেবারে ওষ্ঠাগত। তাতে প্রাণের আর দোষ কী বলুন? যে হারে গরম পড়ছে তাতে প্রাণপাত হওয়াই হক কথা। নিয়মমাফিক নিম বেগুন ভাজা ও লেবু শরবত সেবনে খানিকটা শারীরিক দিক থেকে গরমের মোকাবিলা করলেও, মন কিন্তু বলে অন্য কথা। আর সে মন যদি হয় বাঙালির? তাহলে তো কথাই নেই। গরমকে চোখ রাঙিয়ে, কয়েকদিনের জন্য পাহাড়ে বেড়িয়ে আসা বাঙালির কাছে নতুন কিছু নয়। তবে নতুন তিনটি জায়গার হদিশ থাকল। যা এই গরমে আপনার গন্তব্য হতেই পারে।
ঝান্ডি: ডুয়ার্সের প্রায় ৬২০০ ফুট উচ্চতায় একটি অফবিট স্পট ঝান্ডি। এখান থেকে লাভার দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। মহানন্দার উপত্যকা আর মহৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা একসঙ্গে মন ভোলাবে আপনার। রয়েছে অসংখ্য শাল ও পাইন গাছের সারি। সানরাইজ সানসেট পয়েন্ট রয়েছে এখানেও। হিমালয়ের কোল থেকে যখন সূর্যের ছটা পড়ে মহানন্দার তীরে, তখন তাকে স্বপ্নের দেশ বললে কমই বলা হয়। এছাড়া সামাবেয়ং অর্গানিক টি গার্ডেনে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে, সিপ নিতে পারেন হট অ্যারোমেটিক চায়ের। আবার গরুমারা, চাপড়ামারি জঙ্গল অভিযান-এর মাধ্যমে এশিয়াটিক রাইনো ও বন্য হাতি দেখে নিতে পারেন। ডালিম ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ, লাভা বুদ্ধিস্ট মনাস্ট্রি ঝান্ডির উল্লেখযোগ্য স্পট। টুরিস্ট লজ, হোম স্টে ছাড়াও থাকার জন্য পাবেন ইকো হাট। বর্ষা এবং শীতই ঝান্ডি এক্সপ্লোর করার জন্য উপযুক্ত সময়।
লেপচাখা ভিলেজ: ইন্দো-ভুটান সীমান্তে দ্রুকপা এর আর একটি নাম। যেটা বক্সার টাইগার রিজার্ভ-এর খুব কাছে। অফবিট ডেস্টিনেশনের মধ্যে আরও একটি নতুন সংযোজন লেপচাখা ভিলেজ। এখান থেকে ভুটানের দূরত্ব প্রায় ২-৩ কিলোমিটার। এর ড্রামাটিক বিউটির জন্য একে ‘কুইন অফ বিউটি’ বলা হয়। ডুয়ার্সের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বারোটি নদীর সৃষ্ট উপত্যকাকে একসঙ্গে দেখার সুযোগ যদি কোথাও পান, তবে সে লেপচাখা ভিলেজ। এখানকার স্থানীয় মানুষরা জন্মসূত্রে ভুটানি হলেও, নেপালি সংস্কৃতির প্রভাবই এখানে বেশি। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হিল টপ- যেখান থেকে বক্সা ন্যাশনাল পার্ক, সঙ্গে বয়ে যাওয়া নদীর ছবি, যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি। পাহাড়ি গাছ ও পাহাড়ি পাখি এবং অসংখ্য প্রজাপতির আনাগোনায় আছে এক সম্মোহন মন্ত্র।
প্যারেন: শিলিগুড়ি থেকে একশো বারো কিলোমিটার দূরে ভারত-ভুটান বর্ডারে ছবির মতো একটি জায়গা প্যারেন হোক আপনার ড্রিম ডেস্টিনেশন। পাহাড়ের ঢালে ঢালে অসংখ্য গাছ, এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া নদী, সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া প্যারেন আপনার অপেক্ষায়। প্রকৃতি একে সাজাতে কার্পণ্য করেনি মোটেও। এখান থেকে দশ থেকে পনেরো কিলোমিটারের মধ্যেই আছে সাইট সিনে বেশ কিছু স্পট। মাত্র দশ কিলোমিটার দূরত্বে জলঢাকা নদী এবং ভারত-ভুটান সীমান্তে হাইডেল পাওয়ার স্টেশন দেখার সুযোগ পেয়ে যাবেন। এমনকী দামের উপর থেকে ভুটানের পর্বতসারি দেখার ইচ্ছেও মিটিয়ে নিতে পারেন। আবার প্যারেন থেকে মাত্র চোদ্দো কিলোমিটার দূরে কার্ডামম কিউরিং সেন্টারে ঢুঁ মেরে দেখে নিন এলাচ তৈরির পদ্ধতি। এই পথেই পাবেন গৌরীবাস ডায়াস্কোরিয়া প্লান্টেশন নার্সারি, যেখানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ঔষধি গাছের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেকিংয়ের শখ মেটানোর সুযোগ রয়েছে। থাকার জন্য হোম স্টে, হোটেল থেকে শুরু করে রিসর্ট পেয়ে যাবেন। শুধু বর্ষাকাল ছাড়া যেকোনও সময়ই প্যারেন বেশ উপভোগ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.