সুমিত বিশ্বাস ও সুনীপা চক্রবর্তী: হোটেল বন্ধ রাখলে বরং রোজকার খরচ বেঁচে যায়। জঙ্গলমহল পর্যটনের এটাই বুঝি এই গরমের থিম সঙ। করোনা মন্দার কোপের পর দাবদাহের কোপ। জঙ্গলমহলের (Junglemahal) পর্যটনে খরা। হোটেল, লজ, কটেজ, রিসর্ট, সরকারি অতিথি আবাস কার্যত জনশূন্য। বলা যায় মাছি তাড়ানোর অবস্থা। নতুন করে বুকিং? পুরনো বুকিং বাতিলের হিড়িক। উইক এন্ডেও যে সব রিসর্ট পর্যটকের মুখ দেখত সেখানেও সবই শূন্য। প্রখর গ্রীষ্মে জঙ্গলমহলে সেভাবে পর্যটকরা আসেন না। এখন অফ সিজন। কিন্তু করোনার সময় লকডাউন বাদ দিয়ে সাম্প্রতিককালে জঙ্গলমহলের এই তিন জেলায় পর্যটকদের আসা-যাওয়া ছিল। বিশেষ করে পুরুলিয়ায় প্রখর গ্রীষ্মেও পর্যটকরা পা রাখতেন। কারণ বিকালের পর অযোধ্যা পাহাড় ও গড় পঞ্চকোটে আবহাওয়ার বদল ঘটে। ফলে দিনের বেলা পর্যটকরা এসিতে ঘরবন্দি থাকলেও বিকেলের পর থেকে বাইরে বের হয়ে প্রকৃতিতে ডুবে মেতে উঠতেন। কিন্তু এবার এপ্রিলের গোড়া থেকেই এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২-এ ঘোরাফেরা করায় এই জেলাগুলিতে পর্যটকরা আর সেভাবে আসতে চাইছেন না। ফলে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গাড়ি ব্যবসাতেও জঙ্গলমহলের এই তিন জেলায় মন্দার কোপ। গড় পঞ্চকোট টুরিজম প্রোজেক্টের একটি রিসর্ট-এর কর্ণধার সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গরমে আমাদের হোটেল ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা বেহাল। বুকিং বাতিল হয়েই চলেছে।” গড় পঞ্চকোট ইকো টুরিজমের অপারেশন ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো বলেন, “আমাদের দুটো রিসর্টেই পর্যটকরা নেই। এখন বিয়ে বাড়ি ভরসা। অযোধ্যা পাহাড়, বড়ন্তি, জয়চণ্ডী পাহাড়েও একই অবস্থা। দুয়ারসিনি, দোলাডাঙা খাঁ খাঁ। অযোধ্যা পাহাড়ে সরকারি পর্যটন প্রকল্পের লিজ রয়েছে কুশল ভারত গ্রুপের। ওই গ্রুপের কর্ণধার রাহুল আগরওয়াল বলেন, “অন্যান্য বছর গ্রীষ্মে যে পরিমাণ পর্যটক থাকে এবার তা নেই। অনেক রুম খালি পড়ে আছে।”
দক্ষিণ বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরের ছবিটা আরও খারাপ। অধিকাংশ হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ। হাতে গোনা দু’একটি হোটেল। বিভিন্ন হস্তশিল্পের দোকান কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে। কংসাবতী জলাধারে গুটিকয়েক নৌকা থাকলেও পর্যটক নেই। মুকুটমণিপুরের জিরো পয়েন্ট, পরেশনাথ মন্দির, বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কে বন্ধের চেহারা। মুকুটমণিপুর হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ সাহু বলেন, “এখন অফ সিজন ঠিকই । কিন্তু গ্রীষ্মে এতটা খারাপ পরিস্থিতি সাম্প্রতিককালে হয়নি।”
ঝাড়গ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবার ৪২-৪৩ ডিগ্রিতে ঘুরছে। তবে নববর্ষেও ঝাড়গ্রামের হোটেল, লজ, রিসর্ট, হোম স্টেগুলিতে প্রায় তিন থেকে চার হাজার পর্যটক এসেছিলেন। কয়েকদিনে ছবিটা একেবারে বদলে গেল। শনি-রবিবার উইকেন্ডে কিছু পর্যটককে দেখতে পাওয়া গেলেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলি একেবারে জনশূন্য। বর্তমানে ঝাড়গ্রামে সরকারি অতিথি আবাস, বেসরকারি হোটেল, লজ, রিসর্ট, হোম স্টে মিলিয়ে পর্যটক আবাসের সংখ্যা প্রায় ৭০টি। এর মধ্যে হোম স্টে রয়েছে ২৫টি। পর্যটকদের একেবারেই দেখা নেই। ঝাড়গ্রামের হোম স্টের কর্ণধার শুভাশিষ দেবসিংহ বলেন, “অতীতে গ্রীষ্মে যে পরিমাণ পর্যটক থাকে এবার তার চেয়ে ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। শুধুমাত্র উইকেন্ডে বুকিং হচ্ছে ।” সবে মিলিয়ে হোটেল, লজ মালিকরাই শুধু নন। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গাইডরাও সমস্যায় পড়েছেন। অযোধ্যা পাহাড়ের গাইড বেনু সেন বলেন, “কোভিডের সময়টুকু বাদ দিলে সাম্প্রতিককালে গ্রীষ্মেও অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটক আসতেন। কিন্তু এবার এই ছবিটা একেবারে উধাও।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.