নবনীতা: পথেই দেখা যাবে গোছা গোছা ফুলঝাড়ু পিঠে নিয়ে হেঁটে চলেছেন খাসিয়া রমণীরা৷ কোথাও একটুকরো কাগজও পড়ে থাকতে দেখা যাবে না৷ আর রাস্তায় একটুকরো কাগজ পড়ে থাকতে দেখলেই তা শঙ্কু আকৃতির ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন৷ গ্রামকে কোনওভাবেই অপরিচ্ছন্ন হতে দেন না এই খাসিয়া উপজাতিরা৷ মওলিননং এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রামের শিরোপা পেয়েছে৷ ২০০৬ সালেই জুটেছে এই তকমা৷ স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনলাম মওলিন নং নামটার মধ্যেই লুকিয়ে আছেন ভগবান৷ মওলিননং শব্দটি এসেছে ‘মেওলিনকেউ’ থেকে৷ ‘মও’ মানে পাথর আর ‘লিনকেউ’-এর অর্থ ভগবান৷ ২০১৫-র আদমসুমারি অনুযায়ী ৫০০ জনের বাস এখানে৷ মওলিননং-এ প্রবেশের মুখেই রয়েছে বাঁশের তৈরি তোরণ৷ তোরণের কাছেই শতাব্দী প্রাচীন ‘ব্যালাং প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ’৷ মওলিননং হোস্ট হাউসে না থাকলে এই জায়গার রোমাঞ্চ অনুভব করা দায়৷ গাছবাড়িতে থাকলে তো আর কথাই নেই৷ বেত আর বাঁশের কারিকুরিতে তৈরি এর দেওয়াল৷ উপরে খড়ের ছাউনি৷ লম্বা খুঁটি দিয়ে গাছের উপর ঝুলছে বাড়িটি৷ এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতে হলে বাঁশের সেতু বেয়ে যেতে হবে৷
আছে চার্চ অফ এপিফ্যানি, স্কাই ভিউ পয়েণ্ট, মেঘালয়ের ওয়াটার অ্যান্ড সয়েল কনজার্ভেশন৷ বাংলাদেশের ল্যান্ডস্কেপ দেখার জন্য স্কাই ভিউ পয়েণ্টের বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে গাছের ডাল আর গাছের গুঁড়ির উপর দিয়ে যেতে হবে দোতলা বা তিনতলার মাচানে৷ মওলিননং-এ গেলে তার ঠিক পাশের গ্রাম নাহোয়েট-এর প্রধান আকর্ষণ লিভিং রুট ব্রিজ না দেখে ফেরা মানে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু না৷ বলা ভাল, এর জন্যই সকলে মওলিননং-এ পাড়ি দেয়৷
বিশাল আকারের কয়েকটা গাছের শিকড় আর ডালপালা মিলেমিশে এক অদ্ভুত বুনট তৈরি হয়েছে যার নাম জীবন্ত সেতু৷ প্রকৃতির লীলাখেলা একেই বলে৷ সেতুর উপরে-নিচে ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় মাপের পাথর৷ চারদিকে সবুজ ঘন জঙ্গল৷ নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি খরস্রোতা থাইলং নদী৷
প্রসঙ্গত, মেঘালয়ের প্রাচীন খাসি উপজাতির মানুষদের চোখে প্রথম পড়ে ফাইকাস ইলেকটাস নামে এক প্রজাতির রবার গাছ৷ খাসি এবং জয়ন্তী পাহাড়ের দক্ষিণের বনজঙ্গলে জন্মানো এই গাছের মূল শিকড় মাটির নিচে থাকলেও পরে শিকড়গুলো আড়াআড়িভাবে মাটির উপর বেড়ে ওঠে৷ আর এই শিকড়েই রয়েছে জীবন্ত সেতুর প্রযুক্তির ইতিহাস৷ এখানকার মানুষেরা সুপারি গাছের কাণ্ড ফাঁপা করে কেটে দেন৷ তার ভিতর জীবন্ত রবার কাছের শিকড় ঢোকানো হয়৷ এরপর তারা নিজের ছন্দে বেড়ে চলে৷ শিকড় নদী পেরিয়ে গেলে ফাঁপা সুপারি গাছ কেটে ফেলা হয়৷ রবারের শিকড় সহজেই মাটিতে ঢুকে যায়৷ সেতুর ভিতও শক্ত হয়৷ এমন একখানা প্রাকৃতিক ঝুলন্ত সেতু তৈরি হতে সময় নেয় প্রায় ১৫ বছর৷ দৈর্ঘ্য ৫০ মিটারের বেশিও হয় অনেক সময়৷ একসঙ্গে ৫০-৬০ জন চলতে পারে এই সেতুপথে৷ প্রকৃতি আর স্থানীয় মানুষের কারিকুরিতে জীবন্ত সেতু অন্যতম দর্শনীয় স্থান মওলিননংয়ের৷
কোথায় থাকবেন
মওলিননং গেস্টহাউস কিংবা গাছবাড়িতে থাকা যায়৷
কী ভাবে যাবেন—
হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেস বা সরাইঘাট এক্সপ্রেসে গুয়াহাটি৷ সেখান থেকে গাড়িতে সোজা মওলিননং৷ গাড়িভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে৷ গুয়াহাটি থেকে মওলিননংয়ের দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.