সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেউ পুজোয় পাড়ায়, কেউ ট্রেনে ভ্রমণপথে। শারদোৎসবে ছুটির মেজাজে থাকল অভয়রাণ্যে ছুটির গল্প। লিখছেন প্রসূন চক্রবর্তী৷
জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা অভয়ারণ্য ডুয়ার্সের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই বন আয়তনে বেশ ছোট। তার বেশিরভাগ এলাকাটাই আবার মূর্তি, জলঢাকা, ইংডং ও গরাতি নদী দ্বারা প্লাবিত নিম্নভূমি। এই সীমিত পরিসরের মধ্যেও তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর বিপুল সম্ভার গরুমারার অহঙ্কার। উপরন্তু বিশ্বে লুপ্তপ্রায় প্রাণী একশৃঙ্গ গন্ডারের এটাই অন্যতম নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থল। সর্বশেষ গন্ডার-শুমার থেকে জানা গিয়েছে, তাদের সংখ্যা ১৪। এছাড়াও আছে হাতি, তিন শতাধিক গৌর, হগ ডিয়ার, সম্বর, বার্কিং ডিয়ার, চিতল, বন্য শূকর, চিতা, সিভেট, বাঁদর, বেজি, মালয়ান জায়েন্ট স্কুইরেল ইত্যাদি। গাছে গাছে সংসার গুছিয়ে বসেছে হরেক প্রজাতির পাখি। এদের মধে্য উল্লেখযোগ্য হল ধনেশ, হরিয়াল ইত্যাদি। শীতকালে আসে পরিযায়ী পাখির দল। যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায় ময়ূর আর বনমুরগি।
[টয়ট্রেনের হেরিটেজ তকমা ধরে রাখতে রেলের গড়িমসি, ক্ষুব্ধ পর্যটন মহল]
আরণ্যক: ১৯৪৯-তে গরুমারা প্রথম অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল। তবে সরকারিভাবে অভয়ারণ্যের মর্যাদা পেয়েছে ১৯৭৬-এ। প্রথম যুগে আয়তন ছিল মাত্র ৮ বর্গ কিমি। বর্তমানে আয়তন বেড়ে হয়েছে ৭৯ বর্গ কিমি। প্রাণী বৈচিত্রের মতো বৃক্ষ বৈচিত্রেও গরুমারা মৌলিকত্ব দাবি করতে পারে। একদিকে যেমন আছে হাতির বাসোপযোগী বড় বড় গাছের অরণ্য, তেমনই অন্যদিকে গন্ডারের বিচরণক্ষেত্র বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। বনভূমির অপেক্ষাকৃত উচ্চাংশে শালের সঙ্গে চিলৌনি, বহেড়া, ওদাল, জিওর, কাটুস, চিকরাশি, লালি, সিধা ইত্যাদি বৃক্ষ চোখে পড়ে। নদীবিধৌত নিম্নভূমিতে গড়ে উঠেছে নদীভিত্তিক অরণ্য, তার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে শিমূল, শিরীষ আর খয়ের গাছের রাজত্ব। বাকি অংশে নলখাগড়া আর উলুঘাস৷ বনভূমির বুক চিরে বয়ে গিয়েছে মূর্তি, গরাতি, ইংডং ইত্যাদি নদী।
সঙ্গী গাইড: গরুমারা অরণ্যে বন্যজন্তু পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে কয়েকটা ওয়াচ টাওয়ার ও ভিউপয়েন্ট। গরুমারা দর্শনের জন্য জিপ ভাড়া করতে হবে নিকটবর্তী বড় জনপদ চালসা বা লাটাগুড়ি থেকে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে অবস্থিত জায়গা দু’টি থেকে অরণে্যর মধ্যস্থল মোটামুটিভাবে ১২ কিমির মধ্যে। বনে বেড়ানোর জন্য গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। রেলপথে সরাসরি মালবাজার পৌঁছে গরুমারা দর্শন করাই সব থেকে ভাল। গরুমারা দর্শনের অনুমতি ও গাইড নিতে হয় লাটাগুড়ি প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র থেকে। এটি একটি সংগ্রহশালাও বটে। বনবিভাগ পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে এই অরণ্য ও তার বাসিন্দাদের সাধারণ পরিচয়মূলক একটি প্রদর্শনী। ভোর ছ’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সংগ্রহশালা খোলা থাকে। মাঝখানে বেলা দশটায় এক ঘণ্টা বন্ধ। বৃহস্পতিবার এটি এবং বনবিভাগের অফিস বন্ধ থাকে। অফিসটি থেকে অরণ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় দিনে চারবার। আর একটা কথা মনে রাখবেন, গরুমারা জাতীয় উদ্যান ১৬ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
বনভ্রমণের পথে: বনভ্রমণে বেরিয়ে প্রথমেই যাওয়া যায় যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ারে। এখান থেকে দেখা যায় খাদের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইংডং নদীর অপূর্ব দৃশ্য। ভোরবেলা কিংবা সন্ধের ঠিক আগে সেখানে বন্যপ্রাণীদের চরে বেড়াতে দেখা যায়। এই টাওয়ারের এক কিমির মধ্যে গরুমারা বনবাংলো। উত্তরমুখী দোতলা বাংলোটি সুদৃশ্য। উত্তরমুখী বাংলোর সামনে লন। তার একাংশে সযত্নে রচিত ফুলবাগান। বাংলো-চত্বরের শেষপ্রান্তে রাইনো পয়েন্ট। খাদের উপরে নাতিউচ্চ বেদির উপরে ছাউনিটা যেন ঝুলে রয়েছে। নিচে বহু দূর পর্যন্ত বনভূমি, খানিক দূরে মূর্তি নদী, দিগন্তের কাছাকাছি বালাসন। আর সামনেই ইংডং নদীর এক মনোরম বাঁক। নদী না বলে নালা বলাই ভাল। ইংডংয়ের ওপারে নুনের ঢিপি। রোজ বিকেল
থেকেই সেখানে নুন চাটতে ভিড় জমায় বন্যপ্রাণীর দল। এর পাশেই বৈদ্যুতিক তারের বেড়া দেওয়া ঘাসজমি। মেঘহীন নীলাকাশের দিনে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ পূর্ব হিমালয়ের নামজাদা সব তুষারশৃঙ্গ পরিষ্কার দেখা যায়।
[পুজোয় প্রকৃতির মাঝে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে চান? চলে আসুন গড়পঞ্চকোট]
মূর্তি পার: মূর্তি নদী পার হয়ে গরুমারা অরণ্যের আরও গভীরে প্রবেশ করা যায়। তার জন্য বনবিভাগের বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। সেখানে গরাতি নদীর ধারে গরাতি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে রাত্রিযাপন জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা। গরাতি হল একশৃঙ্গ গন্ডারের খাসতালুক। দিনের বেলাতেও তারা নির্ভয়ে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। জিপে টাওয়ারের নিচ পর্যন্ত চলে আসা যায় মূর্তি নদী পার হয়ে।
কীভাবে যাবেন: শিলিগুড়ির পি সি মিত্তাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মালবাজার, চালসা হয়ে লাটাগুড়ি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিমি। জলপাইগুড়ি থেকে চালসা, মালবাজারগামী বাসও লাটাগুড়ির উপর দিয়ে যায় এবং মালবাজারে স্টেশন থেকে সরাসরি গাড়ি পাবেন।
কোথায় থাকবেন: গরুমারায় থাকার ব্যবস্থা এখন প্রচুর রয়েছে। লাটাগুড়িতে নানা মানের হোটেল এবং রিসর্ট আছে। বনবাংলোর জন্য খোঁজ করতে পারেন : ডিএফও, জলপাইগুড়ি, (০৩৫৬১) ২২৪৯০৭।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.