রেশমী প্রামাণিক: জমিতে ফসল বুনে বুক দুরুদুরু৷ ঘরে তোলা যাবে তো৷ এলাকায় জলের যে বড় অভাব৷ রুদ্র প্রকৃতির তেজ রুখে বাঁচানো যাবে জমির সন্তানদের? ভাবতেন চাষিরা৷ খরাপ্রবণ এলাকার চাষিদের যে ভাবনা ভাবতেই হয়৷ তখনই ভাবনাটা মাথায় আসে সুরেন্দ্রনাথ মণ্ডলের৷ দেবীলক্ষ্মীর পুজো করলে কেমন হয়? লক্ষ্মীকে তুষ্ট করতে পারলেই ঘরে লক্ষ্মী আসায় বাধা থাকবে না৷ সুরেন্দ্রনাথ বাড়িতে শুরু করলেন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো৷ সে আজ থেকে ১৫৪ বছর আগের ঘটনা৷
মণ্ডলরাই সর্বজনীন
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুর ব্লকের হাড়দা গ্রাম৷ সেই গ্রামের মণ্ডলদের পারিবারিক পুজোই এখন গ্রামের সকলের পুজো৷ এমনকী আশপাশের গ্রামও মাতে পুজোর আনন্দে৷ পুজোর সমস্ত খরচ বহন করেন মণ্ডলরাই৷ এই পুজোকে কেন্দ্র করে আগে এক মাস ধরে মেলা বসত৷ এখন তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দিনে৷
মধ্যমণি নারায়ণ
পুজো প্রচলনের কাহিনিতে হাড়দা লক্ষ্মী যেমন একটু অন্যরকম, তেমনই প্রতিমাতেও৷ চিরাচরিত লক্ষ্মী প্রতিমার থেকে এখানকার প্রতিমার আদল খানিক আলাদা৷ একচালার কাঠামোয় মধ্যমণি নারায়ণ৷ আর দুই দিকে দুই বোন– লক্ষ্মী এবং সরস্বতী৷ প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিত৷ আগে প্যান্ডেল বেঁধে পুজো করা হত৷ এখন স্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হয়েছে৷ আতসবাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় পুজোর৷ বেশ রাতেই গ্রামের সবচেয়ে বড় জলাশায় (প্রায় ১৩০ বিঘা) থেকে ঘট ডুবিয়ে আনা হয়৷ পুজোর পর্ব চলে ভোররাত পর্যন্ত৷
আকর্ষণ অমৃতি
পুজোর প্রসাদে আছে বিশেষত্ব৷ দেবীকে দেওয়া হয় বিশেষ একপ্রকার লাড্ডু৷ প্রসাদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য থাকে৷ দেবীর নৈবেদ্যে কোনও কাটা ফল চলে না৷ সব ফল গোটা দিতে হয়৷ দেওঘরের যেমন প্যাঁড়া, বারাণসীর যেমন রাবড়ি, তেমনই এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ অমৃতি৷ পুজোর প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগেই এই অমৃতির দোকান নিলাম হয়ে যায়৷ দোকানের দর ওঠে ৬৫০০০ টাকা পর্যন্ত৷ মেলায় অমৃতির দোকান কে দিতে পারবেন তা ঠিক করতেই এই নিলামের ব্যবস্থা৷ এমনকী অমৃতি কত টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে তার দাম বেঁধে দেওয়া হয় কমিটির তরফে৷ মেলায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ কুইন্টালের উপর অমৃতি বিক্রি হয়৷ অমৃতির জন্যই বহু লোক, বহু দূর থেকে মেলায় আসেন৷ অমৃতির আকারও দর্শনীয়৷ পেল্লায় সাইজ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে বসে যাত্রার আসর৷ এছাড়াও আয়োজন করা হয় নানা প্রতিযোগিতা৷
কীভাবে যাবেন
হাড়দা গ্রামের একপাশ দিয়ে বইছে তারাফেণী নদী৷ অন্যদিকে একটুখানি গেলেই দেখা মেলে পাহাড়ের৷ হাওড়া থেকে ট্রেনে ঝাড়গ্রাম৷ সেখান থেকে বাসে হাড়দার দূরত্ব ২২ কিলোমিটার৷ঝাড়গ্রাম থেকে হাড়দা যাওয়ার শেষ বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টায়৷
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য সুব্যবস্থাও রয়েছে৷ চাইলে ঝাড়গ্রামেও থাকতে পারেন৷ রাত্রিবাসের জন্য সেখানে রয়েছে বেশ কিছু রিসর্ট এবং লজ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.