সুদর্শন নন্দী: কাছাকাছি বিদেশ ভ্রমণে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার জুড়ি নেই। দমদম থেকে বিমানে ঘণ্টা তিনেকের পথ। চেন্নাই থেকে লাগে একঘণ্টা। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ নিজে আলাদা ভাবে করা যায়, আবার কোনও ট্যুর সংস্থার সঙ্গেও করা যায়। অনলাইনে সুবিধা থাকায় ভিসার ঝামেলা কম। পাঁচদিনের ভ্রমণে এক ট্যুর সংস্থার হাত ধরে দমদম থেকে কলম্বোয় নামলাম শ্রীলঙ্কা সফরে। নীচে সমুদ্র ও বিস্তৃত তটের দেখা মিলেছে জানলার ধারে আসন পাওয়ায়। নেমেই রোমাঞ্চ নতুন দেশে আসার অনুভূতিতে।
এই ভ্রমণে আমরা ঘুরব নিগম্বো, ডাম্বুলা, ক্যান্ডি আর কলম্বোর দর্শনীয় স্থানগুলি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেলে বেরিয়ে রওনা হলাম কুড়ি কিলোমিটার দূরে নিগম্বোতে। বিস্তৃত বালুকাভূমি, হালকা ঢেউয়ের আওয়াজ বাদ দিলে নির্জনতা ছেয়ে গিয়েছে চারপাশ জুড়ে। হাঁটাহাঁটি, ছোটাছুটি করে কাটানো গেল ঘণ্টাখানেক। সন্ধে হতেই চাঁদের আলো সারা বালুকাভূমিতে আছড়ে পড়ে। সে এক অবর্ণনীয় অনুভূতি।
পরের দিন গন্তব্য শ্রীলঙ্কার অন্যতম পর্যটন শহর ডম্বুলা। রাস্তাঘাট আর পাশের গাছগাছালি দেখে মনে হল, দক্ষিণ ভারতের কেরলের কোনও সড়ক। পাশে সোনালি ধানের জমি, সবুজ সবজি খেত। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নারকেল গাছ। ঘণ্টা তিনেকের পথ। মাঝে পিন্নাওয়ালেতে দেখলাম আহত এবং পরিত্যক্ত হাতিদের অনাথাশ্রম, যার পোশাকি নাম ‘এলিফ্যান্ট অরফানেজ’। ১৯৭৫ সালে নির্মিত হাতির এই অনাথাশ্রমে প্রায় সত্তরটি হাতি রয়েছে। এলিফ্যান্ট অরফানেজ থেকে বেরিয়ে পাশেই নদীতে দেখতে গেলাম হাতিদের স্নান। প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি হাতি নাইতে নেমেছে। দেখার মতোই রোমাঞ্চিত দৃশ্য। পাড়ে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা সেই দৃশ্য দেখছেন।
[ ঘরের কাছেই স্বর্গ, সপ্তাহান্তে প্রকৃতির কোলে সময় কাটান এই পাঁচ জায়গায় ]
এরপর পালা হাতি সাফারির। এই সাফারিতে ঘেরা জঙ্গলে পর্যটকদের হাতির পিঠে ২০ মিনিট ঘোরানো হয়। এরপর চললাম ডম্বুলা গুহা মন্দির। রাস্তায় যেতে যেতে অজস্র বুদ্ধমন্দির চোখে পড়ল। ভগবান বুদ্ধদেবের পবিত্র মন্দির এই ডম্বুলা গুহামন্দির। পাঁচশো ফুট উঁচুতে অবস্থিত স্থানটি একাধিক গুহা নিয়ে নির্মিত। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে নির্মিত এই ডম্বুলা গুহামন্দির। গুহায় রয়েছে দেবদেবীর অনেক মূর্তির অঙ্কিত ছবি। সাতচল্লিশ ফুট শায়িত বুদ্ধর মূর্তিটি দেখার মতো।
পরদিন সকালে সিগিরিয়া দুর্গ দেখার পালা। ৬০০ ফুট উঁচুতে তৈরি এই দুর্গ পঞ্চম শতাব্দীতে নির্মিত। বারোশো সিঁড়ি ভেঙে যেতে হয়। গরুর গাড়ি চেপে জঙ্গলে কাঁচা রাস্তা ধরে, নৌকায় বাঁধ পেরিয়ে গ্রাম দ্যাখার অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতো। নারকেল খোলার কাপে স্থানীয় চায়ের স্বাদ দারুণ। লাঞ্চের পর এবার যাওয়া হয় মিন্নারিয়া জাতীয় উদ্যান। এই পার্কের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে জঙ্গল ও হ্রদ। অসংখ্য হাতি দলে দলে ঘুরছে এখানে। রয়েছে বুনো মোষ, ভালুক, হরিণ, বুনো শুয়োর, চিতা, কুমির আর অনেক প্রজাতির সরীসৃপ ও পাখি।
পরের দিন ক্যান্ডি শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান টুথ রেলিক টেম্পল দেখলাম। ভগবান বুদ্ধের দাঁত রয়েছে এই মন্দিরে। শ্রীলঙ্কাবাসীরা এই মন্দিরকে দালাদা মালিগাওয়া নামে ডাকে। মন্দির নির্মিত হয় ১৬৮৭ থেকে ১৭০৭ সালের মধ্যে। বুদ্ধদেবের দাঁতটি সংরক্ষিত আছে কাচের পাত্রে। সাধারণের দ্যাখার উপায় নেই। বিশাল মন্দির চত্বরের ভিতরের অলংকরণ উচ্চমানের। মন্দিরের পাশেই ক্যান্ডি লেক। এরপরের গন্তব্য পেরাডেনিয়া রয়্যাল বোটানিকাল গার্ডেন। ১৮৭৬ সালে খুলে দেওয়া হয় এই গার্ডেনটি। ১৪৭ একর বিশাল চত্বর জুড়ে এই বোটানিকাল গার্ডেনটি। ব্যাটারিচালিত গাড়িতে ঘোরার ব্যবস্থা রয়েছে।
পরের দিনের শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক শহর তথা রাজধানী কলম্বো অবশ্যই দ্রষ্টব্য। চা-বাগান থেকে এবার আমরা সোজা গেলাম এক ঔষধি বাগানে। কয়েক হেক্টর জুড়ে এই বাগান থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ। সঞ্জীবনী পাহাড়টিও দেখলাম। ঔষধি বাগানের পর আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল কলম্বো শহর দর্শন। শহরে দেখলাম বিভিন্ন ঐতিহাসিক নির্মাণ, দাওতাগা মসজিদ, গঙ্গারামাইয়া মন্দির, উলফেনডল গির্জা, সমুদ্র বন্দর, সমুদ্র সৈকত, লোটাস টাওয়ার। ছিমছাম শহর। ঘুরতে বেশ ভাল লাগল।
সন্ধের পর ঢুকলাম শপিং মলে কেনাকাটার জন্য। কেনাকাটা সেরে গুছিয়ে নেওয়ার পালা। ভোর চারটেতে রওনা হতে হবে এয়ারপোর্ট। সকালের ফ্লাইটে ফিরব কলকাতা। সেইমতোই পরের দিন ন’টা নাগাদ দমদমে নেমে হারিয়ে গেলাম দৈনন্দিন কোলাহলের সংসারে।
কীভাবে যাবেন
সরাসরি বিমান রয়েছে কলকাতা থেকে। রয়েছে শ্রীলঙ্কা এয়ারলাইনসেরও বিমান। তিনঘণ্টার যাত্রাপথ। অনলাইনে ভিসা পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল রয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেল হল-জেট উইং হোটেল, গোল্ডি স্যান্ড বিচ হোটেল, হাভারানা ভিলেজ, আরালিয়া হিল্স কটেজ, সিম্পসন ফরেস্ট কটেজ প্রভৃতি।
খাওয়াদাওয়া
সেরকম অসুবিধে নেই। ডাল, ভাত, তরকারি, মাছ-মাংস সব হোটেলেই পাওয়া যায়।
জেনে নিন
ভারতীয় টাকা অনেক জায়গায় চলে। শ্রীলঙ্কার টাকা কিছু নিয়ে নিলে ভাল হয়। এখানকার একটাকা ওখানকার দু’টাকার সমান। শপিং মলেও টাকা এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থা রয়েছে।
[ দোলে গন্তব্য হোক পশ্চিম, লাল মোরামের পথ বেয়ে ঘুরে আসুন শিমুলতলা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.