Advertisement
Advertisement
Manteswar

চৈতন্য পুঁথির সংরক্ষণে জোর, মন্তেশ্বরে ধর্মীয় পর্যটন গড়ার কাজে উদ্যোগী প্রশাসন

এখানকার জাতীয় সম্পদ রক্ষার দাবি দীর্ঘদিনের।

East Burdwan district administration emphasizes working on tourism where Chaitanya's script is under conservation | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:November 23, 2023 3:48 pm
  • Updated:November 24, 2023 11:27 am  

অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মূল লক্ষ্য পর্যটনে জোর। বিশেষত ধর্মীয় পর্যটন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ। আর তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্দেশে কাজ শুরু করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পর্যটন দপ্তর। ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ পুঁথির সংরক্ষণ-সহ মন্তেশ্বরের দেনুড়ে থাকা শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের পাটবাড়ি সংস্কার ও তার সৌন্দর্যায়নে উদ্যোগী হল। এলাকাবাসীর দাবিমতো কয়েকমাস আগেই এই নিয়ে পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলা পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্যস্তরে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই সেই কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।

মন্তেশ্বরের (Manteswar) দেনুড় পঞ্চায়েতের শ্রীপাট দেনুড় শাব্দিক শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব পীঠ। তাই ভক্তদের কাছে শ্রীপাট দেনুড় আবার ‘শ্রীধাম দেনুড়’ নামেও পরিচিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম এক প্রাণকেন্দ্র। কারণ, ওই গ্রামে রয়েছে শ্রীচৈতন্যদেবের (Mahaprabhu Sree Chaitany) দীক্ষাগুরু কেশবভারতীর বাস্তুভিটা। সেখানে তাঁর মূর্তি ও মন্দির আজও বর্তমান। এছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের বসতভিটাও। যেখানে রয়েছে শ্রীচৈতন্য-জীবনী গ্রন্থ ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত।’ ঐতিহাসিক ও সামাজিক দিক থেকে বৃন্দাবন দাস ঠাকুর রচিত এই গ্রন্থের মূল্য অপরিসীম। কারণ ওই গ্রন্থে রয়েছে শ্রীচৈতন্যদেবের বাল্য ও কৈশোর লীলা। রয়েছে চৈতন্যজন্ম থেকে গয়াগমন, সন্ন্যাস গ্রহণ ও নীলাচলগমনের ঘটনাও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য সম্মেলনে কোন খাতে কী পেল বাংলা?]

এছাড়াও রয়েছে তৎকালীন সমাজজীবন তথা নবদ্বীপের সমাজচিত্র। তুলোট কাগজে লেখা এমনই এক অমূল্য সাহিত্যসম্পদ যা সকলের অগোচরে নষ্ট হতে বসেছে। শুধু তাই নয়, দেনুড়ে থাকা ওই গ্রন্থ কোনওদিনই সেইভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি। তাই এমনই এক জাতীয় সম্পদ রক্ষার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন এলাকার বাসিন্দারা ও সেবাইতরা। উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচশো বছর আগে সপার্ষদ নিত্যানন্দ, পুরী যাওয়ার পথে দেনুড়ে রামহরি দাসের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। নিত্যানন্দের পদযাত্রায় ওই গ্রামে অবস্থান করার সময় ‘হরিতকি সঞ্চয়’-এর ঘটনার জন্য নিত্যানন্দ তাঁকে দেনুড়েই থেকে যেতে বলেন। তাঁর আদেশে বৃন্দাবন দাস ঠাকুর ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ রচনা করেন। বর্তমানে এই গ্রন্থ রক্ষণাবেক্ষণ-সহ পাটবাড়ির দায়িত্বে রয়েছেন রামহরি দাসের বংশধরেরা। তাদের অন্যতম এক সেবাইত নরহরি মোহান্ত জানান, “পাটবাড়িতে থাকা মন্দির-সহ অতিথি নিবাসের সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। একসময় মন্দির ভগ্নপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। ভক্তদের সহযোগিতায় কোনওরকমে তা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় যমুনা নামের একটি পুকুর রয়েছে। তাও সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সংস্কারের জন্য বহুবার আবেদন করেও সেইভাবে সাড়া মেলেনি।”

দোলযাত্রা থেকে রথযাত্রা এমনকি ঠাকুরের আবির্ভাব দিবস থেকে তিরোধান দিবস পালিত হয় এখানে।শুধু তাই নয়,সারা বছরই সেখানে গয়া, কাশী, বৃন্দাবন-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা যান। কারণ সেখানে আজও রয়েছে নিতাইচাঁদের পদাঙ্কিত ভূমি-সহ তাঁর নিজের হাতে লাগানো হরিতকি বৃক্ষ। এছাড়াও রয়েছে শ্রীপাটের প্রতিষ্ঠাতা রামহরি মোহান্তর পুণ্য সমাধিস্থল।এছাড়া রয়েছে পঞ্চানন মোহান্তর স্মৃতি সমাধিও। তাই পর্যটন কেন্দ্র (Tourism) হিসাবে দেনুড়ের যে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

[আরও পড়ুন: বদলার আগুন! ‘অ্যানিম্যাল’-এর রক্তাক্ত ট্রেলারে রোমহর্ষক রণবীর, শিহরিত নেটপাড়া]

কিন্তু হলে কী হবে, সেভাবে এখনও প্রচারের আলোয় আসতে পারেনি ওই এলাকা। গ্রামীণ এলাকায় থাকা পাটবাড়ির বেশ কিছু দেবোত্তর পুকুর-সহ কিছু সম্পত্তি থাকলেও সেভাবে আয় না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও ওই এলাকাকে সাজিয়ে তুলতে পারছেন না সেবাইতরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী ও সেবাইতদের আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা পর্যটন দপ্তর একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট পাঠিয়েছে রাজ্যে। দপ্তরের আধিকারিক মহম্মদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “পর্যটনের দিক থেকে দেনুড়ের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সেখানে থাকা ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ পুঁথি সংরক্ষণ, ওয়েলকাম গেট, কমিউনিটি টয়লেট, ৫টি সোলার লাইট, টিউবওয়েল তৈরির জন্য প্রায় ৬ লক্ষ টাকার একটি এস্টিমেট করা হয়েছে। সেটি রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement