অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: উত্তরের পাহাড় পর্যটনে যেন উলটপুরাণ! পুজোর মরশুমে যখন দক্ষিণের জঙ্গলমহল, মন্দারমণি-দিঘা সার্কিটে ঠাঁই নেই দশা তখন সিকিম, দার্জিলিং, কালিম্পং প্রায় নিস্তরঙ্গ। ক্রমশ লম্বা হয়ে চলেছে হতাশার ছায়া। শুনশান পাহাড়ি জনপদ। ফাঁকা পড়ে অধিকাংশ হোমস্টে। একেবারে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্সিয়াং, মিরিক বা গ্যাংটকের মতো জায়গায় তবুও হোটেল বুকিংয়ের হাল তুলনায় ভালো। কিন্তু একটি দূরবর্তী নির্জন পাহাড়ি সৌন্দর্যের টানে যে সব জায়গায় ছুটে যান সবাই, সেগুলিতে মাছি তাড়ানোর দশা। কারণ, প্রকৃতিক বিপর্যয়। বহু রাস্তা এখনও ধসের কবলে। অনেক জায়গা বিচ্ছিন্ন। বুকিং বাতিল হচ্ছে অনেক জায়গার। এই পরিস্থিতিতে এনজেপি স্টেশন ও বাগডোগরা বিমানবন্দরের সামনে অপেক্ষারত গাড়ি চালকদের সেই ব্যস্ততা উধাও।
অথচ দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির পরও ছবিটা ভিন্ন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের ন্যাড়া পাহাড়ের পাদদেশের রিসর্ট বা জঙ্গলের হোম স্টে, হোটেল সর্বত্র বুকিং প্রায় ফুল। শান্তিনিকেতন, হাজারদুয়ারি অথবা দিঘার সমুদ্র-সার্কিট, সব জায়গায় ঠাঁই-নাই রব। পুরুলিয়ার অযোধ্যা হিলটপের কচুরিরাখায় পর্যটন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে চলা কুশল পল্লির ডিরেক্টর রাহুল আগরওয়াল বলেন, ‘‘চতুর্থী থেকেই আমাদের রিসর্ট একেবারে হাউসফুল। পুজোর পর্যটনে আমাদের সংস্থায় একাধিক লোভনীয় প্যাকেজ রয়েছে।’’ অযোধ্যা পাহাড়ের মতো একই ছবি গড় পঞ্চকোট ও দক্ষিণ পুরুলিয়ার দুয়ারসিনিতেও। গড় পঞ্চকোট ইকো রিসর্টের চিফ জেনারেল ম্যানেজার মৃন্ময় বসুর কথায়, ‘‘পুজোর দিনগুলিতে এখন অল্পসংখ্যক কটেজই ফাঁকা আছে। বেড়ানো, খাওয়া ছাড়া আমরা প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থাও রেখেছি পর্যটকদের জন্য।’’
পুরুলিয়ার মতোই বাঁকুড়াতেও পুজোর(Durga Puja Travel) বুকিং শেষ। বাঁকুড়া জেলার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ সাহু ও সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত জানান, দুর্গাপুজো এবং পুজোর পরেও পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে সব হোটেল, লজে বুকিং শেষ। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বুধবার রাতেও প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়েছে দার্জিলিং ও সিকিম পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তা। ফের বন্ধ হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।
ওই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে ঘুরপথে কোনওমতে পর্যটকরা গন্তব্যে পৌঁছতেই পারেন। কিন্তু সময় মতো ফিরে ট্রেন অথবা উড়ান ধরতে পারবেন কি না নিশ্চয়তা নেই। এছাড়াও দার্জিলিং শহর অথবা সিকিমের গ্যাংটকে পৌঁছে বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বেশিরভাগ পর্যটকের পুজোর ভ্রমণ তালিকায় থাকে উত্তর সিকিমের চুংথাং, ফোদং গুম্ফা ও সেভেন সিস্টার্স ফলস, লাচুং, ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’ ইউমথাং, লাচেন, গুরুদোংমা লেক। একইভাবে দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু, ফালুট, টাইগার হিল। কিন্তু ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়েছে উত্তর সিকিম, দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। পাহাড়ি গ্রামে ছড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ হোমস্টে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.