দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কয়েকদিন আগেও খুলে দেওয়া হয়েছিল সুন্দরবন। বাঘের দর্শন পেতে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে উপস্থিত হচ্ছিলেন ভ্রমণ পিপাসুরা। গত ১৫ আগস্ট ছুটিতে বকখালির সমুদ্রে নেমে সাঁতার কাটছিলেন অনেকেই। কিন্তু করোনার প্রকোপ ও লকডাউনের জন্য পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন বেড়ানোর স্পটগুলি। ফলে আগস্ট মাসে যাঁরা ভাবছিলেন ইলশে-গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ইলিশ উৎসবে মেতে উঠবেন, আপাতত সে ভাবনা নোনা জলে!
লকডাউনের পর জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে খুলে গিয়েছিল সুন্দরবন। পর্যটক নিয়ে দু-চারটি জলযান ঘুরছিল ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের নদীর খাঁড়িগুলিতে। কিন্তু আবার নতুন করে বন্ধ করে দেওয়া হল সুন্দরবনের সমস্ত টাইগার সাফারিগুলি। শুধু সুন্দরবন নয় বন্ধ রাখা হল ভগবৎপুর কুমির প্রকল্পও। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হোটেল মালিক ও ভ্রমণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ।
জেলাতে মূলত যে সমস্ত স্থানগুলিতে মানুষ বেড়ানোর জন্য ভিড় করে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হল সুন্দরবন। এছাড়াও বকখালি, গঙ্গাসাগর, লোথিয়ান দ্বীপ, হেনরি আইল্যান্ড , মৌসুনি আইল্যান্ড এবং ডায়মন্ডহারবার ও আছে। এই সমস্ত স্পর্ট গুলি বন্ধ রাখা হয়েছে করোনার কারণে। বকখালি হোটেল গুলো প্রথম দু-এক দিন খোলা থাকলেও খদ্দেরের অভাবে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সমস্ত হোটেলগুলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কারণ একদিকে যেমন হোটেলগুলিতে স্যানিটাইজার সমস্যা অন্যদিকে যথেষ্ট পরিমাণে পর্যটক মিলছিল না। আর তাই এখন দু’একজন যাঁরা বকখালিতে যাচ্ছেন সেখানকার সমুদ্রের টানে তাঁরা দিনে গিয়ে ফিরে আসছেন। কারণ হাতানিয়া, দোয়ানিয়া নদীতে ব্রিজ হয়ে যাওয়ার কারণে বকখালি এখন কলকাতার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ হয়ে গিয়েছে। ফলে সেখানকার নিত্যদিনের খাওয়ার হোটেলগুলো বন্ধ।
এ বিষয়ে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান, বঙ্কিম হাজরা বলেন, “শুধুমাত্র কপিল মুনির মন্দির খোলা আছে। বন্ধ রাখা হয়েছে অন্য সমস্ত কিছু। বকখালির যে যে সমস্ত এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আর আমফান ঝড়ের পর থেকে হেনরি আইল্যান্ড মৌসুনি দ্বীপ এবং ভগবতপুর কুমির প্রকল্প বন্ধ ছিল।”
গঙ্গা সাগর কপিল মুনি মন্দির লকডাউনের প্রথমদিকে বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকদিন হল তা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে কোনো রকম পুণ্যার্থীর আনাগোনা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র স্থানীয় কয়েকজন সাধুসন্ত প্রত্যেকদিন পূজা পাঠ করছেন। অন্যদিকে আমফানের পরে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে মৌসুনি দ্বীপের পর্যটন ব্যবসার। হেনরি আইল্যান্ড তছনছ হয়ে গেছে আমফানের দাপটে। ঝড়ের পর ভগবত পুর কুমির প্রকল্প এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়ে ওঠেনি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য।সবমিলিয়ে জেলার পর্যটন ব্যবসা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী, কৃষ্ণ মন্ডল বলেন,” অগাস্ট মাসেই ইলিশ উৎসব এর জন্য বাইরের বহু মানুষ যোগাযোগ করে টাকা অগ্রিম দিয়েছিল। কিন্তু সব বাতিল করতে হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক পাবে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে সমস্ত ব্যবসায়ীরা।”
বর্ষা শুরু হতেই কাকদ্বীপ ক্যানিং নামখানা এবং ডায়মন্ড হারবারে ইলিশের আগমন ঘটে। এবার এখনো সেই ভাবে দেখা যায়নি ইলিশ। কিন্তু বিভিন্ন জায়গাতে চলছিল ইলিশ উৎসবের প্রস্তুতি। বেশকিছু পর্যটন সংস্থা ইলিশ উৎসব এর জন্য ডায়মন্ড হারবার, রায়চক, সুন্দরবন এমনকি বকখালি তে ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে সেই সমস্ত ইলিশ উৎসব এর প্রস্তুতি।
এ বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অতিরিক্ত ফিল্ড ডাইরেক্টর দীপক এম বলেন, “করণা প্রকল্পের কারণে আপাতত সুন্দরবন ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু সুন্দরবন ভ্রমণ নয় সঙ্গে যে কোনো রকমের শুটিং এবং সুন্দরবনের অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।নতুন করে যতক্ষণ না সরকারি নির্দেশ নামা বের হবে ততদিন পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.