গোবিন্দ রায়: আর কয়েক দিনের অপেক্ষা। হেরিটেজ গ্রামের তকমা পেতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার ধান্যকুড়িয়া (Dhanyakuria)। ইতিমধ্যেই ধান্যকুড়িয়ার জমিদারদের ‘গায়েন উদ্যান’ অধিগ্রহণ করেছে সরকার। হেরিটেজ হিসেবে তার আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, জমিদারদের গায়েন বাড়ি, বল্লভ বাড়ি, সাউ বাড়ি, মন্দির, স্কুলগুলোকেও হেরিটেজের আওতায় আনা হবে। রবিবার ধান্যকুড়িয়ার জমিদার বাড়িগুলি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছিল হেরিটেজ কমিশনের (WBHC) ফুল বেঞ্চ। তখনই একথা জানানো হয়।
হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারপার্সন শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য (Subhaprasanna Bhattacharjee) বলেন, “সারা ভারতে এই রকম কোনও বিল্ডিং স্ট্রাকচার এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই গায়েন গার্ডেনকে হেরিটেজ করার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। বাকি যেগুলো রয়েছে সেগুলো হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার জন্যও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” বাড়িগুলির ভগ্নদশা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শুভাপ্রসন্ন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান “বাড়িগুলোর এই রকম অবস্থা কেন?”
কিছুদিন আগেও হেরিটেজ কমিটির পক্ষ থেকে বাসুদেব মল্লিক-সহ বেশ কয়েকজন সদস্য পরিদর্শন করে যান ধান্যকুড়িয়া। এরপর রবিবার শুভাপ্রসন্ন-সহ হেরিটেজ কমিশনের ফুল বেঞ্চের সদস্যরা আসেন। স্থানীয় প্রশাসন এর তরফে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট উত্তরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক, মাটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তাপস ঘোষ-সহ আরও কয়েকজন।
ইতিহাস বলছে, ৩০ একর জমির উপর বিরাট প্রাসাদ গড়ে তোলেন পাট ব্যবসায়ী মহেন্দ্র নাথ গায়েন। যার পাশে রয়েছে গায়েন বাড়ি, সাউ বাড়ি, বল্লভ বাড়ি-সহ অন্যান্য ঐতিহ্য। ব্যবসায়ী মহেন্দ্র নাথ গাইন ব্যবসার সূত্রে ব্রিটিশদের অনুগত ছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের খুশি করতে এই গায়েন উদ্যানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নর্তকীদের এনে জলসার আসর বসাতেন। সেই থেকেই এই গায়েন উদ্যানের ঐতিহ্য। উদ্যানের দুর্গটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে গ্রীষ্মকালে গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্রিটিশ অফিসাররা আসতেন। অবসর সময় কাটাতেন। পরে সমস্তকিছু ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়।
স্বাধীনতার পর ভারত সরকারের হাতে এই উদ্যান হস্তান্তর করে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই গায়েন উদ্যান মেয়েদের সরকারি হোম হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে সরকার। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে ভগ্নদশা কারণে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। জানা গিয়েছে, ১৯৬০ সালে গুরু দত্ত, ওয়াহিদা রহমান এবং মীনা কুমারী অভিনীত ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবির শুটিং হয় এখানে। এছাড়াও মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত ‘সূর্যতপা’-সহ একাধিক সিনেমার শুটিং হয়। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ছবি ‘সত্যান্বেষী’র শুটিংও ধান্যকুড়িয়াতে হয়েছিল। এছাড়াও ১৯৮৮ সালে হিউ গ্রান্ট পরিচালিত ইন্দো-ফরাসি ছবির শুটিংও হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এখানকার মহিলা পরিচালিত রাস উৎসবও বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে গায়েন পরিবারের উত্তরসূরি মনোজিৎ গায়েন। তিনি বলেন, “যত দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় ততই ভাল। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক সরকার। ভগ্নপ্রায় অবস্থায় থাকা গায়েন গার্ডেনের রক্ষণাবেক্ষণে হেরিটেজ ঘোষণা খুবই জরুরি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.