বিক্রম রায় এবং নব্যেন্দু হাজরা: পুজোর আগেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ‘সবুজের পথে হাতছানি’ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পে সংস্থা এ বছর কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি থেকে পর্যটকদের জন্য প্যাকেজ টুর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আগে শুধুমাত্র কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি ডিপো থেকে বাস চালানো হত। এবার মোট দশটি রুটে প্যাকেজ টুরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে মাথাপিছু কত টাকা করে লাগবে, তা এখনও স্থির হয়নি। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ‘সবুজের পথে হাতছানি’ প্রকল্পে পর্যটকরা বুকিং করতে পারবেন।
দীর্ঘ দশ বছর পর অবশেষে ফের সংস্কার করে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে রিক্রিয়েশন হল ও ক্লাব কোচবিহারে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও চালু হতে চলেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রিক্রিয়েশন হল এবং রিক্রিয়েশন ক্লাব। অল্প ভাড়ায় এই রিক্রিয়েশন হলঘরে প্রায় ৭০০ জন একসঙ্গে বসতে পারবেন। নাটক, অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনাচক্র-সহ সাংস্কৃতিক কর্মসূচি, মিটিংয়ের জন্য এই হলঘর স্বল্পমূল্যে ভাড়া নেওয়া সম্ভব হবে। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্থার চারটি ডিপো থেকে দশটি রুটে ‘সবুজের পথে হাতছানি’ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলার পর্যটনকে বিশ্বের মানচিত্রে আরও আকর্ষণীয় করতে এবার নয়া ভাবনা রাজ্যের। বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ১০-১৫ দিনের এলাহি প্যাকেজ তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছে পর্যটন দপ্তর। যেগুলো তৈরি হবে পাহাড়, সমুদ্র, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে। মঙ্গলবার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা জানান রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
তিনি বলেন, ‘‘চার পাঁচটা জায়গা নির্বাচন করে এক একটা প্যাকেজ তৈরি হবে। সরকার এবং বেসরকারি ট্যুর সংস্থা যৌথভাবে তা করবে। যেখানে পর্যটন দপ্তরের সাব কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। যে ৬টা সাব কমিটি তৈরি হয়েছে, তাদেরকে এই জায়গা চিহ্নিত করতে বলা হচ্ছে। যেমন, ধরা যাক সুন্দরবন, গঙ্গাসাগর-সহ আরও বেশ কিছু জায়গা দিন দশেকের ট্যুর প্যাকেজে বিলাসবহুল ক্রুজে করে ঘুরিয়ে দেখানো হল। অথবা নিয়ে যাওয়া হল পাহাড়ে। নিত্যনতুন পর্যটনকেন্দ্র ঘোরানো হল সেখানে।’’
এদিনের অনুষ্ঠানে হোটেল রেস্টুরেন্ট সংগঠনের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। জানান একটা হোটেল বানানোর লাইসেন্স পেতে গেলে ৪৬ রকম ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। যা পেতে তার মালিকদের হয়রানির শেষ থাকে না। তাই লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি যদি এক জানলা পদ্ধতির মাধ্যমে করা যায় তাহলে তাঁদের উপকার হয়। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে বলে জানান বাবুল। বলেন, ‘‘আমি কথা বলছি। লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটা যত স্বচ্ছ ও দ্রুত সম্ভব করা হবে। কারণ, আমি জানি হোটেল চালানোটা কতটা শক্ত।’’
কথা প্রসঙ্গে পর্যটনমন্ত্রী নিজের হোটেল ব্যবসার প্রসঙ্গে টানেন। জানান, তিনি মুম্বইয়ে থাকাকালীন একটা হোটেল খুলেছিলেন। সাতমাসে ৭০ লক্ষ টাকা তাতে লোকসান হয় তাঁর। তাই হোটেল ব্যবসায়ীদের সমস্যাটা তিনি জানেন। একইসঙ্গে রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসসিয়েশনের তরফে ভাল ট্যুরিস্ট গাইড তৈরির কথা বলা হয়। জানানো হয়, সরকার যদি কোনও ইনস্টিটিউট করে গাইডদের প্রশিক্ষণ দেয়, তাতে একদিকে পর্যটকদের যেমন সুবিধা হয়, তেমনই প্রচুর কর্মসংস্থানও হয়।
এই প্রসঙ্গে পর্যটন সচিব সৌমিত্র মোহন জানান, ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় এই প্রশিক্ষণ চলছে। ৩০০০ গাইড তৈরিও হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক জেলাশাসককে এবিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হোটেলের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে এক জানালা পদ্ধতি মাসখানেকের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। গঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপর্যটনকে সাজানো নিয়েও আলোচনা হয় এদিন। হোটেল সংগঠন পর্যটনকে শিল্পের তালিকাভুক্ত করারও আবেদন জানান। কারণ পর্যটন এখনও আইনগতভাবে শিল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই বিদ্যুতের ট্যারিফ এবং সম্পত্তি করে যে ছাড় অন্যান্য শিল্প পায় তা পর্যটন পায় না। তাই একে শিল্পের তালিকাভুক্ত করার আবেদন করে তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.