বাংলাদেশ, নামটা শুনলেই শিহরণ জাগে অনেকের মনে। পড়ন্ত বিকেলে পদ্মার জলের ঝকমকি, পাতে ইলিশ-চিতলের মুইঠ্যা… আহা! ঘুরে আসবেন ভাবছেন? জেনে নিন কীভাবে? পদ্মাপাড়ে ঘুরে এসে কলম ধরলেন শিবব্রত গুহ।
যাব যাব করেও যাওয়া হচ্ছিল না। অবশেষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম বাংলাদেশের উদ্দেশে। বাংলাদেশ যাওয়ার ভিসা আগেই করে রেখেছিলাম। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গেদে লোকাল ট্রেনে চেপে সোজা গেদেতে পৌঁছে সেখানে বিএসএফ চেকিং শেষে দর্শনা বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। বাংলাদেশে প্রথম দেখলাম রায়েশার বিল। বিলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করল। দর্শনায় অনেকটা জায়গা জুড়ে একটি বড় সুগার মিল রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম যে জেলায় গেলাম, তার নাম চুয়াডাঙা। ভারতের স্বাধীনতার আগে, বাংলাদেশের কার্পাসডাঙায় এক মাটির বাড়িতে এসে বেশ কিছুদিন ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কথিত আছে, তিনি নাকি এই বাড়িতে বসেই তাঁর বিখ্যাত ‘লিচুচোর’ কবিতাটি লিখেছিলেন। এর একটু দূরেই কুলকুল করে বয়ে চলেছে ভৈরব নদী। শোনা যায়, এই নদীর কূলে বসে কবি নজরুল কিছু গান লিখেছিলেন। বাংলাদেশের বাস সার্ভিস খুব ভাল, আর বাসের সংখ্যাও অনেক। কার্পাসডাঙা গির্জা দেখার মতো। এখান থেকে আমরা গেলাম কুষ্টিয়া জেলায়। কুষ্টিয়াতে একটা জিনিস দেখে বেশ অবাক হলাম। ওখানে রাস্তার দু’ধারে শুধু সারি সারি রাইস মিল। এত রাইস মিল একজায়গায় চট করে দেখতে পাওয়া যায় না।
এবারে দেখলাম বাংলাদেশের বিখ্যাত নদী পদ্মা। পদ্মার রূপ অবর্ণনীয়। পদ্মার ইলিশ জগৎবিখ্যাত। পদ্মা নদীর ওপর পাশাপাশি আছে লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। দু’টি সেতুই দারুণ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের বৃহত্তম রেল সেতু। হার্ডিঞ্জ সাহেবের নামে এর নামকরণ হয়েছিল। সেতুটির বয়স একশো বছরেরও বেশি। এই সফরে আমার সবথেকে ভাল লেগেছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। কুঠিবাড়িটি দোতলা। একপাশে রয়েছে একটি পুষ্করিণী। সেই পুষ্করিণীর এক কোণে রয়েছে একটি বজরা। এই বজরাতে চড়ে কবিগুরু ভ্রমণ করতেন। এখানকার বাড়ির প্রত্যেকটি দেওয়ালে সাজানো রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছবি। এখানে তাঁর ব্যবহৃত পালঙ্ক, টেবিল, রান্নাঘর প্রভৃতিও রয়েছে।
বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মির মশারফ হোসেনের জন্মস্থান রাজবাড়ি জেলার পাংশাতে। এখানে লেখকের নামাঙ্কিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়া এখানে রয়েছে মির মোশারফ সংগ্রহশালা ও অডিটোরিয়াম। সংগ্রহশালাটি দেখার মতো। এখান থেকে লেখকের জীবনের অনেক তথ্য মেলে। এবার চললাম কুষ্টিয়া। এর অন্যতম দর্শনীয় স্থান লালন শাহের মাজার। এর প্রবেশদ্বার বিরাট উঁচু। এখানে বিখ্যাত বাউল লালন শাহের সমাধি রয়েছে। তাঁর সমাধি সৌধ দ্যাখার মতো। লালন শাহের সমাধির আশপাশে রয়েছে তাঁর সঙ্গীসাথী বাউল -ফকিরদের সমাধি। এখানে একটি বড় অডিটোরিয়াম রয়েছে। এই অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল-ফকিররা এসে সংগীত পরিবেশন করে থাকেন। রয়েছে অ্যাকাডেমিক ভবন। এই ভবনের লালন মিউজিয়াম অসাধারণ।
এরপরের গন্তব্য ছিল পাবনা। বাংলাদেশের পাবনা একটি বড় সাজানো-গোছানো শহর। পাবনাতে চার্চ, ব্রিটিশ আমলের সংশোধনাগার, মসজিদ-বাড়িও দেখার মতো। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থাও ভাল। পাবনার দই ও বগুড়ার সর পড়া দই বিখ্যাত। এই দুই ধরনের দই খাওয়া সৌভাগ্যের। স্বাদ এককথায় অপূর্ব।
পাবনা শহরে আছে বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এই বাড়ি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালাতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে এই সংগ্রহশালা। এর সামনে আছে একটা ছোটখাট বাগান। পাবনা শহর থেকে একটু দূরে রয়েছে হিমাইতপুর গ্রাম। নামেই গ্রাম, দেখে মোটেই বোঝার উপায় নেই এটা গ্রাম না শহর! সুন্দর জায়গা, সঙ্গে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো রয়েইছে, এছাড়াও যা আজীবন মনে থাকবে, তা হল, এখানকার মানুষের আতিথেয়তা।
কোথায় থাকবেন
পাবনাতে থাকার জন্য অনেক ভাল হোটেল আছে। হোটেল ভাড়া মোটামুটি বাংলাদেশি মুদ্রায় দিনপ্রতি ৮০০-১০০০ হাজার টাকার মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.