শুরু হয়েছে শারদ ভ্রমণ৷ পুজো থেকে শীত, বাঙালির ভ্রমণপর্বে নানা পথের হদিশ থাকে এই বিভাগে৷ জম্মু-কাশ্মীর-শ্রীনগর-গুলমার্গ-শোনমার্গ ঘুরে এসে লিখলেন সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়৷
জম্মু যেতে গেলে দু’ভাগে যাওয়া যায়৷ হাওড়া থেকে ১২৩৩১ আপ জম্মু-তাওয়াই হিমগিরি এক্সপ্রেস৷ সপ্তাহে তিনদিন, সোম-শুক্র-শনি৷ ছাড়ে রাত ১১.৪৫৷ প্রথম দু’দিন ট্রেনে কাটিয়ে তৃতীয় দিন বেলা ১১.৩০ মিনিটে জম্মু৷ এছাড়া ১১১৫১ আপ জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস৷ ছাড়ে প্রতিদিন বেলা ১১.৪৫ মিনিটে৷ এছাড়া দিল্লি হয়ে জম্মু যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে৷ জম্মু-কাশ্মীর আসতে গেলে একা না এসে একটি গ্রুপ বা এজেন্সির সঙ্গে এলে ভাল হয়৷
জম্মু
জম্মু স্টেশন থেকে গাড়িতে আসুন জি এস রোডে রঘুনাথজির মন্দিরের কাছে৷ এখানেই পাবেন নানা ধরনের হোটেল৷ একটু বিশ্রাম করে বেরিয়ে পড়ুন কোনও অটো বা ট্যাক্সি নিয়ে রঘুনাথজির মন্দির দেখতে৷ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা গুলাব সিংয়ের উদ্যোগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়৷ মূল মন্দিরে আরাধ্য দেবতা রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ছাড়াও রয়েছে অন্য দেবদেবীর মূর্তি৷ এখানে রয়েছে বাহু দুর্গ৷ বাহু দুর্গের ঢোকার পথে বাওয়াওয়ালি মাতার মন্দির৷ আর আছে অমর মহল প্যালেস৷ তা দেখে ফিরে রাতটা বিশ্রাম করে নিন৷ এখানে গাড়ির প্যাকেজ করে নিতে পারেন৷ যারা আপনাকে পুরো সফরটা ঘুরিয়ে দেখাবে৷ তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি বাসও পাবেন৷
সকালে খাবার খেয়ে রওনা শ্রীনগরের উদ্দেশে৷ জম্মু থেকে দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার৷ শ্রীনগর যাওয়ার পথে ১১০ কিলোমিটার দূরে পড়বে পাটনিটপ৷ জায়গাটি পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা৷ রাস্তার ধারে অনেক ধাবা আছে৷ দুপুরের খাবার খেয়ে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা৷ পাটনিটপ ছাড়িয়ে গাড়ি পৌঁছবে বিখ্যাত বানিহাল টানেল বা জওহর টানেল৷ নিরাপত্তা বাহিনীর চেকিং মিটলেই যাওয়ার অনুমতি মিলবে৷ দীর্ঘ আড়াই কিলোমিটার টানেল অতিক্রম করা মানে কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছে যাওয়া৷ শ্রীনগর সন্ধে ছ’টায়৷ লালচক, জিরো ব্রিজ রাজবাঁধ, ডাল লেকের কাছে অনেক হোটেল পাবেন৷
শ্রীনগর
শ্রীনগরে প্রথম দিন সকালে জলখাবার খেয়ে চলে যান পাহাড়ের উপরে শঙ্করাচার্যের মন্দির৷ ডাল লেক থেকে প্রায় হাজার ফুট উপরে৷ মন্দিরটি দেখতে গেলে প্রায় ৭৬০টি সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপরে উঠতে হবে৷ এই মন্দিরটি আসলে শিবমন্দির৷ এখানে চামড়ার যে কোনও জিনিস, মোবাইল, ক্যামেরা নিষিদ্ধ৷ এখান থেকে অবশ্যই চশমাশাহি৷ মানুষের বিশ্বাস, চশমাশাহির ঝরনার জল পেটের পক্ষে খুব উপকারী৷ জওহরলাল নেহরু নাকি এই জল পান করতেন৷ ডাল লেক দিয়ে কিছুটা গেলেই পড়বে নিশাতবাগ৷
নিশাতবাগের প্রধান আকর্ষণ ফুলের বাগান আর চিনার গাছ৷ নিশাতবাগ থেকে চার কিলোমিটার দূরে শালিমারবাগ৷ সম্রাট জাহাঙ্গির বেগম নুরজাহানের জন্য শালিমারবাগ নির্মাণ করেছিলেন৷ শালিমারবাগে সবথেকে উপরের ধাপে আছে বিশ্রামঘর৷ এই ঘরটি দেওদার কাঠ দিয়ে তৈরি৷ চারপাশে ফুলের বাগান৷ শালিমারবাগ থেকে কিছুটা দূরে পড়বে টিউলিপ গার্ডেন৷ টিউলিপ ফুল দেখতে গেলে আসতে হবে এপ্রিল মাসে৷ শুধুমাত্র একমাসের জন্য খোলা থাকে৷ শ্রীনগরে কেনাকাটার জন্য রয়েছে লালচক, বুলেভার্ড, রেসিডেন্সি রোড৷ সেখান থেকে কেনা যেতে পারে বিভিন্ন্ ধরনের শাল, কাশ্মীরি সিল্কের শাড়ি, জাফরান, আখরোট, আমন্ড, মধু, কার্পেট৷
ডাল লেক
শ্রীনগরের প্রধান আকর্ষণ ডাল লেক৷ ১৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ডাল লেক৷ লেকের সুন্দর জায়গা নাগিন লেক৷ শিকারায় চড়ে ডাল লেকে ঘুরে বেড়ানোর সময় দেখতে পাবেন ভাসমান হাউসবোট৷ হাউসবোটে একটি দিন থেকে যেতে পারেন৷ ভাড়া দু’হাজার থেকে শুরু৷ লেকের উপর প্রচুর দোকান -বাজার৷ জামা-কাপড়ের বিভিন্ন প্রকার শো-রুম আছে৷ দেখতে পাবেন শিকারায় চড়ে ছবি তোলার ভিড়৷ আপনাকে কাশ্মীরি পোশাক পরিয়ে ছবি তুলে দেবে৷ মে-জুন-জুলাই মাসে সূর্যের আলো রাত আটটা পর্যন্ত পাওয়া য়ায়৷ ফলে ঘুরে দেখার সময়টা অনেকটা পাওয়া যায়৷
গুলমার্গ
শ্রীনগর থেকে গাড়িতে গুলমার্গ দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার৷ গুলমার্গ থেকে হেঁটে বা ঘোড়ায় গন্ডোলার (রোপওয়ে) কাছে যেতে হবে৷ ফুল দেখতে হলে মে-জুন মাসে আসতে হবে৷ শীতকালে গুলমার্গ বরফে ঢাকা থাকে৷ গরমকালে বরফ দেখতে গন্ডোলায় খিলানমার্গ যেতে হবে৷ গন্ডোলায় দু’ভাগে যাওয়া যায়৷ প্রথম ফেজে যেতে ৭০০ টাকা এবং দ্বিতীয় ফেজে আরও ৯০০ টাকা দিতে হবে৷ দ্বিতীয় ফেজে খিলানমার্গে শুধুই বরফ৷ বরফের উপর খেলা করার জন্য স্কেটিং, বিভিন্ন মোটরগাড়ি পাওয়া যায়৷ গুলমার্গে দেখা যাবে বিখ্যাত গলফ ক্লাব, রানি মন্দির, সেন্ট মেরিজ চার্চ, রাজবাড়ি৷ গুলমার্গ থেকে ফেরার পথে হজরতবাল মসজিদ৷ জম্মু-কাশ্মীরের অন্যতম তীর্থস্থান ক্ষীরভবানীর মন্দির৷ এখানে দুর্গার মূর্তি আছে৷ বাঁধানো পুকুরে ভক্তরা দুধ-পায়েশ ঢেলে পুজো করেন৷ রাতটা শ্রীনগরের হোটেলে বিশ্রাম৷
শোনমার্গ
শ্রীনগর থেকে শোনমার্গের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার৷ শোনমার্গ যেতে গেলে চোখে পড়বে ছোট-বড় গ্রাম আর কৃষিজমি৷ রাস্তার দু’ধারে পড়বে অসংখ্য চিনার গাছ৷ এখানকার সেরা সময় এপ্রিল থেকে জুন মাস৷ রাস্তার ধারে প্রচুর ঝরনা দেখতে পাওয়া যায়৷ বরফ দেখতে হলে হেঁটে বা ঘোড়ায় থাজ্জিবাসের কাছে গিয়ে বরফ পাওয়া যাবে৷ এরপর যাত্রা পহেলগাঁও৷
পহেলগাঁও
শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁওয়ের দূরত্ব ৯৪ কিলোমিটার৷ শ্রীনগর-পহেলগাঁও যাওয়ার পথে পাম্পুরায় দেখতে পাওয়া যায় জাফরান চাষ৷ পাম্পুরায় বিখ্যাত উইলো কাঠ৷ এখানে সারি সারি উইলো কাঠ দিয়ে তৈরি ক্রিকেট ব্যাটের কারখানা৷ দরদাম করতে পারলে অনেক কম দামে ভাল ক্রিকেট ব্যাট পাওয়া যায়৷ কিছুটা এগিয়ে বিজয়ওয়াড়াতে নেমে যেতে হবে আপেল বাগানে৷ লিডার নদীর তীরে রূপসী শহর পহেলগাঁও৷ পহেলগাঁওয়ে বাজারের পাশে লিডার নদীর কাছেই হোটেলে থাকা যায়৷ কাশ্মীরের সব থেকে সুন্দর শহর পহেলগাঁও৷ এখানে আছে প্রচুর পার্ক৷ লিডার নদীর ধারে বসলে সময় কখন চলে যাবে বুঝতে পারা যাবে না৷ দ্বিতীয় দিন এখানকার গাড়ি ভাড়া নিয়ে যেতে হবে আরু ভ্যালি, ডিয়ার ফরেস্ট, বেতাব ভ্যালি, ১৬ কিলোমিটার দূরে চন্দনবাড়ি৷ পাহাড়ের উপর থেকে বেতাব ভ্যালির দৃশ্য অসাধারণ৷ এছাড়া পহেলগাঁও থেকে ঘোড়া নিয়ে কঙ্কর ভ্যালি, ডারিয়ান, বাইসরণ, ওয়াটার ফলস বা মিনি সুইজারল্যান্ড যাওয়া যায়৷ সন্ধ্যাবেলা বেরিয়ে পড়তে পারেন কিছু কেনাকাটার জন্য৷ শাল, শোয়েটার, জ্যাকেট, শাড়ি, জাফরান, আখরোট, আমন্ড, মধু আর বিশেষ করে কাওয়া কিনুন৷
পহেলগাঁও থেকে কাটরা হয়ে অমৃতসর এসে সকাল ছটায় ডাউন ১২৩৫৮ অমৃতসর-কলকাতা ট্রেন ধরে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করতে পারেন৷ দ্বিতীয় দিন দুপুর ১১টায় কলকাতায়৷ পুরো সফরটা কমবেশি ১৫ দিনের৷ কাশ্মীর থেকে অমৃতসর মাথাপিছু খরচ ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকার কমবেশি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.