পুজো তো শেষ। আনলিমিটেড খাওয়া-দাওয়ার পর্বও শেষ। ওজন বেড়ে ভুঁড়ি অগ্রগামী। মেদ ঝরানোর সুস্থ উপায় খুঁজছেন? মনে মনে ঠিক করলেন ডায়েটিং করবেন। কিন্তু মেনু থেকে শুধু ফ্যাট নয়, বাদ দিতে হবে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারও। খেতে হবে লো-কার্ব খাবার। এমনটাই জানাচ্ছেন পিয়ারলেস হসপিটালের বিশিষ্ট ডায়াটিশিয়ান সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ। লিখছেন জিনিয়া সরকার।
রোগা হতে লো-কার্ব ডায়েট
ফ্যাট জাতীয় খাবার কম খেলেই অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাবে। এই ধারণা ভুল। রোগা হওয়ার সহজ উপায় লুকিয়ে একমাত্র লো-কার্ব ডায়েটেই। কারণ, ওজন বাড়ার পিছনে ফ্যাটজাতীয় খাবারের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারও দায়ী। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খেলে তা ফ্যাটে পরিণত হয়। তাই সুস্থ থাকতে ভরসা দিচ্ছে লো-কার্ব ডায়েট।
ভাল কোনটা: ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত নয়। কার্বোহাইড্রেট কোন ধরনের তার উপর রোগা-মোটা হওয়া নির্ভর করে। দু’ধরনের কার্বোহাইড্রেট আছে। সিম্পল কার্বোহাইড্রেট ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। বিশেষজ্ঞের মতে, দৈনন্দিন শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট অবশ্যই প্রয়োজন। বিভিন্ন দানাশস্য যেমন, আটা, ওটস, জোয়ার-বাজরা-এই ধরনের শস্য থেকে তৈরি খাবার শরীরের জন্য ভাল। এতে ফাইবার বেশি থাকায় শরীরে তা ভেঙে সুগার বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা তুলনামূলক কম তৈরি করে এবং শরীরে দ্রবীভূত না হয়ে শরীর থেকে সহজে বেরিয়ে যায়।
খাবেন কী: পাতে বেশি থাকুক দানাশস্য জাতীয় খাবার। কিন্তু ভাত বেশি খাবেন না। ভাতে ফাইবারের মাত্রা কম থাকে বলে শরীরে দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে ফ্যাটে পরিণত হয়। যে ধরনের খাবারে বেশি করে ফাইবার থাকে সেই ধরনের খাবারের উপর নির্ভর করা ভাল। সারাদিনে একবার ভাত খেলে ক্ষতি নেই। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনারে একবার ভাত, একবার রুটি এবং আর একবার ওটস বা ডালিয়া রাখলে ভাল। সবুজ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকলেও ক্ষতি নেই, কারণ এতে বেশি ফাইবার থাকে। সঙ্গে অবশ্যই গোটা ফল খান। ফলের রসে সুগার বেশি থাকায় উপকারিতা কম।
এড়িয়ে চলুন: ময়দা জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে না। মোমো কিংবা যে কোনও ময়দার খাবার সিদ্ধ খেলেও ক্ষতি। কারণ এগুলি রিফাইন কার্বোহাইড্রেট বা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট। ওজন কমাতে চাইলে চাউমিন, কুকিজ, পেস্ট্রি ও যে কোনও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
বয়স ও ওজন বুঝে: বয়স ও ওজন দু’য়ের উপর ক্যালরির চাহিদা নির্ভর করে। মহিলা ও পুরুষদের চাহিদা আলাদা হবে। এর সঙ্গে কে কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত তার উপর কার্বোহাইড্রেট কতটা খাওয়া উচিত নির্ভর করে। যাঁরা সারাদিনে বেশি মাত্রায় কায়িক পরিশ্রম করেন তাঁদের একটু বেশি কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। যাঁরা বসে কাজ করেন তাঁদের ক্যালরি কম দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজনের প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৬০-৬৫ শতাংশ চাহিদা মিটে যায় কার্বোহাইড্রেট থেকে। ২০ শতাংশ ফ্যাট ও বাকি ২০ শতাংশ প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে ক্যালরি শরীরে আসা উচিত। যাঁদের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম তাঁরা একটু বেশি মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে পারেন। অতিরিক্ত মোটা বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান। একটু বেশি খেলে অবশ্যই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খান।
ব্যালান্স করতে: অনেকেই খুব বেশি ভাত খেয়েও মোটা হন না। সেক্ষেত্রে তাঁরা প্রয়োজনীয় অ্যাকটিভিটি করে থাকেন। তাই ফ্যাট শরীরে জমতে পারে না। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলে বেশি করে এক্সারসাইজ, হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। দুপুর ও রাতের খাবার খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে বসে বা শুয়ে পড়লে ক্ষতি। তাই খাওয়ার পর একটু হাঁটাচলা অবশ্যই জরুরি।
মিথ: অনেকেরই ধারণা ভাত না খেয়ে শুধু রুটি খেলে সহজেই ওজন কমে। কিন্তু প্রয়োজনের বেশি রুটি ভাতের সমান ওজন বাড়ায়। বিভিন্ন ধরনের দানাশস্যে ভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। তাই ভাত ও রুটি মিশিয়ে খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে পরিমাণমতো খেলে ক্ষতি নেই।
কারা খাবেন: খুব ওজন কম, অপুষ্টি থাকলে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান। এক্ষেত্রে লো-কার্ব ডায়েট চলবে না। যাঁরা খুব বেশি পরিশ্রম করেন, খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কার্বোহাইড্রেট বেশি প্রয়োজন।
যোগাযোগ : পিয়ারলেস হসপিটাল ৯০৩৮৭৫৫৪০৭
আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.