নোয়াপাতি কিংবা বিশাল, যেমনই হোক। বপু মানেই রোগের আস্তানা। অসুখ প্রতিরোধে ভুঁড়ি ঝরানো জরুরি। উডল্যান্ডস হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষদস্তিদারের পরামর্শ শুনলেন শ্রীজা ঘোষ।
ভুঁড়ি কীভাবে হয়?
শরীরের মধ্যভাগে যে অতিরিক্ত চর্বি জমে তা থেকেই ভুঁড়ির উৎপত্তি। পেটকে যদি একটি ছোট ঘর হিসাবে ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে ওই ছোট জায়গার মধ্যেই লিভার, কিডনি, পাকস্থলীর মতো প্রধান কয়েকটি অঙ্গ থাকার ফলে সেখানে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি হয়। আর তা ধরে রাখে তলপেটের পেশি। এই পেশিগুলির চারপাশে থাকে চর্বি এবং তার উপরে থাকে চামড়া। ভুঁড়ি হতে পারে দু’ভাবে। এক, যদি পেটের পেশিগুলি দুর্বল হয়। দুই, পেশিগুলির উপরে যে চর্বির আস্তরণ রয়েছে তা যদি পুরু হতে থাকে। দু’নম্বর কারণে হওয়া ভুঁড়ি শরীরে বেশি ক্ষতি করে। কারণ এতে শরীরের বাইরের পাশাপাশি পেটের ভিতরের অঙ্গগুলির মধ্যে চর্বি জমে।
কীভাবে শরীরে বাসা বাঁধে রোগ?
শরীরের ভিতরে অঙ্গের উপর জমতে থাকা ফ্যাটের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। হার্টের ধমনিতে ফ্যাট বা কোলেস্টেরল জমে ধমনি পথ সরু হয়ে যায়। এতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। সেন্ট্রাল ওবেসিটি অন্য যে কোনও ওবেসিটির থেকে বেশি বিপজ্জনক। অর্থাৎ শরীরের মধ্যপ্রদেশে চর্বি জমার প্রবণতা বেশি হয়। পেট এক ধরনের এন্ডোক্রাইন অঙ্গ, যা থেকে অনেক রকমের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। এর মধ্যে কিছু ভাল রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও তাতে খারাপের পরিমাণই বেশি। যা বিপদের মুখে ঠেলে দেয় হৃদযন্ত্রকে। এর পাশাপাশি আশঙ্কা বাড়ে ডায়াবেটিসের। অবনতি ঘটে লিপিড প্রোফাইলেরও। এছাড়া ভুঁড়ির কারণে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার বা নাক ডাকার সমস্যা হয়। এটি এমন একটি ব্যাধি যার কারণে ঘুমের সময় স্বাভাবিক নিশ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয় এবং ফুসফুস যথার্থ পরিমাণে অক্সিজেন হার্টে পাঠাতে পারে না। ফলে ক্রমাগত হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের প্রবণতাও কিন্তু বাড়ছে পেটে অত্যধিক চর্বি জমা হওয়ার ফলে। দেখা গিয়েছে, যাঁদের ওজন প্রচণ্ড বেশি তাঁদের মধ্যে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা কম ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় কম।
ছোটবেলা থেকেই সতর্ক:
ভুঁড়ি কমলে, রোগের প্রবণতাও কমানো যাবে। তবে তা করতে হবে খুব অল্প বয়স থেকেই। কারণ একবার ওজন বাড়লে তা কমিয়ে আনা খুবই শক্ত কাজ। তাই বাল্যকাল এবং বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই সঠিক খাওয়া-দাওয়া, নিয়ম মেনে জীবনযাপন এবং অতি অবশ্যই ব্যায়াম করা প্রয়োজন। বহু সময়েই মায়েদের বলতে শোনা যায় তাঁর বাচ্চা রোগা। জোর করে বাচ্চাকে খাইয়ে মোটা করতে পারলে তাঁরা খুশি হন। এই ধারণা ভুল। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক সজাগ থাকতে হবে। সঠিক পুষ্টি ও সঠিক ক্যালোরি তাদের খাবারে থাকছে কি না সেই ব্যাপারে নজর রাখা প্রয়োজন। আবার বাচ্চার ওজন বাড়ল কিনা সেটার থেকেও আগে দেখা উচিত সে সুস্থ আছে কিনা। প্রয়োজনে শিশু চিকিৎসকদের থেকে একটি ডায়েট চার্টও বানিয়ে নিতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগা বা ব্যায়ামের অভ্যাসেরও প্রয়োজন রয়েছে। লেখাপড়ার চাপে শিশুদের খেলাধুলো করার সময় এখন অনেক কমে গিয়েছে। এই সমস্যাটিরও সমাধান দরকার। কারণ বাচ্চা সুস্থ না হলে যতই লেখাপড়া করানো হোক, ভবিষ্যতে কোনও লাভই হবে না।
কমাবেন কীভাবে?
অনেকেই ভুঁড়ি কমাতে জিমে যান। কিন্তু ওজনের কাঁটা সেই একই জায়গাতেই থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে শুধু ব্যায়াম নয় পালটাতে হবে খাদ্যাভাসও। খাবার তালিকায় কী থাকবে সেই সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। কার শরীরে কতটা ক্যালোরি প্রয়োজন সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। অর্থাৎ যাঁদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতে হয় তাঁদের খাবারে ‘হাই ক্যালোরি’ থাকলেও অসুবিধে নেই। কিন্তু আজকাল বেশিরভাগ মানুষেরই বসে কাজ, সেই জন্য ‘লো ক্যালোরি’ যুক্ত খাবার খাওয়া ভাল। ভারতীয়দের খাবার তালিকায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। তাই যতটা পারা যায় কাটছাঁট করে মেপে খেতে হবে।
পরামর্শে : ৭৬০৪০৭৫৫৫১/৭৬০৪০৭৫৫৫৫
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.