সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে ? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে আপনার শরীর-স্বাস্থ্যের উন্নতির স্বার্থেই সেই অভ্যাসটাকেই এবার একটু আপডেট করুন। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে লিখতে শুরু করুন ফুড ডায়েরি।
বিশ্বাস করুন, এর থেকে ভাল পরামর্শ হালফিলে পেতেন না। কারণ অতি সম্প্রতি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসচেতন সক্কলকেই এই পথে চলতে বলছেন। তাঁরা বলছেন, ফুড ডায়েরি লেখার অভ্যাস তৈরি করলে আপনার উপকার বই কোনও অপকার হবে না। এই অভ্যাসের ফলে ভাল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা যেমন আপনার জন্মাবে, তেমনই যারা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত লাভবান হবে। ইতিমধ্যে তা হয়েছেও। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার ফলই তা জানান দিচ্ছে।
১,৭০০ জন তরুণ—তরুণীর উপর করা এই ‘ওয়েট লস’ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাদের নিয়মিত ‘ফুড ডায়েরি’ লেখার অভ্যাস রয়েছে। তাদের ওজন কমানোর গতি, দ্বিতীয় দলটির তুলনায় অনেকটাই বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্যাভ্যাসের কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও যদি নিজে থেকে তা ঠাহর করতে না পারেন, তাহলে আপনার ফুড ডায়েরি নিয়ে যান আপনার চিকিৎসকের কাছে। তাতে চোখ বুলিয়েই তিনি বলে দিতে পারবেন আপনার সমস্যা। বাতলে দিতে পারবেন আশু সমাধানও।
ফুড ডায়েরি বিষয়টা কী ?
এটা আদপে ট্র্যাকরেকর্ড। লিখিত খতিয়ান। আপনি একটা গোটা দিনে কী কী খাচ্ছেন, কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন, তা খাতায়—কলমে লিখে রাখাই হল ফুড ডায়েরির বিশেষত্ব।
ফুড ডায়েরিতে কী কী লিখবেন?
কী খাচ্ছেন– ঠিক কোন কোন খাদ্য এবং পানীয় খাচ্ছেন, সেটি কীভাবে রান্না করা হয়েছে (বেকড না বয়েলড না ফ্রায়েড) প্রভৃতি। খাবারের সঙ্গে কী সস বা আচার বা ড্রেসিং বা টপিং বেছে নিচ্ছেন, ডায়েরিতে লিখতে ভুলবেন না তাও।
কতটা খাচ্ছেন– বাড়িতে মেলে, এমন পাত্রে খাবার খেলে, তার পরিমাপ ডায়েরিতে উল্লেখ করতে ভুলবেন না। এবার সেই পাত্রটি কোনও কাপ, বাটি, চা—চামচ বা টেবিল—চামচ যাই হোক না কেন, লিখে রাখবেন। পারলে খাবারের ওজন মেপে খান। আর না হলে, পাত্রের পরিমাপ আন্দাজ করে ডায়েরিতে লিখে রাখুন। যদি বাড়ির বাইরে থাকেন, তাহলে খাবারের ‘portion’ অনুমান করে লিখতে পারেন।
কখন খাচ্ছেন– যে সময় যে খাবার খাচ্ছেন, তা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। সময় লিখে রাখা খুব কাজে লাগে। এতে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়। যেমন অনেকেরই বেশি রাতে খিদে পায়। তখন হাতের কাছে যা পান, ভাজা—পোড়া—মিষ্টি—কোল্ড ড্রিঙ্কস–নির্দ্বিধায় খেয়ে ফেলেন। আর পরে শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। অথচ কারণ মালুম করতে পারেন না। কিন্তু ডায়েরিতে খাওয়ার সময়ের উল্লেখ থাকলে আপনার চিকিৎসক আপনার সমস্যা দ্রুত ধরতে এবং সমাধান করতে পারবেন।
কোথায় খাচ্ছেন–ঠিক যে জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন, তার উল্লেখ করুন আপনার ‘ফুড ডায়েরি’তে। তা রান্নাঘরই হোক বা বেডরুম, গাড়িতে বসেই হোক বা রেস্তেরাঁয় কিংবা রাস্তায় চলতে চলতে, লিখুন সব কিছুই।
আর কী করছেন– খাওয়ার সময় আর কী করছেন, লিপিবদ্ধ করুন সেই তথ্যও। আপনি কম্পিউটারে কাজ করছেন না টিভি দেখছেন, পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে কথা বলছেন না স্রেফ বিশ্রাম করছেন, লিখে রাখুন স্পষ্ট করে।
কার সঙ্গে খাচ্ছেন– স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে খাচ্ছেন? না কী কোনও বন্ধু বা সহকর্মীর সঙ্গে ? না কি একা ? ডায়েরিতে উল্লেখ করুন।
অনুভূতির কথা– খাবার বা পানীয় গ্রহণ করার সময় আপনার মানসিক অবস্থা কেমন রয়েছে, তা জানানো দরকার। আপনি আনন্দে আছেন না দুঃখে ? অবসাদে ভুগছেন না কি রয়েছেন অত্যন্ত মানসিক চাপে ? কারও উপর রাগ করে রয়েছেন বা প্রবল বিরক্ত হয়ে আছেন না কি খুব ক্লান্ত ? ‘ফুড ডায়েরি’—র পাতায় রেজিস্টার করুন সব কিছুই। মনে রাখবেন, খাবার বা পানীয় গ্রহণ করার পর সঙ্গে সঙ্গেই তা লিখে রাখতে হবে। নয়তো ভুলে যেতে পারেন। তথ্য নির্ভুল এবং নির্দিষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। উদাহরণস্বরূপ, কফি খেলে তা ল্যাটে না ক্যাপুচিনো, লিখে রাখতে হবে। সঙ্গে তার পরিমাণও।
যদি মদ্যপান করেন, কী পান করছেন, কোন ব্র্যান্ড এবং পরিমাণ, লিখে রাখুন। এই কাজে আধুনিক গ্যাজেটের সাহায্যও নিতে পারেন। স্মার্টফোন অ্যাপ যেমন ‘MyFitnessPal’ আপনার কাজে আসতে পারে।
ফুড ডায়েরি লিখতে শুরু করলাম। এবার ? এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর সময় নিয়ে নিজের ডায়েরি নিজেই পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার খাদ্যাভ্যাস ‘সু’ না ‘কু’, আপনি নিজে কিছুটা হলেও তা বুঝতে পারবেন। শুধু বিশেষ খেয়াল রাখবেন নিচের বিষয়গুলির দিকে–
আপনার ডায়েট কতটা স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর উপাদানে ভরা ? শাকসব্জি, ফলমূল পর্যাপ্ত রয়েছে তো ? অতিরিক্ত চিনি রয়েছে, এমন খাবার বেশি খাচ্ছেন না তো ? মুড বা মানসিক অবস্থা কি আপনার খাদ্য চয়নকে প্রভাবিত করছে? তাড়াহুড়োতে বেশি খাচ্ছেন না তো?
নিজের টার্গেট স্থির করুন। নিজের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা সম্পূর্ণ হলে লক্ষ্য স্থির করুন। স্থির করুন ‘স্মার্ট গোলস’। তা কেমন হতে পারে, নমুনা রইল নিচে।
১. ফুড ডায়েরির পর্যবেক্ষণ–আপনি দিনে দুই চামচ শাকসবজি খান। লক্ষ্য–শাকসবজির পরিমাণ বাড়ানো। স্মার্ট গোলস–দুই থেকে বাড়িয়ে তিন বা চার করুন।
২. ফুড ডায়েরির পর্যবেক্ষণ–প্রতি সপ্তাহে তিন বা চারবার বাইরের খাবার খান। লক্ষ্য–বাড়ির খাবার খাওয়া বাড়িয়ে দিন। স্মার্ট গোলস–বাইরের খাবার সপ্তাহে দুবারের বেশি একদমই নয়।
৩. ফুড ডায়েরির পর্যবেক্ষণ–বাড়িতে থাকলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। অফিসে নিয়ম বদলে যায়। লক্ষ্য–অফিসেও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করুন। স্মার্ট গোলস–বাড়ি থেকে তৈরি করা স্বাস্থ্যকর খাবার অফিসে নিয়ে যান। সময় না থাকলে ফল নিয়ে যান।
মনে রাখবেন, সু—অভ্যাসে শরীর—স্বাস্থ্য লাভবান হয়। আর ফুড ডায়েরি রাখার অভ্যাস সেই লাভের অঙ্ক বহুগুণ বাড়াতে সাহায্য করে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিশেষজ্ঞরাই একথাই বলছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.