প্রতীকী ছবি
সৈকত মাইতি, তমলুক: অনলাইন ট্রেডিংয়ে অল্প সময়ের বিনিয়োগে বিপুল মুনাফার সুযোগ! বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এভাবেই জাল বিছোচ্ছে প্রতারকরা। আর তা না বুঝে ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা খোয়াচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু বাসিন্দা। সম্প্রতি এই জেলার এক তরুণী থেকে শুরু করে চিকিৎসক পৃথক পৃথক ঘটনায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ জানিয়ে জেলা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিযোগকারীরা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকের (Tomluk)নাইকুড়ি এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক অনুতোষ মাল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুকে (Facebook) একটি বিজ্ঞাপন তাঁর নজরে আসে। ওই বিজ্ঞাপনে শেয়ার ট্রেডিং এর মাধ্যমে প্রলোভন দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ওই চিকিৎসক। আর সেই প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে করণ বাত্র নামে অজানা এক ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)মেসেজের মাধ্যমে তমলুকের ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক্সপেরিয়েন্স ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে প্রফিট বুকিং-এর কথা বলেন ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ওই প্রতারক। অল্প সময়ের মধ্যে অধিক লাভের এই প্রলোভনে পড়ে ওই চিকিৎসক ফেব্রুয়ারির শেষ দিকের থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ ৬০ টাকা প্রতারণার শিকার হন। যার মধ্যে আবার প্রায় ৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এপ্রিলের ১২ তারিখ নাগাদ তার কাছ থেকে আইপিও কেনার নামে প্রতারকরা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু বেশ কয়েক দফায় তিনি এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েও সময়মতো ফেরত না পাওয়ায় সন্দেহ দানা বাঁধে। এমন অবস্থায় প্রতারিত হয়েছেন বুঝে তমলুক সাইবার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তমলুকের ওই চিকিৎসক।
অপরদিকে, প্রায় একইভাবে অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বিনিয়োগের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা প্রতারণা শিকার হয়েছেন শিল্পশহর হলদিয়ার (Haldia) এক তরুণী। এক্ষেত্রে অবশ্য গুগল map review রেটিং করার কাজের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার কাছ থেকে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, হলদিয়ার দুর্গাচক থানার খঞ্জনচক এলাকার বাসিন্দা, রুকসানা খাতুন। গত ১৬ এপ্রিল একটি WhatsApp লিংকের মাধ্যমে তার কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে তাঁকে মাত্র দেড়শ টাকা ডিপোজিট করে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নাম নথিভুক্তর কথা বলা হয়। এর পরেই শুরু হয় ওই তরুণীকে মোটা অঙ্কের টাকা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে প্রতারণার বিভিন্ন ধাপ।
প্রথমদিকে অবশ্য বিভিন্ন নামীদামি হোটেলের গ্রুপের গুগল ম্যাপ রিভিউ রেটিংয়ের জব ঠিকমতো সফল করার বিনিময়ে কয়েক হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টেও পাইয়ে দেয় প্রতারকরা। এর পরেই শুরু হয় আসল খেলা। প্রতারকরা একাধিক টেলিগ্রাম লিংক পাঠিয়ে অনলাইন মাধ্যমে ট্রেডিংয়ের উৎসাহ দিতে শুরু করে। টোপ দেওয়া হয় ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency)। এভাবে তরুণীর সরল বিশ্বাস অর্জনের পরেই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার টোপ দিয়ে ওই তরুণীর কাছ থেকে বেশ কয়েক দফায় প্রায় ২২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। কিন্তু অনলাইন ট্রেডিং করেও কোনও রকম ভাবেই টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না হলদিয়ার ওই তরুণী।
অভিযোগ, এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের পরে সেই টাকা ফেরত পেতে গেলে আরও তিন লক্ষ টাকা সার্ভিস ট্যাক্স চেয়ে বসে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসা ওই সংস্থাটি। এভাবে নানা অজুহাতে প্রতারকরা টাকা হাতিয়ে নিলেও সেই টাকা ফেরত পাওয়ার কোনও লক্ষ্মণ দেখতে না পেয়ে অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন অসহায় ওই তরুণী। এদিকে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্ত নেমেছে জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সাইবার প্রতারণার ঘটনা দিন দিন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। শেয়ার ট্রেডিং-এর নামে এমন একাধিক অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ঘটনার তদন্ত চলছে। কিন্তু এমন সমস্যা নির্মূল করতে জনগণকে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.