অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি: কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে প্রায় এক মাসের মতো ছুটি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে। শুধু তাই নয়, বাতিল করা হয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও। তাহলে সেমেস্টারের জমানায় সিলেবাস শেষ হবে কীভাবে? নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে? একরাশ চিন্তা ছাত্র ও ছাত্রী থেকে শিক্ষকদের মধ্যে। কিন্তু ওয়াই-ফাই, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে কোনও উপায় বের করা যাবে না, তা হয় নাকি। ইন্টারভিউ কিংবা কনফারেন্স যদি অনলাইনে সম্ভব হয়, তাহলে পড়াশোনা কেন হবে না? আলবাত হবে। সেটাই করেছে এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নিউটাউনের সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটিতে অনলাইনে দিব্যি পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পড়ুয়ারা বাড়িতে বসেই শিক্ষকদের ক্লাস করছে। এমনকী, নোটস দেওয়া, প্রজেক্ট ওয়ার্ক সম্পর্কেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে টিপস নিচ্ছে তারা। তা এমন সিদ্ধান্ত? ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের বিভাগীয় প্রধান মিনাল পারেখ জানালেন, ‘‘সেমেস্টার পদ্ধতিতে একেধারে সিলেবাস শেষ করার একটা চাপ থাকেই। সেখানে এক মাসের মতো ছুটি স্টুডেন্টদের পড়াশোনায় অনেকটাই ক্ষতি করবে। তার উপর আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যখন রয়েছে, তখন তাকে ব্যবহার করতে ক্ষতি কী? শুধু আমাদের বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগগুলিতেও দুর্দান্তভাবে পড়াশোনা চলছে।’’
সকলেই কী এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে? ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ঝুমুর দত্তগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘‘পড়ুয়ারা খুবই উৎসাহ নিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করছে। প্রায় ১০০ শতাংশ উপস্থিতি। একজন পড়ুয়া তো শতাব্দী এক্সপ্রেসে এবং বাসে করে যাওয়ার সময়ও ক্লাস করেছে। আর আমাদের সুরক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেতন।’’ অনলাইনে ক্লাস করে খুশি সেখানকার পড়ায়ারাও। মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী অভিষিক্তা দে, স্বর্ণালী সাহা ও দিশারী বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই ফেলল যে, ‘‘একদম নতুন অভিজ্ঞতা। বাড়ি থেকেই স্যর ও ম্যাডামদের ক্লাস করছি। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।’’
শুধু ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অল্পদিনের মধ্যেই অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করতে চলেছে। এমনকী, সরকারি অনেক কলেজেও এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস যেমন জানালেন, ‘‘এর মধ্যেই প্রিন্সিপালের সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। এ সপ্তাহের শেষে কিংবা পরের সপ্তাহের মধ্যেই অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।’’ কলকাতার বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজের প্রিন্সিপাল ড. রাজ্যশ্রী নিয়োগী জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কলেজেও গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে পড়াশোনা চলছে।’’ শ্রীশিক্ষায়তন কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকাও ব্যক্তিগত স্তরে এ সময়ে অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া উদ্যোগ নিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.