ছবি: অমিত সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বাসিন্দা ও শীতের মরশুমে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নয়া অ্যাপ চালু করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। শুক্রবার বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডায়মন্ড হারবার মডেলে এই অ্যাপের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা ও পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলা যায়, আঙুলের ছোঁয়াতেই এই অ্যাপ নানাবিধ সমস্যার সমাধান করবে।
জানা গিয়েছে, এই অ্যাপের পোশাকি নাম ‘সহায়।’ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল প্লে স্টোরে ‘সহায়’ (SAHAY) টাইপ করে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে সহজেই। অ্যাপটি রেজিস্টার করতে কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন নাম, মোবাইল নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এস পি থাকাকালীন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ওই পুলিশ জেলায় এমন একটি অ্যাপ চালু হয়। ওই অ্যাপের নাম ছিল ‘আস্থা।’ যা ওই পুলিশ জেলার নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ভীষণ কার্যকর হয়ে ওঠে। ব্যাপক সাড়া পড়ে ওই এলাকায়। ঠিক সেই ডায়মন্ড হারবারের মডেলেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই নতুন অ্যাপ ‘সহায়’। যা নিরাপত্তা বা পুলিশি সহায়তা সংক্রান্ত পরিষেবায় বাংলায় দ্বিতীয়। পুলিশ সুপার বলেন, “জেলার মানুষজন ও পুরুলিয়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধায় তৎক্ষণাৎ পুলিশি সহায়তা দিতে ‘সহায়’ নামে আমরা একটি অ্যাপ চালু করলাম। নিরাপত্তার সুনিশ্চিতকরণেই এই অ্যাপ।”
কিন্তু নিজের মোবাইলে কীভাবে কার্যকর হবে এই অ্যাপ? এই অ্যাপ খুললেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের একটি প্রতীক ভেসে উঠবে। তাতে লেখা থাকবে ‘সহায়’। এই পেজটির পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসওএস বাটনের পৃষ্ঠা চলে আসবে। যেখানে জরুরি ভিত্তিতে পুলিশি সহায়তা চাওয়া, বিপদে পড়া বা পুলিশি সহায়তা চাইতে কোনও মানুষজন ওই এসওএস বাটনে স্পর্শ করলেই চারটি জায়গায় একযোগে মেসেজ যাবে। আশেপাশে থাকা পুলিশের মোবাইল ভ্যান বা কুইক রেসপন্স টিমের ‘সহায়’ গাড়িতে সিগন্যাল ফুটে উঠবে। একইভাবে নিজের মোবাইলে এই মেসেজ পাবেন সংশ্লিষ্ট ওসি-আই সি। ওই এলাকার ডিএসপি বা এসডিপিও পদমর্যাদার আধিকারিক। সেইসঙ্গে জেলা পুলিশ বা পুলিশ সুপারের কন্ট্রোল রুম। অর্থাৎ ত্রি-স্তরীয় পর্যবেক্ষণে বিপদে পড়া মানুষকে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ওই গাড়িতে যখনই সিগন্যাল সামনে আসবে তখনই পুলিশি সহায়তা চাওয়া মোবাইল নম্বর, তিনি কোথায় রয়েছেন, তার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ সহ গুগল আর্থের মাধ্যমে সেখানে পৌঁছানোর রুট বাতলে দেবে মোবাইলে আসা ওই লিঙ্ক। ওই বিপদে পড়া বা পুলিশি সহায়তা চাওয়া মানুষটি পুলিশের সহযোগিতা সঠিকভাবে পেলেন কিনা তা ওই কুইক রেসপন্স টিমের গাড়িকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। রিপোর্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-আইসিকে।
যে লিংক চার জায়গায় মোবাইলে এসেছিল সেখানে কুইক রেসপন্স টিমের আধিকারিককে টাইপ করে বা ভয়েস ওভার দিয়ে জানাতে হবে বিপদে পড়া মানুষজনকে তিনি পুলিশি সহায়তা দিয়েছেন কি না। এখানেই শেষ নয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিপদে পড়া ব্যক্তির কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার সন্তোষজনক উত্তর মিলছে না ততক্ষণ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের লিংকটি বন্ধ হবে না। পুলিশের মোবাইল ভ্যান বা কুইক রেসপন্স টিম যে এলাকায় রয়েছে সেখান থেকে বিপদে পড়া ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে যে সময় লাগবে হিসাব করে তার কিছুক্ষণ পর ওই কন্ট্রোল রুম থেকে ওই ব্যক্তির কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হবে তিনি কি পুলিশি সহায়তায় সন্তুষ্ট নন? তারপরই ওই ব্যক্তির মতামত নিয়ে ওই আবেদনটির পরিসমাপ্তি ঘটবে। এভাবেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই জেলার মানুষজন-সহ শীতের মরশুমে পুরুলিয়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। যা প্রতিদিন তদারকি করবেন পুলিশ সুপার নিজে। এই অ্যাপটি ছড়িয়ে দিতে সামাজিক মাধ্যমেও প্রচার করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। তৈরি করা হয়েছে একাধিক প্রচারমূলক ভিডিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.