সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছাইচাপা আগুনটা বহুদিন ধরেই জ্বলছিল। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঝড় সেই আগুনকে উসকে দিল মাত্র। মার্কিন মুলুক তো বটেই, সাত সমুদ্দুর পারে এই পোড়া দেশের বাসিন্দারাও এখন ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কায় ভুগছেন। ‘আমার কতটুকু তথ্য চুরি গেল বা বেহাত হল’, এই আশঙ্কায় ঘুম ছুটেছে অনেকেরই। কিন্তু আপনি কি জানেন, যে এই সোশ্যাল মিডিয়া বা আপনার স্মার্টফোনের সার্চ ইঞ্জিন- আপনার সম্পর্কে কতটুকু জানে? কী কী তথ্য তাদের কাছে রয়ে যায়? আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে।
গুগল জানে আপনি কোথায় কোথায় যান: যখন অ্যাপ ক্যাব ডাকেন বা আমাজন-ফ্লিপকার্ট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনও সামগ্রী কেনেন, তখন গুগলের ‘লোকেশন ট্র্যাকিং’ আপনাকে ‘অন’ করতেই হয়। জানেন কি, যখনই আপনি লোকেশন ট্র্যাকার ‘অন’ করে, গুগল আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের সার্ভারে জমিয়ে রাখে। যেদিন থেকে আপনি ফোনে গুগল ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত আপনি কবে, কখন কোথায় গিয়েছেন, গুগল সবই জানে। বিশ্বাস না হয়, এই লিংকে ক্লিক করে দেখুন-
https://www.google.com/maps/timeline?pb
আপনি কী সার্চ করেছেন আর কী মুছে দিয়েছেন, জানে গুগল: আপনার ডিভাইসের যাবতীয় ব্রাউজিং হিস্ট্রি গুগল সঞ্চিত রাখে। ভাবছেন, সার্চ হিস্ট্রি ডিলিট করা আবার এমন কী ব্যাপার! আজ্ঞে না মশাই। আপনার মুছে দেওয়া হিস্ট্রিও গুগলের কাছে রয়েছে। দেখে নিন নিজের চোখে-
https://myactivity.google.com/myactivity
আপনি কী বিজ্ঞাপন দেখবেন, ঠিক করে দেয় গুগল: চমকে উঠলেন? এ তো সবে শুরু। আপনার আয়, ব্যয়, বাসস্থান, লিঙ্গ, বয়স, শখ, কেরিয়ায়, আগ্রহ, ব্যক্তিগত জীবন এমনকী ওজনও জানে গুগল। এই সব বিষয়ের উপর নির্ভর করে আপনার একটি ‘প্রোফাইল’ তৈরি করে গুগল। যার উপর ভিত্তি করে আপনি কী বিজ্ঞাপন দেখবেন সেটা ঠিক করে দেয় গুগল-ই। কারণ, সার্চ ইঞ্জিনটি জটিল অ্যালগরিদম কষে আঁচ করতে পারে, ওই বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে পণ্যগুলি আপনি কিনতে পারেন। নিজের বিজ্ঞাপনী প্রোফাইল দেখতে চান। ক্লিক করুন এই লিংকে-
https://myaccount.google.com/permissions?pli=1
আপনি কী কী অ্যাপস ব্যবহার করেন, গুগল জানে: আপনি যে যে অ্যাপ আপনার স্মার্টফোনে ব্যবহার করেন, তার যাবতীয় তথ্য গুগলে সঞ্চিত রাখে। গুগল জানে আপনি দিনে কতবার ওই অ্যাপটি ব্যবহার করেন। আরও সহজে বললে, মেসেঞ্জারে আপনি কতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলেন, বা কোন দেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেন, সেই সব গুগল জানে। এমনকী রাতে চ্যাট করতে করতে কখন ক্লান্ত হয়ে আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, তারও একটা গড় হিসাব রয়েছে গুগলের তথ্যভাণ্ডারে। দেখুন আপনার পছন্দসই অ্যাপসগুলির ডেটা যা গুগল জমিয়ে রাখে-
https://myaccount.google.com/permissions
ইউটিউবে রাতদুপুরে কী সার্চ করেন, গুগল কিন্তু সব জানে:
আপনার যাবতীয় ইউটিউব হিস্ট্রি, গুগলের কাছে গচ্ছিত রয়েছে। আপনি কী সার্চ করেছেন ভিডিও ব্রাউজিং সাইটে, সবই জমা হয় গুগলের নিজস্ব ভাঁড়ারে। অর্থাৎ, বিশ্বের এক নম্বর সার্চ ইঞ্জিনটি জানে যে আপনার সন্তান আসতে চলেছে কি না, আপনি চাইনিজ না মোগলাই কোন খাবার পছন্দ করেন বা আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না। এই লিংকে ক্লিক করে দেখুন সেই তথ্য:
https://www.youtube.com/feed/history/search_history
মোদ্দা কথা হল, একজন ইউজারের যাবতীয় তথ্য গুগলের কাছে জমা থাকে। চাইলে এই সব তথ্য আপনি ডাউনলোডও করতে পারেন। দ্য গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক গুগলের এই সব তথ্য নামিয়ে দেখেন, একা তাঁরই প্রায় ৫.৫ জিবি ডেটা গুগলের কাছে জমা রয়েছে। এই সব তথ্য দিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ এমএস ওয়ার্ডের পাতা ভরে যায়। যার মধ্যে রয়েছে আপনার ই-মেল, বুকমার্কস, গুগল ডক ফাইল, ড্রাইভের ডেটা, আপনার আপলোড করা ইউটিউব ভিডিওর ডেটা, ছবি, আপনার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, কোনও ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন কি না, কী কী ফোন রয়েছে আপনার- এই জাতীয় আজকের যুগে একজন মানুষের বলতে গেলে সবকিছুই জানে গুগল। এমনকী, আপনি এক একদিনে ক’পা হাঁটেন, সেটাও কিন্তু গুগলের কাছে জমা রয়েছে।
গুগলের কাছে আপনার যাবতীয় ডেটার কপি চান? ক্লিক করুন এই লিংকে:
https://takeout.google.com/settings/takeout?pli=1
এবার আসা যাক বিশ্বের এক নম্বর সোশ্যাল মিডিয়া ও এই তথ্য চুরির অভিযোগের আঁতুড়ঘর ফেসবুকের কথায়। মোটামুটি এক একজন গ্রাহকের প্রায় ৬০০ এমবি ডেটা ফেসবুকের কাছে থাকে যা দিয়ে আন্দাজ ৪ লক্ষ ওয়ার্ড ডকুমেন্ট ভরিয়ে ফেলা যাবে।
ফেসবুকের কাছে কী কী তথ্য আপনিই দিয়ে রেখেছেন?
যা যা মেসেজ আজ পর্যন্ত আপনি কাউকে পাঠিয়েছেন, যা ফাইল পাঠিয়েছেন, যা ছবি পাঠিয়েছেন বা পেয়েছেন, আপনার ফোনের সমস্ত কন্ট্যাক্ট নম্বর, অডিও মেসেজ- এই সব ফেসবুকের কাছে রয়েছে। আপনি চাইলে বাড়িতে বসেই এর একটি কপি হাতে পেতে পারেন এই লিংকে ক্লিক করে।
https://www.facebook.com/help/131112897028467
এছাড়াও আপনি কোন ডিভাইস থেকে লগ ইন করেন, কোন কোন অ্যাপে আপনি ফেসবুককে ব্যবহার করে লগ ইন করেন- এজাতীয় সমস্ত তথ্যই ফেসবুকের কাছে থাকে। আপনাকে ট্র্যাক করতে ফেসবুকের জুড়ি মেলা ভার। পড়লে সায়েন্স ফিকশন মনে হতে পারে, কিন্তু ফেসবুক আপনার ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম ও মাইক্রোফোনও চাইলে নিজের খুশিমতো ব্যবহার করতে পারে। কম যায় না গুগলও। আপনি কাকে, কী মেল পাঠিয়েছেন, তার হদিশ গুগুল এক মুহূর্তে খুঁজে বার করে দিতে পারে। অতএব বুঝতেই পারছেন, কাকে কান নিয়ে গিয়েছে বলে খামোখা কাকের পিছনে ছুটে লাভ নেই। আপনি নিজেই জ্ঞানত এই সব তথ্য গুগল-ফেসবুকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। অ্যাপ ইনস্টল করার আগে এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে পড়েও দেখছেন না যে ওই অ্যাপকে আপনি কী কী অনুমতি দিচ্ছেন। এর এটাই সবচেয়ে হাস্যকর! কেন্দ্রীয় সরকার আধারের সাহায্যে কারও উপর নজর রাখতে পারে, এই সন্দেহে প্রবল হইচই হচ্ছে দেশ জুড়ে। অথচ, এই সব বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থা যে নিত্যদিন আপনার অতি গোপনীয় তথ্য খুশিমতো ব্যবহার করছে, এই নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনা কোথায়?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.