কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা কালের জেরে এখন অনলাইনেই পেটিএম-এর কেওয়াইসি?
সশরীরে বায়োমেট্রিক স্ক্যান করে আর্থিক লেনদেনের যে নেটওয়ার্কে চূড়ান্ত হওয়ার কথা, তা কি এখন সত্যিই অনলাইনে হচ্ছে? দেশের অধিকাংশ পেটিএম (Paytm) ব্যবহারকারী এই খবরটি সঠিকভাবে জানেন না। আর ঠিক এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েই একটি বড়মাপের আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্র মাত্র এক টাকা পেমেন্টের নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। করোনা কালের গৃহবন্দি দশার নাম ভাঙিয়ে, কথার যুক্তিজালে ফাঁসিয়ে ওই চক্রটি এবার কলকাতার এক নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের ক্রেডিট কার্ড থেকে দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল! ফোনের ট্রু-কলার, ওটিপি, কানেক্টিং-লিংক থেকে শুরু করে প্রতারকদের ব্যবহৃত সমস্ত নম্বরেই ‘পেটিএম কেওয়াইসি’ ফুটে উঠছে। ব্যাংক জালিয়াতি শাখার তদন্তকারী গোয়েন্দারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য ‘পেটিএম কেওয়াইসি’ নামে একটি অত্যাধুনিক অ্যাপও তৈরি করেছে ওই প্রতারণা চক্রটি। যদিও পেটিএম কেওয়াইসি করাতে হয় সংস্থার কর্মীরা বাড়িতে আসেন, নয়তো নির্দিষ্ট সেন্টারে যেতে হয় আবেদনকারীকে।
কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়, শহরের এক নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। থাকেন কসবার আর কে চ্যাটার্জি রোডে। দিন কয়েক আগে তিনি সকালে ‘পেটিএম কেওয়াইসি’ করার জন্য মোবাইলে লিংক মেসেজ পান। এক্ষুনি না করলে পেটিএম সার্ভিস বন্ধ করা হবে বলেও বার্তা ছিল সেখানে। মেসেজে দেওয়া ফোন নম্বরে তিনি ফোন করতেই ট্রু-কলারেও পেটিএম কেওয়াইসি ভেসে উঠে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চক্রের এক সদস্য জানান, বাড়ি গিয়ে বায়োমেট্রিক স্ক্যান করেই ‘কেওয়াইসি’ করার কথা। কিন্তু করোনার সংক্রমণ এড়াতে এখন অনলাইনেই আপডেট করা হচ্ছে। ফোনের পরামর্শমতো কস্তুরী ক্লিক করতেই একটা অ্যাপ ডাউনলোড হয়ে যায়।
এবার ফোনের অপরপ্রান্তের প্রতারক চক্রের সদস্য বলেন, ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড থেকে মাত্র এক টাকা পেমেন্ট করুন। কথা মতো ক্রেডিট কার্ড থেকে তিনি মাত্র এক টাকা পেমেন্ট করেন, কিন্তু তা ‘বাউন্স’ হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় কার্ড থেকে তিনি ফের এক টাকা পেমেন্ট করেন। এদিন কস্তুরী জানান, “এক টাকা দিতেই দেখি একের পর এক টাকা চলে যাচ্ছে। আমার কাছে ওটিপি আসছে, কিন্তু আমি সেই নম্বর কাউকে দিচ্ছি না, ফোনেও বসাচ্ছি না, অথচ তিন দফায় দেড় লাখ টাকা কীভাবে বেরিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।” দ্বিতীয়বার পঞ্চাশ হাজার টাকা পেমেন্টের অপশন চাইতেই ব্যাংক থেকে ফোন আসে, তখনই কস্তুরী জানান, তিনি এই পেমেন্ট করছেন না। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকই টাকা আটকে দেয়।
ওইদিনই বিকেলে লালবাজার গিয়ে ‘ব্যাংক ফ্রড’ সেকশনে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানালেও এখনও পেটিএম কেলেঙ্কারির কোনও সুরহা হয়নি। এদিন তদন্তকারী গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “যে অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে সেটি মারফত কস্তুরীর স্মার্টফোনটি ক্লোন করে নিয়েছিল প্রতারকরা। উনি না পাঠালেও ওঁর ফোনে যে ওটিপি এসেছে, যা যা ছিল তার সমস্ত কিছুই ওরা ছবির মতো দেখতে পাচ্ছিল।” এমন এক অভিনব প্রতারণায় ফেঁসে কিছুটা হতভম্ব ওই চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। কিছুটা লজ্জিত হয়ে কস্তুরী বললেন, “জীবনে অনেক ভুয়ো ফোন কল পেয়েছি, কিন্তু করোনা কালের অজুহাত দিয়ে পেটিএম কেওয়াইসির নামে বোকা বনে গেলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.