গৌতম ব্রহ্ম: গোপনে ফেসবুক ছাড়ান, সংসারে শান্তি ফেরান। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা দেখেই মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন মানসী সেন। কয়েকদিন ধরে মেয়ের সঙ্গে ফেসবুক নিয়ে লাগাতার অশান্তি চলছে। দশ মিনিট পরপরই মেয়ে ফেসবুকে ঢুঁ মারছে। পড়াশোনা শিকেয়। নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠেছে।
[ জানেন, হোয়াটসঅ্যাপে কীভাবে নিজের ছবিকেই স্টিকারে পরিণত করবেন?]
সংসারে আগুন লাগাচ্ছে ফেসবুক আসক্তি। পড়ুয়ার মনোযোগ কমাচ্ছে। আইকিউও। এমনকী, ফেসবুক করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এমনই পর্যবেক্ষণ এসএসকেএম ও পাভলভ মানসিক হাসপাতালের মনোবিদদের। আসক্তি নিয়ে ট্রোলিংও শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু, ঘটনা হল, ফেসবুক পোস্টে ‘লাইক’-এর উদ্ভাবক জাস্টিন রোজেনস্টাইন নিজেই তাঁর ফোন থেকে ফিচারটি সরিয়ে ফেলেছিলেন। অথচ, লাইকের চক্করে হতাশার চক্রব্যূহে ঢুকে পড়ছে নবীন প্রজন্ম। মুক্তির দিশা মিলছে না। বিষয়টি মেনে নিয়েছেন মনোবিদরা। এসএসকেএমের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহার বক্তব্য, এটা এক ধরনের ‘বিহেভেরিয়াল অ্যাডিকশন’। অন্য নেশার মতো ফেসবুকে আসক্তদের ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’-ও হয়। আসক্তির মাত্রা বেশি হলে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া উচিত। তবে শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের পরিবর্তে অন্য কাজগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। যেমন বাচ্চার সঙ্গে খেলে সময় কাটানো, রান্না করা। সহজে চোখে পড়ে এমন জায়গায় ‘আই ক্যান ডু ইট’ বা ‘আই অ্যাম গেটিং বেটার অ্যান্ড বেটার’ লিখে আসক্তি মুক্তির কথা নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
মনোবিদদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আসক্তির পিছনে থাকে লাইক পাওয়া, অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করা কিংবা কারও অনুমোদন পাওয়ার তাগিদ। পাভলভের মনোবিদ শর্মিলা সরকার জানিয়েছেন, কয়েকটি লক্ষণ দেখে আসক্তির মাত্রা অনুধাবন করা যায়। যেমন, যখন-তখন কারণ ছাড়াই ফেসবুকে ঢোকা, নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত শেয়ার, কাউকে বন্ধু করতে পাগলের মতো আচরণ, কোনও নোটিফিকেশনের চিহ্ন দেখলেই উত্তেজিত হয়ে ওঠা, কোথাও গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিজের অবস্থান সোশ্যাল সাইটে জানিয়ে দেওয়া, প্রায়ই ট্যাগ করা, লুকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক করা, অচেনাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো, মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক চেক করা ইত্যাদি। মনোবিদরা বলছেন, ফেসবুকে অতিরিক্ত আসক্তি আবেগ-অনুভূতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হতাশা ও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে, একাকীত্ব বোধ হয় ও নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেন আসক্ত ব্যক্তিরা। দেখা দেয় পিঠব্যথা, মাথাব্যথা, স্পন্ডেলাইটিসের মতো নানা শারীরিক উপসর্গও। আর শেষপর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে যান আসক্তরা।
[আসছে ফ্লিপকার্ট মোবাইল বোনানজা সেল, আকর্ষণীয় মূল্যে কিনুন স্মার্টফোন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.