অর্ণব আইচ: মহিলাদের জামার ডিজাইন করতে পারদর্শী। কিন্তু আরও টাকা রোজগারের আশায় সেই ফ্যাশন ডিজাইনের আড়ালে শে শুরু করে এটিএম জালিয়াতির ছক। সোশাল মিডিয়া দেখে বিদেশি অপরাধের ধরনকে দেশীয় পদ্ধতিতে পরিবর্তন করে এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে হাত পাকায় পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের গুলশন কলোনির মহম্মদ সাহিল। পূর্ব কলকাতার সার্ভে পার্ক-সহ শহরের কয়েকটি এটিএম জালিয়াতিতে সেই সাহিলকে গ্রেপ্তার করেছে লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিক পিয়ালি বড়ুয়ার টিম।
বিদেশ থেকে স্কিমার কেনার টাকা নেই। তাই নিজের দুর্বুদ্ধি খাটিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কার্ড প্রবেশ করানোর অংশ খুলে নিয়েছিল সে। এমনই খবর পান লালবাজারের গোয়েন্দারা। এছাড়াও এটিএম কার্ডের পিন নম্বরের ছবি তোলার জন্য আস্ত একটি মোবাইল ফোন আঠা দিয়ে আটকে রেখেছিল কি-প্যাডের উপরের দিকে। যুবকের এই অভিনব পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে তাকে টানা জেরা করছেন গোয়েন্দারা। রবিবার সাহিলকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। কলকাতায় ওই যুবক ক’টি জালিয়াতি করেছে, এবার সেদিকে নজর গোয়েন্দা
পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, বছর কয়েক আগে কলকাতার একাধিক এটিএমে স্কিমার বসিয়ে জালিয়াতরা তুলে নিয়েছিল লাখ লাখ টাকা। এর পিছনে ছিল রোমানিয়ার গ্যাং। বিদেশিরা যে পদ্ধতিতে এটিএমে স্কিমার বসিয়ে কার্ডের তথ্য রেকর্ড করে টাকা তুলে নিয়েছে, সেই ধরনের পদ্ধতি সোশাল মিডিয়ায় ভাল করে দেখে সাহিল। এটিএমের যে অংশ দিয়ে কার্ড প্রবেশ করাতে হয়, সেই অংশে স্কিমার বসালে কার্ডের তথ্য রেকর্ড করা সম্ভব হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে চোরাপথে বা ডার্ক ওয়েবে সাহিলের পক্ষে স্কিমার কেনা খুব একটা সহজ ছিল না। সাহিলের দাবি, সেই কারণে সে অন্য একটি এটিএম থেকে কার্ড প্রবেশ করানোর অংশ খুলে নিয়ে এসে সেটাই কাজে লাগায়। এর পর সে সংগ্রহ করে কয়েকটি ভুয়া সিমকার্ড। সেই প্রি অ্যাক্টিভেটেড সিমকার্ড কাজে লাগিয়ে জাল হেল্পলাইন নম্বর তৈরি করে।
জানা যায়, আগে সাহিলের পরিবার তিলজলায় থাকত। পরে সে পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতে উঠে আসে। তাই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সার্ভে পার্ক এলাকায় সে রেইকি করে দেখে নিয়েছিল, কোন এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী নেই। একটি এটিএমকে টার্গেট করে সে। সেখানে তার নিজের তৈরি করা তথা অন্য এটিএম থেকে চুরি করা ‘ডিভাইস’ কার্ড প্রবেশের জায়গায় আঠা দিয়ে লাগায়। কি-প্যাডের উপর একটি পুরনো মোবাইল চালু অবস্থায় আঠা দিয়ে আটকে রাখে। এমনভাবে সেটি রাখা হয় যাতে কি প্যাডের ছবি তথা ভিডিও ওঠে। ওই প্রি অ্যাক্টিভেটেড সিমকার্ডটি অন্য একটি মোবাইলে পুরে তার নম্বর ‘হেল্পলাইন’ বলে পরিচয় দিয়ে এটিএমের উপর আটকে দেয়। যে ব্যক্তির ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে, তিনি যখন সাহিলের ওই ‘দিশি ডিভাইসে’ কার্ডটি প্রবেশ করান, তখন সেটি আটকে যায়। এই অবস্থায় ‘হেল্পলাইনে’ ফোন করার পর সাহিল নিজেই ফোনটি ধরে। সে ওই ব্যক্তিকে পিন নম্বর টাইপ করতে বলে। তিনি তা করার পরও কার্ড বের হয়নি। তিনি অধৈর্য হয়ে এটিএমের বাইরে বেরিয়ে আসার পর সে ভিতরে গিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সব খুলে নিয়ে নেয়। চালু করা মোবাইলের ভিডিওয় দেখে নেয় কি-প্যাডে টাইপ করা গ্রাহকের পিন নম্বর। কার্ডটি তখন তারই হাতে। সে ওই কার্ড ব্যবহার করেই ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয়।
গোয়েন্দাদের কাছে সাহিলের দাবি, ওই একই এটিএমে একাধিকবার ও বাঁশদ্রোণীর একটি অন্য এটিএমে সে হানা দেয়। ওই এটিএমগুলি থেকে সে টাকা তুলতে পেরেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে সাহিলের দাবি, সে প্রথমে জুতোর ব্যবসা করত। তাতে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। এছাড়াও সে মহিলাদের জামার ডিজাইন করতেও পারদর্শী। সেটাই তার মূল পেশা। কিন্তু আরও টাকা উপার্জনের জন্য সোশাল মিডিয়া দেখে তার এই পদ্ধতি মাথায় আসে। তাকে জেরা করে তার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.