নব্যেন্দু হাজরা: ঠাকুরের দিকে আমি একদৃষ্টে হাতজোড় করে তাকাব। আর তুমি সেই সময়ই রিলসটা (Reels) বানাবে। পিছনের ভিড়টা যেন থাকে। অষ্টমীর রাতে শ্রীভূমির মণ্ডপের সামনের ঠাসা ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে বয়ফ্রেন্ডের উদ্দেশে কার্যত নির্দেশ দিচ্ছিলেন তানিয়া। হাজারো মানুষের ঠেলাতেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর। ‘‘দেখো না, কত ‘কে’ লাইক আর ভিউ হয়!’’ তাঁর সামান্য দূরে তখন ভিড়ের চাপ সহ্য করেও স্ট্যান্ডে মোবাইল আটকে রিলস বানাতে ব্যস্ত আরেক কিশোর। আর এই রিলসম্যানদের দৌরাত্ম্যে ভিড় সামলাতে নাজেহাল অবস্থা উদ্যোক্তাদের। স্বেচ্ছাসেবক থেকে পুলিশ প্রত্যেকেরই এক কথা, মোবাইলের এই বাড়তি ব্যবহারের কারণেই লাইন তাড়াতাড়ি এগোচ্ছে না। জমে যাচ্ছে ভিড়।
আগে মণ্ডপে ঢোকার লাইনে দেখা যেত শয়ে শয়ে মানুষের কালো মাথা। কিন্তু অষ্টমীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারার মণ্ডপের (Durga Puja 2023) লাইনে দেখা গেল চৈতন্য হওয়া হাতের মাঝে শয়ে শয়ে মোবাইল। কেউ ব্যস্ত রিলসে, কেউ ভিডিও, কেউ সেলফিতে। যেন মোবাইল হেঁটে যাচ্ছে মণ্ডপের দিকে। কেউ কেউ তো ঠেলা খেতে খেতেও ব্যস্ত রইলেন, লাইক, কমেন্ট দেখে নিতে। ‘‘হবে নাই-বা কেন, ছবি দিয়ে যদি টাকা আসে, তা হলে মন্দ কী!’’–সাফ কথা কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ারের। একাধিক আবাসন তো এবার আবার রিলস বানানোর প্রতিযোগিতাও করছে বাসিন্দাদের নিয়ে।
রবিবার জনজোয়ার রাস্তা থেকে অলিগলিতে। ‘‘কানের দুলের ভিডিওটা তোলো ভালো করে। হোয়াট ঝুমকা গানটার সাথে দিতে হবে তো। এবার এটাই চলছে।” রাত ১১টায় টালা প্রত্যয়ের ভিড়ের চাপকে হেলায় হারিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে রিলস বানাতে মগ্ন থাকতে দেখা গেল অষ্টাদশী তরুণীকে। দূরে দাঁড়িয়ে ঘাম মুছছেন স্বেচ্ছাসেবক। “আর পারা গেল না।” ক্লান্তিভরা অভিব্যক্তি গলায়।
অষ্টমীর সন্ধ্যায় প্রত্যাশিত জনপ্লাবন ঠেকাতে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের যতটা হয়রান হতে হয়েছে, তার কয়েকগুণ বেশি গলদঘর্ম হতে হয়েছে ফেসবুক লাইভ ও রিলস করা আটকাতে। শ্রীভূমি তো বটেই। উত্তরের হাতিবাগান নবীনপল্লি, তেলেঙ্গাবাগান নলিন সরকার স্ট্রিট, টালা প্রত্যয় থেকে দক্ষিণের চেতলা অগ্রণী, ত্রিধারা সম্মিলনী, সুরুচি সংঘ। সব জায়গাতেই এক চিত্র। মন দিয়ে পুজো উপভোগের থেকে প্যান্ডেল, প্রতিমার সঙ্গে নিজের ছবি তোলার বেশি তাগিদ আট থেকে আশি প্রত্যেকের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.