সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পুজোর সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখার মজা বিকল্পহীন। এর সঙ্গে কিছুরই যেন তুলনা হয় না। কিন্তু প্রতি পুজোয় কি আর ঘুরে ঘুরে দেখা সম্ভব? বয়সের ভারে নুব্জ পরিবারের সদস্যদের কথা একবার ভাবুন তো! প্যান্ডেল ঘুরে ঘুরে মা দুর্গার (Durga Puja) মুখ দেখার জন্য তাঁদের উৎসাহ যথেষ্ট থাকলেও, শারীরিক সক্ষমতা ততটা থাকে না। তাঁদের কথা ভেবেই এবারের শারদোৎসবে বিশেষ উদ্যোগ নিল বর্ধমান পুলিশ। বিশেষ অ্যাপের (App) সাহায্যে তাঁদের প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে পুলিশের তরফে।
যেসব প্রবীণ সদস্য বাড়িতে একা থাকেন বা শুধুমাত্র বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী থাকেন, তাঁদের জন্য পুজোয় বিশেষ পরিষেবা দেবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ (East Burdwan Police)। পাশাপাশি, ভিড় এড়াতে বা কোনও কারণে যাঁরা পুজোমণ্ডপে যেতে পারবেন না তাঁদের জন্য বিশেষ অ্যাপ আনা হচ্ছে। শনিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে এই সব পরিষেবার সূচনা করা হয়। এদিন শক্তিগড় থানার ৫৫ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনাজনিত বিমা করিয়ে দিল পুজো উদ্যোক্তা বড়শুল কিশোর সংঘ।
শনিবার পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তরফে পুজোর গাইড ম্যাপ প্রকাশ করা হয়। ছোটরা পুজো দেখতে গিয়ে হারিয়ে গেলেও যাতে সহজে তাদের সন্ধান পাওয়া তার জন্য ‘চাইল্ড ব্যাজ’ বিতরণ করা হয় জেলা পুলিশের তরফে। পূর্ব বর্ধমান পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, ভিড় এড়াতে বা কোনও সমস্যার কারণে যাঁরা বাড়ির বাইরে বেরতে পারবেন না, তাঁরা গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলে ভারচুয়াল প্রতিমা দর্শনের সুযোগ পাবেন। বয়স্কদের ‘সম্মান’ কর্মসূচির মাধ্যমে বয়স্কদের খোঁজ রাখা হবে বলে পুলিশ সুপার জানান। তবে এই কর্মসূচি শুধু পুজোর সময়ই নয়, সারা বছরই চলবে। সপ্তাহে একদিন করে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। প্রবীণ নাগরিকদের অনেকে বাড়িতে একা থাকেন। তাঁদের তথ্য পুলিশ সংগ্রহ করেছে। পুজোর সময় তাঁদের ফোন করে খবর নেবে পুলিশ। কোনও সমস্যা হলে প্রবীণরা নাগরিকরাও পুলিশে ফোন করে সহায়তা নিতে পারবেন। এদিন সংস্কৃতি লোকমঞ্চের অনুষ্ঠানে বর্ধমানের পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।
এদিকে, শক্তিগড় থানা এলাকার ৫৪ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনাজনিত বিমা করিয়ে দিল বড়শুল কিশোর সংঘ পুজো কমিটি। এদিন পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে পুজো উদ্যোক্তারা বিমার শংসাপত্র তুলে দেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে। পুলিশ সুপার বলেন, “জেলায় প্রথম, সম্ভবত রাজ্যেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোনও পুজো উদ্যোক্তা দুর্ঘটনাজনিত বিমা করিয়ে দিল। খুব ভাল উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ। পুজোয় সকলে ভাল থাকুক।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জন সিভিক ভলান্টিয়ার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। বড়শুল কিশোর সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, “আমরা দেখেছি সিভিক ভলান্টিয়ার ডিউটি করেন রাস্তায়। আমাদের থানা এলাকার ৫৪ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যক্তিগত ২ লক্ষ টাকার বিমা করে দিয়েছি আমরা। তিন বছর আমরা এই বিমার বাৎসরিক প্রিমিয়াম ক্লাব থেকে বহন করব।” এদিনের অনুষ্ঠানে এলাকার দুস্থদের মধ্যে পাঁচশোটি শাড়িও বিতরণ করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.