স্টাফ রিপোর্টার: বাজের ঠিকু-কুলুজি এবার হাতের মুঠোয়। মোবাইল অ্যাপ ক্লিক করেই জানা যাবে, আশপাশে কোথায় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে, কোথায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা। মোদ্দা কথা, আসন্ন কালবৈশাখীর মরশুমে আকাশের হাল-হকিকত আগাম আঁচ করেই নিজের গতিবিধি ঠিক করতে পারবেন আপনি। নয়াদিল্লির মৌসম ভবন এবং পুণের ইন্ডিয়ান ট্রপিক্যাল মেট্রোলজি (আইআইটিএম)-এর উদ্য়োগে ‘দামিনী’ নামক এই মোবাইল অ্যাপ চালু হয়েছে। শুক্রবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের উপ-মহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্য়োপাধ্যায় জানান, মোবাইলে জিপিআরএস চালু থাকলে দামিনীর মাধ্যমে যে কেউ তাঁর ২০-৪০ কিলোমিটারের মধ্য়ে থাকা বজ্রগর্ভ মেঘের সুলুক-সন্ধান পেয়ে যাবেন। বজ্রপাতের পূর্বাভাস মিলবে ৩০-৪০ মিনিট আগে। এছাড়াও বজ্রপাতের মধ্য়ে ঠিক কী করা উচিত বা উচিত নয়, তাও বিশদে বাতলে দেবে দামিনী অ্যাপ।
বস্তুত, ঘোর গ্রীষ্মের বিকেলে আকাশ কালো করে আসা ঝড়-জলে গা জুড়োয় বটে, কিন্তু মুহুর্মুহু বজ্রপাতে বিপর্যয়েরও শেষ নেই। গ্রামেগঞ্জের পাশাপাশি খাস কলকাতাতেও বজ্রাহত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কালবৈশাখীর এই অন্য বিপদের মোকাবিলার উপায় খোঁজার নানা চেষ্টা চলছে। আর সেই প্রেক্ষিতেই বারবার উঠে আসছে যথেষ্ট আগে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ। “মোবাইল অ্যাপের পাশাপাশি বাজের আগাম পূর্বাভাস দিতে মাসখানেক আগে রাজ্য়ের তিন জায়গায় বসানো হয়েছে এলএলএন অর্থাৎ ‘লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক’।” জানিয়েছেন সঞ্জীববাবু। তাঁর কথায়, কলকাতার হাওয়া অফিস, দার্জিলিংয়ের বোস ইনস্টিটিউট এবং বীরভূমে এই বিশেষ সেন্সর বসেছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজ্য়ের আরও তিন জায়গায় তা বসানো হবে। প্রসঙ্গত পুণে আইআইটিএম-এর উদ্য়োগে ইতিমধ্য়েই দেশের ৪৮টি জায়গায় এই সেন্সর মোতায়েন হয়েছে। আরও ৩৫টি এলাকায় বসানোর পরিকল্পনা মজুত।
আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাস জানিয়েছেন, প্রতিবছর দেশে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের। সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। এর নেপথ্য়ে কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কিনা, সে বিষয়ে গণেশবাবু অবশ্য কিছু বলেননি। তবে হাওয়া অফিসের এক পরিসংখ্যান মোতাবেক, পূর্ব ভারতের মধ্য়ে কলকাতায় ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। ২০১৮ সালে সারা বছরে শহরে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ দিন, ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার। অথচ ২০১৩ সালের কলকাতা ঝড়-জল পেয়েছিল সাকুল্যে ১৮ দিন। কিন্তু সেবার ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার। ২০১২ সালে ঝড়ের সংখ্যা ছিল ২০। যার মধ্যে সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কালবৈশাখীর মেঘ খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়। তাই খুব আগেভাগে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে তিনধরনের বিপর্যয় ঘটে। ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রপাত। প্রতিবছরই বজ্রাঘাতে বেশ কিছু প্রাণ যায়। গত বছর দক্ষিণবঙ্গে বজ্রঘাতে মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্য়ে কলকাতার আশপাশেই বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন ১০ জন। গত বছর দক্ষিণ কলকাতায় খেলার মাঠে বাজ পড়ে এক উঠতি ক্রিকেটারের মৃত্য়ু হয়। ময়দানে বিয়ের বাজার করতে বেরিয়ে বজ্রাঘাতে জীবনান্ত হয় এক যুবকের, জখন হন তাঁর সঙ্গিনী।
বজ্রগর্ভ মেঘে তড়িতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতেই এত বেশি প্রাণহানি ঘটছে কিনা তা অবশ্য হলফ করে বলা যাচেছ না। তবে, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্ষা আসার আগে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের জেরে স্থানীয়ভাবে যে মেঘের সঞ্চার হয় তাতে ‘বিদ্যুৎ’ খুব বেশি থাকে। এই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার সময়ই ওই স্থির তড়িৎ পরিবর্তিত হয় বজ্রে। ঝড়বৃষ্টির এমন নানা রহস্যের উত্তর খোঁজার কাজ চলছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কালবৈশাখীর চরিত্র বুঝতে পারলে শুধু যে পূর্বাভাস ঠিকঠাক দেওয়া যাবে তা নয়, সমূহ বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে হাওয়া অফিসে বসানো রেডার, স্যাটেলাইট, ‘এলএলএন’-এর মতো আরও উন্নতি প্রযুক্তির যন্ত্র সঠিক এবং সাত-তাড়াতাড়ি ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সঞ্জীববাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.