ছবি: প্রতীকী।
অর্ণব আইচ: ‘গুগল’-এ লুকিয়ে জালিয়াতির ফাঁদ। শিকার ধরতে এই সার্চ ইঞ্জিনেই জাল পেতেছে ব্যাংক জালিয়াতরা। কয়েকটি ‘কপিং অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ঘনাচ্ছে বিপদ। ব্যাংক জালিয়াতরাও শিকার ধরার জন্য ওঁৎ পেতে রয়েছে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন শহরের প্রবীণরা। যদিও গোয়েন্দাদের মতে, প্রবীণরা ছাড়াও যে কেউই নিজের অজান্তে পড়তে পারেন জালিয়াতদের ফাঁদে। গার্ডেনরিচ, ট্যাংরা-সহ শহরের বেশ কিছু জায়গা থেকে এসেছে অভিযোগ। এবার বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক জালিয়াতি নিয়ে শহরের প্রবীণদেরও সতর্ক করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইন বিপণির মাধ্যমে কোনও সামগ্রী কেনার পর সেটি পালটাতে বা অনলাইন বিপণি সংস্থায় কোনও অভিযোগ জানাতে যাওয়ার সময়ই ফাঁদে পড়ছেন শহরবাসী তথা প্রবীণরাই। বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে লালবাজারের গোয়েন্দারা দেখেছেন, অনলাইন বিপণির মাধ্যমে কোনও পছন্দমতো জিনিস না পাওয়ার পর অভিযোগ জানানোর জন্য ‘গুগল’-এর মতো কিছু সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নেন প্রবীণরা। সেই সার্চ ইঞ্জিনে অনলাইন বিপণি সংস্থার নম্বর ভেসে উঠেছে। তাতেই ফোন করেছেন প্রবীণরা। কিন্তু তাঁরা জানতেও পারছেন না যে, ওই একই সংস্থার নামে ভুয়ো সংস্থা খুলে আপলোড করেছে জালিয়াতরা। আর গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে ভেসে উঠছে সেই জালিয়াতদের ফোন নম্বর। সেই নম্বরে ফোন করতেই জালিয়াত চক্রের এক সদস্য আশ্বাস দিয়েই বলছে, কোনও সমস্যা নেই।
তাঁর যখন অভিযোগ আছে, সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর পুরো টাকা ওই সংস্থার পক্ষে ফেরত দেওয়া হবে। এমনভাবে তারা কথা বলে যে বিশ্বাস না করার কোনও কারণ খুঁজে পান না তাঁরা। জালিয়াতরা তাঁদের বলে, কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গিয়েই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তাঁদের দু’টি অ্যাপ লোড করতে বলা হয়। কীভাবে তাঁরা লোড করবেন, সেই পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়। এরপর বলা হয়, তাঁদের মোবাইলে লিংক পাঠানো হচ্ছে। সেই লিংকে ক্লিক করলেই সমস্যার সমাধান হবে। গোয়েন্দারা দেখেছেন, সেই লিংকে তাঁরা ক্লিক করার পরই তাঁদের কাছে একটি ওটিপি যাচ্ছে। সেই ওটিপি ফের তাঁদের ফোন করে জেনে নিচ্ছে জালিয়াতরা। লালবাজারের গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ‘এনি ডেস্ক’ বা ‘টিম ভিউয়ার’-এর মতো অ্যাপ ডাউনলোড করার পর ওটিপি জেনে নিলেই ওই ব্যক্তির মোবাইলের ‘মিরর’ তৈরি করছে জালিয়াতরা। আয়নার মতোই ওই প্রবীণ মোবাইলে যা কাজ করছেন, সেই একই বস্তু নিজের মোবাইলে দেখতে পাচ্ছে জালিয়াতরা। তাঁর ব্যাংকের লেনদেন থেকে শুরু করে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত তারা জেনে যাচ্ছে।
একই সঙ্গে একটি ওয়ালেট অ্যাপও ডাউনলোড করানো হচ্ছে। ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রবীণদের টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও করে দেয় জালিয়াতরা। সেই কারণেই লালবাজারের গোয়েন্দারা শহরের বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করছেন, তাঁরা যাতে অনলাইন বিপণীর আসল নম্বরের খোঁজ করে তাতেই ফোন করেন। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে যেহেতু ফাঁদ পাতা রয়েছে, তাই সেই ফাঁদে যেন তাঁরা পা না দেন। কেউ কোন লিংক পাঠালে তাতে যেন কোনমতেই তাঁরা ক্লিক না করেন। আর যদিও বা ভুলবশত করে ফেলেন তা হলেও তাঁরা যেন কোনও ওটিপি কাউকে না জানান। কারণ ওটিপি জানামাত্রই তাঁদের অজ্ঞাতেই মোবাইলের প্রত্যেকটি তথ্য এসে যাবে জালিয়াতদের হাতে। এছাড়াও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পেনশন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রবীণদের প্রতারণা করছে একটি চক্র। তারা বলছে একটি বিশেষ স্কিমে তাঁর পেনশনের টাকা পড়ে রয়েছে। সেই টাকা পেতে গেলে প্রসেসিং ফি লাগবে। শহরের বেশ কিছু প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী ও আধিকারিক সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রসেসিং ফি নেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতরা।
এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানিয়েছেন, এমনও দেখা গিয়েছে যে ২৫ লক্ষ টাকা পেনশন দেওয়ার নাম করে এক বৃদ্ধ’র কাছ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ ছাড়াও চেক জালিয়াতির ব্যাপারে সাবধান করছেন গোয়েন্দারা। দক্ষিণ কলকাতার একাধিক ঘটনায় ফিল্টার পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একশো টাকার চেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। আগে ও পরে ইচ্ছামত সংখ্যা বসিয়ে সেই টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারকরা। এই বিষয়গুলিতে জালিয়াতের হাত থেকে শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.