ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: দেশের প্রথম স্পেস থিয়েটারে বসে হয় মহাজাগতিক দৃশ্য, না হয় সমুদ্রের তলার রঙিন দুনিয়া। আবার কখনও আকাশ গ্রহ তারা জন্মের গল্প। ঘরবন্দি মানুষের একঘেয়েমি কাটাতে এবার সেই সব দেখা আর শোনার সুযোগ ঘরেই নিয়ে আসছে সায়েন্স সিটি। সায়েন্স সিটির নানা শো, তার আর্ট গ্যালারির সম্পদ নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে হাজির হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। অধিকর্তা শুভব্রত চৌধুরির কথায়, “এতদিন মানুষ সায়েন্স সিটিতে আসত। এখন সায়েন্স সিটি যাবে মানুষের কাছে।” তবে শুরুটা নিছক বিজ্ঞান আর কিছু রঙিন দুনিয়ার গল্প বলে শুরু করলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য অন্য। রঙিন স্বপ্ন থেকেই বাস্তবের মাটিতে পা রাখবে সায়েন্স সিটি।
অধিকর্তা জানাচ্ছেন, কোভিডের উপর একটা ছোট প্রদর্শনী হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন এর প্রকোপ সেভাবে ছড়ায়নি। এখন তা মহামারি রূপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে হতাশা চেপে বসছে। এই বিষয়টাকে মাথায় রেখে অনলাইনে তার সুরাহা বাতলে দেওয়া হবে। থাকবে কোভিডের একাধিক আপডেট। প্রত্যেক সপ্তাহে দেশ ও গোটা বিশ্বের ছবি সেখানে বদলে বদলে যাবে। রাজ্যে কী পরিস্থিতি থাকবে তার সবটাও। শুভব্রতবাবুর কথায়, “মানুষের মনোবল অনেকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যারা বিজ্ঞানকে ভালোবাসেন সায়েন্স সিটি বা মিউজিয়াম ঘুরে নানা জিনিস দেখতে পছন্দ করেন তাদের সেই বিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
রোজ যে সায়েন্স সিটিতে কম করে হাজার দু’-এক মানুষের পা পড়ত, তার সবটা এখন উধাও। কিছুদিন পরেই ইদ। সেই সময় সংখ্যাটা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। শুনশান সায়েন্স সিটি কি তবে পরবর্তী সময় বিজ্ঞান অনুগ্রাহী হারানোর আশঙ্কা করছে? “মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তো তৈরি হয়েইছে। সেটা সহজে কাটবে না।”— মত শুভব্রতবাবুর। তাঁর কথায়, এই কঠিন সময়েই বিজ্ঞান দিয়ে ভয়কে জয় করতে হবে। বলছেন, “সেই কারণেই একটা সুদূর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। লকডাউনের পরেই তো আসল চ্যালেঞ্জ। মানুষ চট করে রাস্তায় বেরতে ভয় পাবে। সায়েন্স সিটি বা মিউজিয়াম কোথাও যেতে দু’বার ভাববে। সেই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের উপর, বাস্তব জীবনের উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ানোর এটাই আদর্শ সময়।” সেই কারণেই পরিবর্তিত পরিস্থতি বিচার করে আগামী তিন থেকে ছ’ মাসের হিসেব কষে নেওয়া হয়েছে। ওই সময়টার মধ্যেই মানুষকে বোঝাতে হবে কীভাবে তারা হতাশা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। রাস্তায় বের হবেন কোন নিয়ম মেনে। তারপর একটা সময় যখন আবার সায়েন্স সিটি আসবেন, ততদিনে মানুষ অনেকটাই সতর্ক। আর সায়েন্স সিটিও নিরাপদ। সেখানে সকলে চাইলে আসতে পারেন।
কিন্তু সায়েন্স সিটি কি সত্যিই তার ও তার পর্যটকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর কাজ করছে? “অবশ্যই করছে”— অধিকর্তা বলছেন, আমাদের স্পেস থিয়েটারে ৩৬০টি বসার আসন। করোনা পরবর্তী সময় সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে সকলকে বসানো হবে। কম করে একটি করে আসন ছেড়ে বসতে হবে সকলকে। আসন সংখ্যা কমে যাবে। প্রতিদিন যে শো হয় তার সংখ্যা কমবে। ৪০ মিনিট পরপর একটি শো শেষ করেই দ্বিতীয়টি শুরু করতে হয়। তা করা যাবে না। একটি শো শেষ করে গোটা হল স্যানিটাইজ করে তারপর পরের শো হবে। সর্বোপরি সায়েন্স সিটিতে ঢোকার মুখেই রাখা থাকবে স্যানিটাইজার। এই কদিন মানুষের মধ্যে নিজেদের জীবাণুমুক্ত রাখার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছে সেই অভ্যাস মতোই গেট পেরোতে হবে স্যানিটাইজার হাতে মেখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.