অর্ণব আইচ: সামান্য এক টুকরো ব্ল্যাক বা গ্রিন টেপ। মোবাইলে তা লাগিয়েই রোধ করা যেতে পারে ‘সেক্সটরশন’-এর মতো বড় ধরনের সাইবার অপরাধ। এমনই দাবি তুলে শহরবাসীকে সতর্ক করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ আধিকারিকরাও।
পুলিশ জানিয়েছে, অশ্লীল ভিডিও কল করে ব্ল্যাকমেল বা ‘সেক্সটরশন’-এর সংখ্যা বাড়ছে। লালবাজারের মত, কলকাতায় সাইবার অপরাধের মধ্যে বড় সংখ্যকই ‘সেক্সটরশন’। প্রথমে রাজস্থানের ভরতপুর গ্যাং এই কাজ করলেও ক্রমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের সাইবার অপরাধ হচ্ছে। এমনকী, কলকাতার এক কলেজছাত্রও গ্রেফতার হয়েছে এই সাইবার অপরাধের অভিযোগে। আবার বিভিন্ন স্তরের মানুষও শিকার হচ্ছেন ‘সেক্সটরশন’-এর। পাঁচ বা দশ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত খোয়া যাচ্ছে অনেকের। এখন প্রত্যেক মাসে গড়ে ২০টি এই ধরনের সাইবার অপরাধের মামলা দায়ের হলেও অনেকেই লজ্জায় যে অভিযোগ দায়ের করেন না, সেই তথ্যও এসেছে লালবাজারের কাছে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এক বণিকসভার কর্মকর্তাও জানান যে, তিনি নিজেই ‘সেক্সটরশন’-এর শিকার হয়েছেন। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, এখন ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকেই অস্ত্র করছে সাইবার অপরাধীরা। তারা বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাচ্ছে অনেককেই। সুন্দরী যুবতীর ছবি দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন বন্ধুত্ব করতে। সাধারণ কিছু চ্যাট হওয়ার পর আদানপ্রদান হচ্ছে মোবাইল নম্বরের। এর পরই শুরু হচ্ছে ভিডিও কল। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকে যোগাযোগ না হওয়া সত্ত্বেও ভিডিও কল করা হয়। সারা স্ক্রিনজুড়ে এক মহিলার অশ্লীল ভিডিও দেখা যায়। সেই ভিডিওর একটি ‘উইনডো’য় দেখা যায় সাইবার অপরাধের ‘শিকার’ ওই ব্যক্তিকে। সেই ভিডিও রেকর্ড করে তাঁকে ফোন করতে থাকে সাইবার অপরাধীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের কোনও পুলিশকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়।
এমনকী, ট্রু কলারেও ‘পুলিশ’ ভেসে ওঠে। হোয়াটস অ্যাপের ডিপিতে থাকে কোনও বড় শহরের পুলিশকর্তার ছবি। তাঁর নাম করেই গ্রেপ্তারির হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। অনেকেই টাকা দিয়ে দেন। এর আগে এই ধরনের অপরাধ রুখতে পুলিশকর্তারা বহুবারই বলেছেন, কেউ যদি ভিডিওকল ধরেও ফেলেন, তবে যারা ফোন করছে, তাদের এড়িয়ে গেলেই হবে। তবু অনেকে ভয় পেয়েই সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পা দেন। এবার সাইবার বিশেষজ্ঞ ও পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, সামান্য একটি ব্ল্যাক বা গ্রিন টেপের টুকরোই রুখে দিতে পারে ওই অপরাধ। তার জন্য নিজের মোবাইলের ব্যাক ক্যামেরা ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করলেই হবে।
আর ফ্রন্ট ক্যামেরা, যেটি দিয়ে সাধারণত সেলফি তোলা হয়, সেটিকে আটকে দেওয়া যেতে পারে ব্ল্যাক বা গ্রিন টেপের একটি টুকরো দিয়ে। কখনও সেল্ফি তোলার প্রয়োজন হলে সেটি খুলে নেওয়া যেতে পারে। সাধারণত অশ্লীল ভিডিও পাঠানোর পর ফ্রন্ট ক্যামেরায় ওঠে ‘শিকার’-এর ভিডিও, যা দেখে পরে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয়। কিন্তু ফ্রন্ট ক্যামেরা টেপ দিয়ে আটকানো থাকলে যাঁকে ভিডিও পাঠানো হচ্ছে, তিনি সেটি দেখতে পারবেন, কিন্তু তাঁকে সাইবার অপরাধীরা দেখতে পাবে না। এভাবে বারবার ধাক্কা খেয়ে ব্ল্যাকমেল করার সুযোগ আর না পাওয়ার ফলে আর ভিডিও কল করবে না সাইবার অপরাধীরা। তাতেই এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.