নিরুফা খাতুন: অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে টেলিগ্রামে যোগদান করানো হচ্ছে। টেলিগ্রাম থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। আর এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন মূলত চাকরিজীবী ও উপার্জনকারীরা। সাইবার প্রতারকদের প্রলোভনে পড়ে জমানো পুঁজিও খুইয়ে ফেলছেন তাঁরা।
সেক্সটরশন, হোটেল বুকিং, বিদ্যুৎ বিল মেটানো, কেওয়াইসি আপডেটের নামে নাগরিকদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ফাঁকা করা সাইবার অপরাধীদের পুরনো পন্থা। এক্ষেত্রে তাঁদের নিশানায় থাকত মধ্যবয়স্ক ও প্রবীণ নাগরিকরা। বিদ্যুৎ বিল মেটানো, কেওয়াইসি আপডেটের নামে প্রতারকরা প্রবীণদের ফাঁদে ফেলে থাকে। কারণ তাঁরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকেন। সেজন্য সাইবার অপরাধীদের কাজ হাসিল করতে সুবিধা হয়।
ইদানীং অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চাকরিজীবী, উপার্জনকারীদের নিশানা করেছে প্রতারকরা। অফিস সামলে যদি বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকে তা হলে কেই-বা চাইবে সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে। তার উপর লকডাউনে অনেক মানুষের আয় কমে গিয়েছে। মোটা টাকার চাকরি হারিয়ে কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যও মন্দা। যে কারণে অনেকেই বাড়তি আয়ের উপায় খুঁজতে থাকেন। সেই সুযোগে অনলাইনে বাড়তি আয়ের প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা চক্র খুলে বসেছে অপরাধীরা। আর সেই চক্রে পা দিয়ে শহরের বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বেকার যুবক-যুবতী, পড়ুয়ারা এদের ফাঁদে পড়ছে না।
কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের এক আধিকারিক জানান, হোটেল বুকিং, বিদ্যুৎ বিল মেটানো, কেওয়াইসি আপডেট নামে ওটিপি শেয়ার এগুলি নিয়ে এখন মানুষ অনেকটা সচেতন হয়েছে। যে কারণে এই ধরনের প্রতারণা অনেকটা কমেছে। এখন টেলিগ্রামের মাধ্যমে রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছে প্রতারকরা। এদের নিশানায় বেকার, স্কুল, কলেজ পড়ুয়ারা নন। যাঁরা চাকরি করেন কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে তাঁরাই এই প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ছেন। কীভাবে তাঁদের এই ফাঁদে ফেলা হচ্ছে? ওই আধিকারিক জানান, অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের নামে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথমে লিঙ্ক পাঠানো হয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন পোস্ট, ইউটিউবে ভিডিও এইসব লাইক, শেয়ার, কমেন্ট করা, হোটেল, রিসর্ট এসবের রেটিং বাড়ানোর টাস্ক দেওয়া হয়। প্রতিটি পোস্ট, ভিডিও লাইক, শেয়ারের পিছনে টাকা দেওয়া হয়। লিঙ্কে যোগ দেওয়ার পর প্রথমদিকে প্রতারকরা টাস্কের টাকা দিতে থাকে। এক-দুমাস পর তাঁদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি হিসাবে কেউ কেউ এক হাজার কিংবা দু হাজার টাকা নিয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশনের পরও কিছুদিন টাস্কের টাকা পাওয়া যায়। এরপর প্রতারকরা তাঁদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগদান করায়। এই টেলিগ্রামে থাকে আসল ফাঁদপাতা। সেই ফাঁদে পা দিতেই প্রতারকদের জালে জড়িয়ে পড়েন। অনলাইনে আয় করা টাকা টেলিগ্রামের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় প্রতারকরা। এখানে বিনিয়োগ করলে স্বল্প সময়ে মোটা টাকা সুদ মিলবে, এই প্রলোভন দেখানো হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.