সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখের ভাষা, স্বাধীনতার ভাষা। সেই প্রাণের ভাষার শব্দ, হরফ আঙুলে কলম নিয়ে সাদা পাতায় লেখা থেকে কম্পিউটারের পর্দায় কিবোর্ডে লেখার স্বাধীনতাও আছে বইকি এই ডিজিটাল যুগে। খাতায়, কলমে লেখার বদলে এখন গ্যাজেটে লেখা অধিক সুবিধাজনক। কিন্তু কম্পিউটার কি ইংরাজি ছাড়া কোনও ভাষা বুঝতে পারবে? এই দোলাচলে ভুগছিলেন অনেক বাঙালিই। ভাবনা থেকে বাঙালিকে মুক্ত করেছিল – অভ্র। কিবোর্ডে একটু চাপেই কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠছে মুক্তাক্ষর – অ, আ, ক, খ…আহা! দেখে কী আরাম, কী স্বস্তি! অনেকেই ভেবেছিলেন, এমন অসাধ্য সাধন করে ফেলা মানুষটি কে? উত্তরটা এসেছিল পদ্মার পাড় থেকে। ডিজিটাল যুগে দিকে দিকে বাংলা হরফ ছড়িয়ে দিতে ডাক্তার ছাত্র মেহেদি হাসান খান তৈরি করেছেন সফটওয়্যার – অভ্র। কিন্তু বাংলা অক্ষরকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এনে ফেলা অভ্র-আবিষ্কর্তার খোঁজ আর ক’জন বাঙালিই বা রেখেছেন? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলার অন্যতম গর্ব মেহেদি হাসানের কাহিনি একবার মনে করা যাক।
বাংলাদেশের ছেলে মেহেদি হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারির ছাত্র ছিলেন। পড়ার সময় থেকে তাঁর মাথায় আসে কম্পিউটারে বাংলা অক্ষর লেখার চিন্তা। অনেক ভাবনার পর প্রায় আর্কিমিডিসের কায়দায় ‘পেয়ে গেছি’ বলা মেহেদি হাসান সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনি এমন একটা উপায় বের করতে চেয়েছেন, যাতে কিবোর্ডে ইংরাজি অক্ষরগুলোই সাজিয়েগুছিয়ে একটি জ্বলজ্বলে বাংলা শব্দ তৈরি করবে। সেইমতো সফটওয়ার তৈরির কাজে হাত দেন। সেসময় আশেপাশের মানুষজন মেহেদির এই ‘খ্যাপামি’ দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। মেডিক্যাল কলেজ থেকেই বলা হচ্ছিল – ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিতে। কিন্তু এসবে কর্ণপাতও করেননি প্রতিভাবান আবিষ্কারমুখী তরুণটি। তাঁর দীর্ঘ পরিশ্রম, গবেষণার ফল আমরা পেয়েছি। সাধারণ মানুষ থেকে অফিসের কর্মী, আধিকারিক সকলেই স্বচ্ছন্দ্য অভ্রর মাধ্যমে কাজ করতে। শুধু সফটওয়ার উপহার দিয়েই থেমে থাকেননি মেহেদি। তৈরি করেছেন ক্যাচলাইন – ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা এটাই, যে কোনও সফটওয়ারই এই অভ্র বুঝতে সক্ষম। তাই এর গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তাও সর্বাধিক।
অমর একুশে আমাদের হৃদয়ের মাঝে, প্রাণের মাঝে। অভ্রর দৌলতে আজ সুদূর তানজানিয়া থেকে রাশিয়া, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে বসে বাঙালি প্রিয়তমাকে মনের কথা জানাতে পারেন খাঁটি বাংলা ভাষায় লিখে। সে দূরত্ব মুছে দিয়েছেন মেহেদি হাসান খান। যাঁর হাত ধরে বিশ্বব্যপী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা ভাষা, অভ্রর জনক সেই মেহেদি হাসান কিন্তু আজ বিস্মৃতপ্রায়। অভ্র আবিষ্কর্তার না আছে কোনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, না বিশেষ অর্থপ্রাপ্তি। অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেন ডাক্তার মেহেদি হাসান খান। শুধু নিজের পরিশ্রমের ফসলকে এভাবে ছড়িয়ে পড়তে দেখেই তিনি পরম শান্তিতে দিন কাটান। তাই আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে মেহেদি হাসানও ততটাই কৃতিত্বের দাবিদার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.