সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : বিবাহবিচ্ছেদ মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। হ্যাঁ, অবাক হলেও গবেষণা অন্তত তাই বলছে। কেন না বিবাহবিচ্ছেদ যেমন একজনকে স্বস্তির অবকাশ দেয়, তেমনই অন্যজনকে অবসাদগ্রস্ত করতে পারে। দ্বিতীয়জনের যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তাহলে তা মাত্রাছাড়া হতে সময় নেবে না। অবসাদ কাটাতে ধূমপানের মধ্যেই আশ্রয় খুঁজবেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। কেউ বাধা দেওয়ার নেই, তাই শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও ডাক্তার দেখানোর ঝক্কি নিতেও মন চাইবে না। দিব্যি তো চলছে, আবার ডাক্তারের ঝামেলা করে কী লাভ! সুতরাং একদিকে ধূমপানের মতো মারণ নেশা অন্যদিকে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার অনীহা। দুটো মিলে গঙ্গাপ্রাপ্তি কিন্তু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এদিকে বিচ্ছেদে যিনি খুশি হয়েছিলেন, তাঁর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনিও ধূমপায়ী। হয়তো সারা দিনে দুচারটি চলত। বিয়ের পাট চুকিয়ে দিয়ে তাঁর আনন্দের সীমা নেই। তাই উদযাপন তো করতেই হবে। বন্ধুবান্ধবদের ডেকে তো আর পার্টি দেওয়া যায় না। তাতে সামনে না হাসলেও পিছনে কিন্তু হাসির ফোয়ারা ছুটবে। তার থেকে চলো একাই উদযাপন করা যাক। হাতের কাছে সিগারেট থাকলে তাই-ই সই। প্রথমে উদযাপনের আনন্দে ধূমপান। সময় যত গড়াবে উদযাপন যেন নিশির ডাকের মতে পেয়ে বসে। তখন এহেন সিদ্ধান্তের কাটাছেঁড়া করার সময় এসে গিয়েছে। বিয়ে ভেঙে দু’জনের মধ্যে কে বেশি লাভবান হল? কে বেশি ভাল আছে? ইগোর লড়াই। তাই পরস্পর পরস্পরের খোঁজখবর করে তো আর সেই সংবাদ নিতে পারেন না। তাই আধপোড়া সিগারেটে ভরে ওঠে অ্যাশট্রে। উপচে পড়ে ছাই। ধূম্রজাল কাটিয়ে শোওয়ার ঘর লাগোয়া ব্যালকনিও তখন দৃশ্যমানতা থেকে অনেকটাই দূরে। এইভাবে ফুসফুসও ধোঁয়ার জালে বিদ্ধ হতে থাকে। নিত্যদিনের এহেন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর দিকেই পায়ে পায়ে এগিয়ে চলে ডিভোর্সি আপাত শান্ত মানুষটি। কোনও কঠিন রোগ থাকলে ওষুধ খাওয়ারও বালাই নেই। কেউ তাড়া দিয়ে ওষুধ খাওয়াবে তাও নেই। তাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়াটাও অনেক সহজ। তাই গবেষকদের মতে, বিবাহবিচ্ছেদের পর মৃত্যুর সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
যদি জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীকে ছেড়ে থাকার পরিকল্পনা করেই নেন, তাহলে আগেই ধূমপানের অভ্যাসকে হেলায় হারাতে হবে। শারীরিক অসুস্থতা থাকলে নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা রাখুন। যাতে বিচ্ছেদের পর মুষড়ে পড়ে ওষুধ বন্ধ না করতে হয়। এই সিদ্ধান্তের একটু এদিকওদিক হলেই কিন্তু অবসাদ গ্রাস করতে পারে। তাহলে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া পাঁচ হাজার ৭৮৬জনের উপরে এই পরীক্ষানীরিক্ষা চালান। গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯২৬ জন হয় দ্বিতীয় বিয়ে করেননি বা একাই থাকেন। এই একাকী মানুষগুলি নিজেদের মতো করে সন্তুষ্টি খুঁজে নিয়েছেন। কেউ বা সিগারেটে বুঁদ হয়েছেন। কেউ স্বাস্থ্য সচেতনতা ভুলে যা পারছেন খেয়ে চলেছেন। এর জেরে পুরোনো রোগ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ২০০২ থেকে শুরু করা গবেষণা শেষের আগেই প্রায় ৫০জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা এই অনিয়মের তালিকার একদম প্রথম সারিতে ছিলেন। তাই বোঝাই যাচ্ছে স্বামী স্ত্রীর একজন ধূমপায়ী হলেও অন্যজন স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন। তাই ধূমপায়ী স্বামী বা স্ত্রীকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব ছিল অন্যজনের ঘাড়ে। দু’জন আলাদা হতেই সেই দায়ও নেই ধূমপানও বাগ মানে না। গুটিগুটি মত্যু এগোয় ইপ্সিত লক্ষ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.