সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আঙুলের এক ছোঁয়ায় মুশকিল আসান ঘটিয়ে রাজ্যের মুকুটে নয়া পালক। সামাজিক সুরক্ষা থেকে অপরাধ দমন। সেই সঙ্গে বুনো হাতি সহ বন্যপ্রাণদের গতিবিধি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কর্মসংস্থানে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে শূন্য পদ-সহ কাজের সুযোগের তথ্য। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা এমনকী ট্রাফিক সচেতনতা, দুর্ঘটনা রোখা, পর্যটনের তথ্যতালাশ-সহ কৃষিকাজে পরামর্শ। যাবতীয় বিষয়ের সুলুকসন্ধান দিয়ে জঙ্গলমহলে চলমান জীবনের ‘গাইড বুক’ হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের অ্যাপ ‘সহায়’। এবার সেই অ্যাপই পাচ্ছে স্কচ অ্যাওয়ার্ড।
আগামী শনিবার ১৩ জুলাই দিল্লিতে (New Delhi) এই পুরস্কার নেওয়ার জন্য ওই সংস্থার তরফে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নিউ দিল্লির লোধি রোডে ইন্ডিয়া হেবিটেট সেন্টারের সিলভার ওক হলে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পুরস্কার প্রদানে সম্মান জানানো হবে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুরস্কার গ্রহণে বিধি মেনে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় অনুমতি চেয়ে পাঠিয়েছে পুরুলিয়া (Purulia) জেলা পুলিশ। এনিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “স্কচ অ্যাওয়ার্ডের স্বীকৃতি হিসাবে আমরা চিঠি পেয়েছি। এই অ্যাপের (App)ব্যবহারের ব্যাপ্তি যাতে আরও বাড়ানো যায় নানাভাবে সেই প্রয়াস আমাদের চলছে।”
এর আগে একাধিক বিভাগে স্কচ পুরস্কার (SKOCH Award) পেয়েছে রাজ্য। অর্থ, পর্যটন, নারী ও শিশু কল্যাণ, শিক্ষা, শিল্প, বনদপ্তর, মাদ্রাসা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবহণ, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, ক্ষুদ্র ছোট এবং মাঝারি দপ্তর-সহ কলকাতা পুলিশ, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই পুরস্কার পায়। তবে জেলায় পুলিশের ক্ষেত্রে এই সম্মান এই প্রথম। সমাজ জীবনের সুরক্ষায় এই অ্যাপ শুধু পুরুলিয়ার মানুষজনই নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড (Android) মোবাইলে ডাউনলোড করেছেন, এমন নয়। এই জেলায় বেড়াতে আসা পর্যটক থেকে কাজের জন্য আসা মানুষজনও এই অ্যাপ ডাউনলোড করে পরিষেবা পাচ্ছেন। যার সংখ্যাটা ১৫ হাজারের বেশি। এই জেলার নিরিখে সক্রিয় ইউজারের (Active Users) সংখ্যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৮ হাজার ২৩৩ জন। রেজিস্ট্রেশন করেছেন জেলার ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭২৭ জন।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এই জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। একটি পরিবারে গড়ে পাঁচ থেকে ছ’জন রয়েছে। সেই নিরিখে একটি মোবাইল থেকে ৫-৬ জন সুবিধা পান। অর্থাৎ সেই বিচারে জেলার সমস্ত মানুষই এই অ্যাপ থেকে পরিষেবা পাচ্ছেন বলে তাদের দাবি। ‘সহায়’ পরিষেবা পেতে গত দেড় বছরে এখনও পর্যন্ত আবেদন জানানো হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে ৯৫৭টি উল্লেখযোগ্য। যার মধ্য দিয়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়া মানুষজনকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার মধ্য দিয়ে জীবন বাঁচানো গিয়েছে। আটকানো গিয়েছে সম্পত্তি লুট। সেইসঙ্গে রুখে দেওয়া গিয়েছে অপহরণ, গোষ্ঠী সংঘর্ষ এমনকি জঙ্গলে আগুন নেভানোও।
এই অ্যাপে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কর্মসংস্থান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে নোটিফিকেশন একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। যারা এই অ্যাপ ব্যবহার করে পুলিশকে উল্লেখযোগ্য কাজের সফলতা এনে দিয়েছে, তাদের আলাদাভাবে সম্মাননা প্রদান করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। যেমন গত বছর কালবৈশাখীর সময় বরাবাজারে বজ্রপাতে জখম হয়েছিলেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থা ছিল অনেকেরই। এর মধ্যে দুজন মারা গেলেও ওই অ্যাপে পুলিশ খবর পাওয়ায় বাকিদের বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই অ্যাপ পথ চলা শুরু করে। এর বর্ষপূর্তিতেতে এই অ্যাপ আরও ছড়িয়ে দিতে ফুটবল টুর্নামেন্টও শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই ফাইনাল।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল প্লে স্টোরে ‘সহায়, পুরুলিয়া জেলা পুলিশ’ টাইপ করলেই সহজে ডাউনলোড (Download) হয়ে যাবে। রেজিস্টার করতে হবে নাম, মোবাইল নম্বর বাড়ির ঠিকানা-সহ কয়েকটি তথ্য। অ্যাপের এসওএস বাটনে স্পর্শ করলেই জরুরিকালীন ভিত্তিতে পুলিশি সহায়তা চাওয়ার অপশন আসবে। কম খরচে তৈরি হওয়া এই অ্যাপ ব্যক্তিগত প্রয়োজন থেকে সমাজের বৃহৎ কাজে জঙ্গলমহলের মানুষজনের সহায়ক হয়ে ওঠার জন্যই জাতীয় পুরস্কারের বিশেষ স্বীকৃতি, সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে এমনই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.