অভিরূপ দাস: বড় হয়েছি, রোজগার করছি। না হয় বাড়িতেই আছি, তাই বলে বড়দের শাসন মেনে চলতে হবে?
অতএব বিচ্ছেদ। পারিবারিক সামাজিক বিধি নিষেধকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে নিজের মা-বাবাকেই ‘ডিভোর্স’ দিয়ে আলাদা ঠাঁই গাড়ছেন অনেক ‘স্বাবলম্বী ও স্বাধীনচেতা’ ছেলেমেয়ে। কেতাবি পরিভাষায় যাকে বলে ‘ইমানসিপেশন।’ অর্থাৎ মা-বাবাকে ত্যাগ করা। অতি সম্প্রতি উঠতি অভিনেত্রী পল্লবী দের মৃত্যুর পর আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এই শব্দবন্ধ।
মা-বাবাকে ছেড়ে গড়ফার ফ্ল্যাটে আলাদা থাকতেন যে পল্লবীও। সমাজতাত্ত্বিকরা বলছেন, নাড়ির বন্ধন কেটে বেপরোয়া জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন আধুনিক তরুণ-তরুণীদের একাংশ। এমন নয় যে সবাই বিত্তবান। অনেকেরই ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবার। টেনেটুনে চলা সংসার। গুণেগুণে হাত খরচ দিতেন মা-বাবা। নিয়ম কানুনের মধ্যে বেড়ে ওঠা মেয়েটাই অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠে প্রথম রোজগার করে। সোপ অপেরা জগতে এসে একটা দুটো সিরিয়াল করেই পাখনা গজায় তাঁর। টেলি জগতের পরিচালকরা পই পই করে বলছেন, কোনওরকমে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হয়েই আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়াচ্ছে বিপদ। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ইদানিংকালে এটা একটা অদ্ভুত চল হয়েছে। এই প্রজন্মের অনেকেই বলে ‘স্পেস’ চাই।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্পেস বা আলাদা থাকার প্রয়োজনটা কীসের? অভিনেত্রী প্রত্যুষা পাল সোজাসাপটা জানিয়েছেন, দিনে দশ-বারো ঘন্টা শুটিং হয়। শুটিং শেষে পাবে গিয়ে একটা দুটো বিয়ার খাওয়া, একটু নাইট ক্লাবে হুল্লোড় করতে যান অনেকেই। বাড়িতে অভিভাবকদের সঙ্গে থেকে এটা সম্ভব নয়।
তবে এই ‘স্পেস’ বা নিজের মতো করে থাকার ইচ্ছে কি বিপদ বাড়াচ্ছে? মনোবিদ দোলা মজুমদারের কথায়, এই চাকচিক্যের জগতে এসেই ছেলেমেয়েরা পুরনো লাইফস্টাইলটা আর মেনে নিতে পারে না। রাতভর পার্টি, সারারাত ধরে হুল্লোড়, মোচ্ছব এসব তো বাড়িতে হয় না। এই জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি অথবা মেয়েটির ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়ে যায়। ‘পার্সোনালিটি’ প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুকরণ করতে চেষ্টা করে। আঠেরো থেকে পঁচিশ এই বয়সটায় তাঁরা একটুতেই ইমপালসিভ বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। বাস্তব বুদ্ধিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। দুরন্ত জীবনযাপন করতে গিয়ে বিপদে পড়ে ছেলেটি অথবা মেয়েটি। মনোবিদের কথায়, এতদিন সমস্যা হালকা করে দিত মা-বাবা। আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু একাকীত্বে হতাশা তাঁকে গ্রাস করে। সেখান থেকেই আসে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.