Advertisement
Advertisement

Breaking News

Saraswati Puja

Saraswati Puja 2022: সরস্বতী পুজো মানে ভানুমতী কা খেল!

গতকাল গভীর রাতে যুগান্তকারী কাণ্ড ঘটিয়েছে কনুইদা। প্রেমে পড়েছে। এফবি-র মাধ্যমে।

special-story-on-saraswati-puja | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:February 4, 2022 8:56 pm
  • Updated:February 5, 2022 8:19 am  

সরস্বতী পুজো মানে রাত জেগে প্যান্ডেল, সরস্বতী পুজো মানে বাঙালি প্রেম। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র চেয়ে ঢের ভাল। সরস্বতী পুজো একাধারে পবিত্র আনন্দ আর মিষ্টি দুষ্টুমির দিনও বটে। সেই বঙ্গীয় রম্যকথার ধারাবিবরণী দিলেন কিশোর ঘোষ।  

কনুইদা বলল, ‘হাওয়া নেই অথচ ঝোপে ঝড় উঠেছে। বল কী?’
আমি বললাম, ‘ভূত।’
কনুইদা বলল, ‘গাধা!’
আমি বাধ্য হয়ে বললাম, ‘তুমি বলো।’
কনুইদা ফ্যাচ ফ্যাচ করে হেসে বলল, ‘ওরে… সরস্বতী পুজো।’
আমি বিরাট অবাক খেয়ে বললাম, ‘সে কী!’ তারপর বললাম, ‘বুঝেছি, বুঝেছি। তুমি গুরু পিওর নোংরা জিনিস!’
‘এর মধ্যে নোংরামির কী দেখলি? বরং রিয়্যালিটি। জিনিসটাকে আমি ক্রিয়েটিভ অ্যাঙ্গেলে প্রেজেন্ট করলাম। ভেবে দ্যাখ—রাত না, ভরদুপুরে হাওয়া ছাড়াই বেকায়দা ঝড়! গোটা রাজ্যের পার্কে, ময়দানে, উদ্যানে। নদীর ধারে, পুকুর পাড়ে। এমনকী ধান-আখ-পাটখেত পর্যন্ত শিহরিত কম্পনে! কচুবন অবধি কেঁপে কুল পাচ্ছে না! পুরো ম্যাজিক!’
কনুইদার অমৃতবাণী গীতা সমান। উৎসাহ জোগাতে বললাম, ‘গুরু, তুমি ছাড়া কেউ এভাবে ভাবতে পারবে না।’
কনুইদা আমার দিকে দার্শনিক দৃষ্টি দিয়ে বলল, ‘ভুল বলছি? ম্যাজিক নয়? গতকাল যে ছেলের ফাটা টায়ার কেনার মুরোদ ছিল না, সে-ই দেখবি সরস্বতী পুজোর দিন মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে ঘুরছে। বিড়ি ফুঁকে ফুঁকে যার ঠোঁট ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে গেছে, সে-ই আগামিকাল ট্রিপল ফাইভ ছাড়া ধোঁয়া ছাড়ছে না। তারপর ধর মা-বাপ জানে মেয়ে যাচ্ছে বেলুর মঠ, ওদিকে তিনি সাজুগুজু করে সেন্ট্রাল পার্কে।
বললাম, ‘গ্রেট অবজারভেশন। জিনিয়াসের চোখ!’
কনুইদা বলল, ‘এফবিতে এই মর্মে একটা পোস্ট ঝাড়লে কত লাইক পাব জানিস!’
আমি হাত থেকে ফোনটাকে পকেটে চালান করতে করতে সম্মতি জানালাম, ‘বটেই তো।’

Advertisement

সরস্বতী পুজোর আগের রাতে কথা হচ্ছিল। থার্মোকলের মন্দির-মসজিদ-গির্জা প্যান্ডেল বাঁধতে বাঁধতে। পুজো হচ্ছে কনুইদার উৎসাহে। মাধ্যমিক ফেল হাড়গিলে কনুইদা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। ছেলেবেলা থেকেই বাগদেবীর বন্দনা করে আসছে। কিন্তু ব্যাড ল্যাক—পরীক্ষার খাতায় তার ছাপ পড়েনি। এর উপর ওর বিয়ের শখ ছেলেবেলার। কিন্তু না হয়েছে বিয়ে, না জুটেছে প্রেম। তা বলে মালটাল খেয়ে দেবদাস বনে যায়নি। বরং ফুল প্যাশনে থাকে। সব বিষয়ে। অতএব এই মহান আত্মার চ্যালা না হয়ে আমি পারিনি। কনুইদা যেখানে আছে, আমিও সেখানে আছি। নচেৎ এই আমাদের জেনের ‘সরস্বতী বন্দনা’র কায়দা আলাদা।

এই আমরা, যাদের সদ্য স্কুল ফুরিয়েছে। কলেজে ঢুকে পড়েছি। অতএব, লেজ গজিয়েছে। কথায় আছে, বলে ক-লেজ, মানে ক’টা লেজ। ফলে হাওয়া ছাড়াই ঝোপ-ঝাড়ে কীভাবে ঝড় ওঠে তা বোঝার বয়স হয়েছে। বুদ্ধিসুদ্ধি যথেষ্ট। কিন্তু কেন যেন আমার সিমকার্ডে একেক সময় টাওয়ার থাকে না! গোলমাল পাকায়। ঠিক সময় ঠিক জিনিসটা মাথায় আসে না। এই কারণে বাড়ির লোক থেকে বন্ধু বান্ধব সবাই হেয় করে। ঘটনা মুহূর্তের, কিন্তু ঘটিয়ে দেয় বড় ক্ষতি। যেমন আজ সকালেই হল।

[আরও পড়ুন: অবশ্যম্ভাবী রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ! আমূল বদলে যেতে পারে দুনিয়া, কী প্রভাব পড়বে ভারতে?]

কলেজমেট পূজার সঙ্গে প্রেম করার, কনুইদার ভাষায় ‘ঝোপে ঝড় তোলার’ বাসনা বহুদিনের। অথচ মুহূর্তের ভুলে সেই ঝড় কাল তুলবে হয় এক নম্বর ভিকি, অথবা দু’নম্বর সায়ন্তন। যদিও বন্দোবস্ত করে ফেলছিলাম প্রায়। চোখ মুখ ঠিক হ্যায় কিন্তু টোটাল ফিগার পূজাকে আমি অনেক দিন থেকে লাইক করি। ভেবেছিলাম এবারের হ্যাপি-সরস্বতী-দিবসটা ওর সঙ্গে বিন্দাস প্রেম করে কাটিয়ে দেব। সুযোগ বুঝে প্রস্তাবও দিলাম। আমার কথা শুনে স্কিন টাইট টি শার্ট-জিনস পরা পূজা বলল, ‘তুই তিন নম্বরে।’ 

মনে মনে দমে গেলেও অ্যাটিটিউড দেখালাম। বললাম, ‘রেস ফিনিশ না হওয়া অবধি বলা যায় না কে চাম্পিয়ন আর কে!’ পূজা বলল, ‘রিয়েলি?’ আমি বললাম, ‘কাল শাড়ি পরবি? আজকেও ইউ আর লুকিং ব্লো…।’ পূজা ওর লাল লিপস্টিক লেপা ঠোঁটটাকে অদ্ভুত কায়দায় কুঁচকে প্রায় নাকের কাছে এনে সুপার সেক্সি পোজে একটা সেলফি তুলে বলল, ‘থ্যাঙ্কস রে।’ আমার এক্সাইটেড লাগল। বললাম, ‘বিলিভ মি, তোকে যখনই দেখি, তখনই জাদু-কি-ঝপ্পি দিতে ইচ্ছে করে।’ পূজা গোটা শরীর দুলিয়ে বলল, ‘এখানে শীত করছে। চল, চারতলার ছাদে যাই।’ কিন্তু আমি বললাম, ‘ কেন?’ পূজা অবাক চোখে তাকিয়েও হাসল। বলল, ‘তোকে একটা নোট দেখাব।’ এরপরও ফেল করল আমার ‘সিম কার্ড’। টাওয়ার মিস হল, শাল্লা রাইট টাইমে। গাধা-আমি বললাম, ‘সিঁড়ি তো কমপ্লিট হয়নি। যাবি কী করে! তাছাড়া স্যার বারণ করেছে না!’ পূজা বলল, ‘গো টু হেল!’ গ্যাট গ্যাট হাঁটা দিল লেডিজ কমন রুমের দিকে। আমার চটকা ভাঙল যখন, পূজার কোড ল্যাং যতক্ষণে বুঝেছি, ততক্ষণে হাতছাড়া হয়ে গেছে আমার সরস্বতী পুজোর পূজা!

নিদারুণ দুঃখের কথা ভাবতে ভাবতে বোধ হয় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। কনুইদা মাথার পিছনে চাঁটি মেরে জাগিয়ে দিল। ‘তুই ঘুমোচ্ছিস? এদিকে প্যান্ডেলের কাজ শেষ।’

ধরা খেয়ে হ্যাঁ-না বলে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ালাম।
কনুইদা বলল, ‘অনেক হয়েছে। এবার বাড়ি চল। কাল আমার সঙ্গে আছিস তো?’
ভেবে দেখলাম আমার পূজা জোটেনি। এমত অবস্থায় কনুইদার সঙ্গে বিরহ উপভোগ করব সরস্বতী পুজোর দিন। দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।
কনুইদা বলল, ‘সরস্বতী পুজো যে পড়াশুনোর ঠাকুর না, প্রেমের ঠাকুরও নয়। আসলে যে ম্যাজিক ঠাকুর। কাল তোকে হাতে-কলমে প্রমাণ দেব।’
‘যার কেউ নেই তাকে দার্শনিক হওয়া থেকে কে আটকাচ্ছে!’ ফিস ফিস করে আওড়ালাম।
কনুইদা বলল, ‘কী বাজে বকছিস!’
আমি জানিয়ে দিলাম কাল সাড়ে দশটায়। ধেনোর চায়ের দোকান। এবং দু’জনে নিজের নিজের বাড়িমুখো হাঁটা দিলাম।

[আরও পড়ুন: বাঙালির আপন সুপারহিরো বাঁটুল দি গ্রেট! পাঁচ দশক পরেও অটুট জনপ্রিয়তার রহস্য কী?]

পরদিন সময় মতো একজোট হয়েছি আমি আর কনুইদা। প্রচুর মাঞ্জা দিয়েছি আমি। বেরোনোর আগে ভেবে নিয়েছি আজ অ্যাগ্রেসিভ খেলব, সুযোগ পেলেই ওভারটেক করব। দেবীর সঙ্গে দেবতা থাকলেও ভয় পাব না। কিন্তু কনুইদার কীর্তি দেখে অবাক। এত সাজুগুজু করতে ওকে কোনওদিন দেখিনি। চোখে সানগ্লাস লাগিয়েছে। আমি বললাম, ‘ভালো আছো তো?’ কনুইদা জানাল খুব খুব খুব।

আসলে গতকাল গভীর রাতে যুগান্তকারী কাণ্ড ঘটিয়েছে কনুইদা। প্রেমে পড়েছে। এফবির মাধ্যমে। আজ একটি মেয়ে আসছে কনুইদার সঙ্গে দেখা করতে। এলাকার বিখ্যাত পার্ক রাধিকা কাননে। সংবাদ শুনে ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে পড়লাম। মুখে কিছু বললাম না। ধেনোর দোকান থেকে ভ্যান আর অটো চেপে রাধিকা কানন পৌঁছনোর পথে লাজুক হেসে কনুইদা জানাল ওর প্রেমিকার নাম ভানুমতী। বয়স বেশি, দোহারা স্বাস্থ্য, কিন্তু সুইট দেখতে।

কনুইদার বিবরণ শুনে এবং নিজের কথা ভেবে রাগে, দুঃখে এক্ষুনি মোমবাতি মিছিল করতে ইচ্ছে হচ্ছিল আমার। মনে হচ্ছিল প্রতিবাদে অনশনে বসি রাস্তায়। সবাই জোড়ায় জোড়ায় ঘুরবে, আমার কেন কেউ থাকবে না! জবাব চাই, জবাব দাও। কিন্তু কে কার কথা শোনা। পোড়া কপাল আমার। ভ্যানে চেপে, অটোয় বসে আমি দেখে যাচ্ছি— রাস্তায় জিনস-টপ, স্কার্ট, সালোয়ার, কুর্তি, শাড়ি পরা অসংখ্য সুন্দরী দেবী উড়ে বেড়াচ্ছে ডানা মেলে। অথচ একজনও আমার নয়! কনুইদারও প্রেমিকা জোটে, আমার জুটল না!

রাধিকা কাননের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে কনুইদা ফোন করল ভানুমতীকে। জানা গেল সে ইতিমধ্যে ভেতরে। সুবিধা মতো ঝোপ দখল করে পজিশন নিয়ে নিয়েছে। অতএব আমরাও পার্কের ভেতরে ঢুকলাম। হোয়াটসঅ্যাপ করে ভানুমতীকে পেয়ে গেল ও। চার-পাঁচ রকমের ফুল গাছের ছোট ঝোপে ঢোকার আগে বলল, ‘কাছেই থাক। এই অল্প এট্টু প্রেম করেই বেরিয়ে আসছি।’

তীব্র যন্ত্রণায় বিদ্ধ আমি কাছাকাছি একটা লোহার বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ট্যাঁরা চোখে দূর থেকে তাকিয়ে থাকলাম কনুইদা আর ভানুমতীর প্রেম-বাগানের দিকে। মিনিট তিনেকেই নড়ে উঠল সেই সংক্ষিপ্ত বাগান বা ঝোপ! কিন্তু তারপরই আর্তনাদ! কনুইদার গলার আওয়াজ যেন! এ কী! কনুইদা হুড়মুড় করে ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসছে। পরিত্রাহি ছুটে আসছে আমার দিকেই!
আমিও ডাক ছাড়লাম, ‘এ-দি-কে।’
কনুইদা হাফাতে হাফাতে এসে বলল, ‘চল পালাই।’
‘কেন?’
‘হাতির হাতের তলায় চাপা পড়ছিলাম আর এট্টু হলেই!’
কনুইদা আমার হাত ধরে টানতে শুরু করেছে। বার বার পার্ক ছাড়তে বলছে। এক্ষুণি। বলছে এ যাত্রায় নাকি বেঁচে গেছে।
আমি বললাম, ‘বলবে তো কী হয়েছে?’
কনুইদা বলল, ‘ঝোপের ভিতর কে, কী দেখে তো ঢুকিনি। কাছাকাছি পৌঁছতেই একটা বিরাট হাত টেনে নামিয়ে নিল। তারপর জাপটে ধরল। একটা কথা পর্যন্ত বলতে দিল না। মানুষের তলায় মানুষ চাপা পড়লেও একটা কথা ছিল। কিন্তু…।’

এর মধ্যে ভানুমতীও ঝোপের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। দেখেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, ‘ওরে বা-বা রে!’। সত্যি বলতে কনুইদার ফুল বডির সমান এই মহিলার একটা হাতের ওজন। কনুইদা বেঁচে ফিরেছে এই যথেষ্ট।

[আরও পড়ুন: আঁধারে ঢাকল ইন্ডিয়া গেটের নেতাজির হলোগ্রাম মূর্তি! প্রতিবাদে বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদদের]

ভানুমতীকে দেখেই কনুইদা ফের দৌড় লাগাতে যাচ্ছিল। কিন্তু ফাড়া কেটে গেল। সে বিরাটাকার নিজেই গজ গজ করতে করতে উলটো দিকে হাঁটা দিল। আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। রাধিকা কাননের গেটের বাইরে এলাম। কনুইদার মন ভাল করতে রাস্তায় দাঁড়ানো আলুকাবলিওলাকে বললাম, দু’ প্লেট। তোমার মন যত চায় তত ঝাল। কথা শেষ করেছি কী করিনি, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি…! কোথা থেকে পূজা এসে জাপটে ‘জাদু কি ঝপ্পি দিল’ আমায়! বলল, ‘আজকের দিনে কেউ আলুকাবলি খায়! দুষ্টু!’ আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম, ‘তিন নম্বরে ছিলাম যে!’ পূজা আমাকে বগলদাবা করে জানাল, এক নম্বরের জ্বর, দুই নম্বরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। অতএব আমিই এখন নম্বর ওয়ান। কনুইদার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললাম, ‘তাহলে আসি দাদা। আলুকাবলির খাওয়ার সময় নেই। এই অবস্থায় একাই দু’প্লেট মেরে দাও তুমি।’

কনুইদা অবাক কার্তিকের মতো চেয়ে আছে আমার দিকে। পূজার হাত ধরে রাধিকা কাননের ভেতরে হাঁটা দেওয়ার আগে বললাম, ‘তুমি গুরু ঠিক। সরস্বতী পুজো মানে ম্যাজিক। ভানুমতী কা খেল!’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement