স্টাফ রিপোর্টার: আগামিকাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। দিনটি কি শুধুই প্রেমদিবস? পরকীয়াদিবস বলা যায় না? গুগল ঘাঁটতে গিয়ে তসলিমার একটা লাইন সামনে এসে পড়ল। লিখছেন, “ভ্যালেন্টাইন ডে। অদ্ভুত একটা দিন বটে। ছোটবেলায় এরকম দিনের নাম শুনিনি। হঠাৎ যেন উড়ে এসে জুড়ে বসল। জুড়ে বসে ভালো কাজ যদি করতে পারে করুক!”
চমক লাগল এসে অন্তিম লাইনে। ‘যদি করতে পারে করুক’। আর যদি অন্য কিছু করে? তা কি খারাপ? এই অন্য কিছু কী? সেটাই কি পরকীয়া? সরাসরি প্রেম নয়। অন্য কারও প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম? অন্যের স্বামী কিংবা স্ত্রীকে দাবি করে বসা? নিজের কেউ থাকতেও? তাকে কি অন্যায় বলে না? কে-ই বা তা ঠিক করে দেবে?
নারী-পুরুষে একসঙ্গে বসে প্রচুর মদ্যপান করে সঙ্গী বেছে নেওয়ার রেওয়াজ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে বহুকাল ধরে। ছিল প্রাচীন রোমেও। শোনা যায়, প্রাচীন রোমের দেবী লুপারকালিয়ার উদ্দেশে আয়োজিত এক উৎসবেরও এমন প্রথা ছিল। ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলত উৎসব। ধীরে ধীরে খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তবে এই উৎসবকে ছাড়তে পারেনি ভালবাসার টান। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সে সময়েই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার জন্য রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তৃতীয় শতকে তাঁর গর্দান নিয়েছিলেন। শেষে এই কারণটিকেই উপলক্ষ করে উৎসব নতুন মোড় নিল। কিন্তু কেউ বলে দিল না শুধুমাত্র কাকে ভালবাসা যাবে। অনেকেই বলবেন, এটাই ভালবাসার ফাঁক। একের চেয়ে বহুর দিকে নজর। পা বাড়ানো।
আপেল খাওয়ার সংখ্যাও বাড়তে লাগল সঙ্গে সঙ্গে। যত ইভ তত আপেল! এই প্রেম উসকানিতে ভর করেই চলতে লাগল ভালবাসার নৌকা। পরিসংখ্যান বলছে, সহজ-সরল প্রেম দুনিয়ায় যত বেশি, পরকীয়া তার কয়েক গুণ। অর্থাৎ, দোষ-গুণের বিচার না করেই প্রেম চলল গড়গড়িয়ে। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই নিজের পরকীয়ায় মজিয়েছিলেন নিজের মামীকে। রাধাকে। আর কে রোখে? দুনিয়াজোড়া ফাঁদে, পার্কে বসে এখন আর কেউ কাঁদে না।
কিন্নর নয়। পরীরা এখন থাকে আশপাশেই। কান পেতে রাখতে হয়। সাহসে ভরসা রাখতে হয়। শিরদাঁড়ায় শিহরণ তুলে রাস্তায় নামছে পরীর দল। সাহসী হাতে কারও ফুল। কারও হাতছানি। অভিজ্ঞ মহল যদিও আরও প্রশ্ন তুলেছে। প্রেমের মরশুমে একাধিক সঙ্গীকে বেছে নেওয়াই যেতে পারে। প্রেমের দোষ কী? কিন্তু এত প্রেম সামলাতে খরচের পরিমাও তো বাড়ে!
বাজারে একটি গোলাপের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বেঙ্গালুরু গোলাপের চাহিদা আরও বেশি। লেক মার্কেটে কাল এমন একটি গোলাপের দাম হবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অনেকে আবার ভালবাসায় গাঢ় রক্তের রং বোঝাতে কালো গোলাপ দাবি করে বসছে। বাজারে ইতিমধ্যে এসে পড়েছে সেসবও। সামান্য এক তোড়া ফুলের দাম ৪০০ টাকা। দক্ষিণের লেক মার্কেট, গোলপার্ক, কসবা, গড়িয়াহাট, পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, উত্তরের কলেজ স্ট্রিট, মানিকতলা, শ্যামবাজার এখন ফুলে রঙিন। তার সঙ্গে চকোলেট এসে গিয়েছে ভালবাসার রংয়ে রঙিন হয়ে। এত পরী, এত সুন্দরী, সাহস থাকলে সামলে দেখাক বাঙালি।
বাজারের হিসাব অনুযায়ী, ভালবাসার কার্ডের চেয়ে উপহার এখন বেশি দামী। তার চাহিদাও বেশি। কিন্তু বহু সঙ্গীকে একবারে খুশি করা যাবে কীভাবে? বিশেষজ্ঞ মহলের কথায়, অনেকে সারা বছর পুঁজি জমিয়েই রাখে এমন দিনগুলোর জন্য। কেউ আবার চালাকি করে। একজনের উপহার আরেকজনকে দিয়ে কাজ সেরে ফেলে। প্রাণখোলা বন্ধনহীন এমন ভালবাসার দিনে মাত্র একটা সংখ্যায় আবদ্ধ থাকতে চায় না অনেকেই। কিন্তু খাওয়াদাওয়া? এমন দিনগুলোতে বুফেতে যাওয়াই পছন্দ করে অনেকে। কম খরচে বেশি খাওয়া। তবে শুধু খাবারের বুফেই নয়। ভালবাসারও বুফে চলে। সাধারণত নিজস্ব মহলের মধ্যেই পরকীয়া সেরে নেওয়া যায়। বন্ধু, তার বউ কিংবা বান্ধবীর সঙ্গে বা মেয়েটির ক্ষেত্রে বন্ধুর স্বামী বা প্রেমিকের সঙ্গে প্রেম হলে তো কথাই নেই। একইসঙ্গে ঘোরা, সুযোগ বুঝে এ গাল থেকে ও গালে ঠোঁট ছোঁয়ানো আর তার সঙ্গে একইসঙ্গে বুফেতে খাবার খাওয়া। ভালবাসার বুফেতে পরকীয়ার ছোঁয়া। দাবি একটাই। উৎসব হোক রঙিন।
সাহসে ভর করেই আরও রমণীয় হোক পরকীয়া। ঠোঁট থেকে রং যাক কলারে। ঘরবন্দি হোক ভালবাসা। কেউ রঙিন হয়ে ঝরুক বসন্তে। জীবন কাউকে ডাকুক অবিরাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.