অর্ণব আইচ ও নব্যেন্দু হাজরা: এতদিন যা বলতে ঢোক গিলত নতুন বউ। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এক ‘মহিলা’ তাই লিখে দিলেন দৈনিকে। ‘inter-course এ অক্ষম।’ বিয়ের বিজ্ঞাপনে পাত্র চাই কলমে তাঁর খোলামেলা স্বীকারোক্তি, বিয়ের পর যৌন সুখ দিতে পারব না। আবার যৌন সুখে অনাগ্রহী ছেলেরাই যেন যোগাযোগ করেন, সে কথাও বিজ্ঞাপনে লিখেছেন। রাখঢাক না করেই তাতে লেখা, ঘরজামাই খুঁজছেন তিনি। তবে অবশ্যই পাত্রকে শিক্ষিত, সুদর্শন, ব্রাক্ষণ, নেশাবিহীন হতে হবে।
বিজ্ঞাপনের পাত্র-পাত্রীর কলমে এহেন লেখা দেখেই বিষম খেয়েছেন রক্ষণশীলরা। তবে এ কথাও মেনে নিয়েছেন যে, ক্রমশ সাহসী হচ্ছে সমাজ। চার দেওয়ালে চেপে রাখা কথাও ফলাও করে বিজ্ঞাপনে দিতে পিছপা হচ্ছে না মধ্যবিত্ত গেরস্থ। এবং তা একেবারেই কলকাতা বা কলকাতার কাছাকাছি জেলায় নয়। পাত্রীর বাড়ি মেদিনীপুরের বালিচকে। বিজ্ঞাপনেই লিখে দিয়েছেন, পাত্রী বিধবা। সেখানে দেওয়া নম্বরে ফোন করে জানা গেল, আট মাস আগে তাঁর স্বামী আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু সংসার করার অদম্য ইচ্ছে আজও কাজ করে স্বামীহারা ওই মহিলার। কিন্তু কাউকে ঠকাতে তিনি চান না। তাই রাখঢাক না করেই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন নিজের অক্ষমতা জানিয়েই।
কাগজের পাতায় সোজাসাপটা জানিয়েছেন, ‘মেদিনীপুর নিবাসী পাত্রী ব্রাহ্মণ ৩৯/৫১, বি.এ সুশ্রী, ফর্সা, বিধবা inter course-এ অক্ষম। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, চরিত্রবান, সুদর্শন, নেশাবিহীন, সৎ, সঃচাঃ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিক্ষিত, পরিশ্রমী, inter course-এ অক্ষম কিন্তু দায়িত্ব নিতে আগ্রহী, পিছুটানহীন, ঘরজামাই থাকতে আগ্রহী পাত্র চাই।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করা হলে পাত্রীর দিদি জানান, বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। মেদিনীপুরের বালিচকে অনেক জমি-জায়গাও আছে। তাঁরা চাইছেন এমন পাত্র, যিনি সেখানে গিয়ে থাকবেন। তাঁর বোন বিধবা। আড়াই বছর আগে বোনের বিয়ে হলেও স্বামী আচমকাই মারা যান। তিনি এও জানিয়েছেন, তাঁর বোন শারীরিক মিলনে অক্ষম। তবে এমন পাত্রকে কি পাওয়া গিয়েছে? তাঁর দিদির জবাব, ফোন এলেও ঠিকঠাক কিছু হয়নি। কারণ ঘরজামাই অনেকেই থাকতে চাইছেন না।
দিনে দিনে বাড়ছে কাজের চাপ। বাড়ছে রাত জাগার অভ্যেস। সঙ্গে মানসিক অস্থিরতা। আর এসবের ভিড়েই কমছে যৌন ক্ষমতা। অন্তত চিকিৎসকরা তাই বলছেন। ফি বছরই গাইনোকলজিস্টের চেম্বারে বাড়ছে ভিড়। মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই কমে আসছে যৌন ক্ষমতা। বিয়ের পরও শারীরিক সুখ দিতে পারছেন না উভয়কে। ফলে বাড়ছে দাম্পত্য সমস্যা। পরকীয়া। অনেকে তো বিয়ে করতেই ভয় পাচ্ছেন! যদি সবাই জেনে যায় লুকনো অসুখের কথা! বহু বিয়ে ভেঙেও যাচ্ছে শুধু এই কারণেই। নতুন প্রজন্মে তার ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ। আগে লোকে সংসার ভাঙার ভয়ে এসব কথা বলত না। মুখ বুজে থাকত। কিন্তু এখন সেসবের ধার ধারছে না কেউই। ফলে বাড়ছে ডিভোর্সের সংখ্যাও।
মনোবিদদের কথায়, এই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অনেকটাই দায়ী নেটদুনিয়াও। আজকাল সকলের হাতে স্মার্টফোন। খোলামকুচির মতো পর্ন সাইট দেখছে অনেকেই। পর্ন দেখার আসক্তি থেকেও মনে বাসা বাঁধতে পারে এমন অসুখ। তবে নিজের অক্ষমতার কথা লুকিয়ে না রেখে পাত্র চাইয়ের বিজ্ঞাপনেও ওই মহিলা যে সেকথা জানিয়েছেন, তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অনেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.