মণিদীপা কর: ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ মানেই লাল গোলাপ থেকে ডায়মন্ড রিং। জীবনানন্দ থেকে জয় গোস্বামী…। ভালবাসার মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে উথাল-পাথাল মন। বুকের বাঁদিকে বুঝতে না-পারা অনুভূতি। কারণ? হৃদয়, অর্থাৎ ভালবাসার কেন্দ্র নাকি রয়েছে বুকের বাঁদিকে। প্রতি মুহূর্তে সে সশব্দে জানান দেয় তার চলার ছন্দ। যদিও হৃদয়ের অবস্থান নিয়ে বিজ্ঞান ও কাব্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিস্তর। কাব্য বলছে, ‘মধুর মধুর চাউনি রে তোর কন্যা আমার হৃৎপিণ্ড তিড়িং বিড়িং করে’। আর তাই প্রেমের চিহ্ন আঁকা হয়েছে হৃৎপিণ্ডের আদলে। পুরাণ মতে কামদেব মদনও তাঁর পুষ্পক বাণ মারেন বুকের বাঁদিকে। বুকের বাঁদিকে হাত রেখেই প্রেম নিবেদন করেন ‘রোমিও’রা।
যদিও বিজ্ঞানের মতে ‘ভালবাসা আসলে তো পিটুইটারির খেলা, আমরা বোকারা বলি প্রেম’। পিটুইটারি মানে মস্তিষ্কের গ্রন্থি। যা থেকে বেরনো হরমোনই নাকি সমস্ত অনুভূতির জন্য দায়ী। সেই ঠিক করে দেয় প্রথম দেখায় প্রেম হবে, নাকি দীর্ঘ বোঝাপড়ার পর চাওয়া-পাওয়া, লাভ-লোকসানের ব্যালান্স শিট মিলিয়ে। সে যাই হোক, প্রেমের হোতা যদি পিটুইটারি হয়, তবে অবশ্যই প্রেমের কেন্দ্র মস্তিষ্ক। বিজ্ঞান অন্তত সেই রকমই বলছে।
মস্তিষ্ক আর হৃৎপিণ্ডের দ্বন্দ্বে আসলে যে বিষয়টি স্থান পায়, সেটা হল আবেগ বনাম বাস্তবতা। বিজ্ঞানের মতে, এই দুই অনুভূতিরই জন্ম হয় মস্তিষ্কে। সেই অর্থে হৃদয়ের বাসও মস্তিষ্কে। ব্রেনের লিম্বক সিস্টেমই সেই কেন্দ্র যেখানে আর পাঁচটা অনুভূতির মতো ভালবাসা তৈরি হয়। ভালবাসা নিয়েও হয়েছে বিস্তর গবেষণা। পশ্চিমি দুনিয়ার গবেষণা বলছে, ভালবাসার বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। যার প্রথম দফায় প্রবল আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা বা কামনা সৃষ্টি হয়। পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরন ও মেয়ের ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোন এই কামনার সৃষ্টিকারী। এর পরের পর্যায়ে একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। গবেষকদের মতে, ডোপামিন, অ্যাড্রেনালিন ও সেরোটোনিন এই তিনটি নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাবে ভাললাগার মানুষের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। প্রেমের যে পর্যায়ে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়, তাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন। এইভাবেই ভাললাগা ক্রমে প্রেমে পরিণত হয়। গবেষণা বলছে, প্রেমে পড়ার প্রথম পর্যায়টি মোটেই সহজ নয়। প্রথম ছ’মাসের চাপ মারাত্মক। একদিকে রয়েছে সঙ্গীকে সব সময় দেখা, কাছে পাওয়ার বাসনা। অন্যদিকে বাড়ি, কর্মক্ষেত্র এবং বন্ধু-বান্ধবদের চোখ এড়িয়ে সব দিক বজায় রাখার চেষ্টা। সব মিলিয়ে রীতিমতো শ্যাম রাখি না কুল রাখি দশা।
১২ জোড়া নব্য প্রেমিক-প্রেমিকার রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্রেম করেন না অথবা ছ’মাসের বেশি সময় ধরে প্রেম করছেন তাঁদের তুলনায় নব্য প্রেমিক-প্রেমিকার রক্তে স্ট্রেস হরমোন অর্থাৎ কর্টিসোলের মাত্রা অনেকটাই বেশি। এই সব তত্ত্বকথাই প্রেমে ‘ভায়া হরমোন’ মস্তিষ্কের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। যদিও বিজ্ঞানের কচকচানিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই প্রমিক-প্রেমিকাদের। ব্রেন বা হার্ট, প্রেমের কেন্দ্র যাই হোক না কেন, সব বাঁধা খুলে এদিন শুধুই প্রেমের জোয়ারে ভাসার দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.