নব্যেন্দু হাজরা: অনেক তো বয়স হল, বিয়েটা এবার করেই নে! এদেশে এমন কোনও পুরুষ বা মহিলা নেই, যিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে এরকম কথা শোনেননি। একটা বয়সের পর আত্মীয়-পরিজনেরা যেমন উতলা হয়ে অপেক্ষা করে থাকেন কবে বিয়ে করবেন অমুকের ছেলে, তমুকের মেয়ে। সেই সমাজের চাপে পড়ে মায়েরা নিদ্রা হারান। ছেলে মেয়ের সঙ্গে চলে ইমোশনাল মেলোড্রামা। ঘটকের সঙ্গে চুপিসারে ফটো দেওয়া-নেওয়া। ওয়েবসাইটে পাত্র-পাত্রীর প্রোফাইল আপলোড করে ছেলে বা মেয়ের হোয়াটস্যাপে পাঠিয়ে দেওয়া।
এত কিছু করে যখন হার মানে মায়েরা। তখন শেষ অস্ত্র, ‘আমি বাবা বলে বলে ক্লান্ত, নিজের পছন্দেই বিয়ে করিস।’ মায়েদের এই জনপ্রিয় সংলাপই এবার উঠে এল এক ডেটিং অ্য়াপের সমীক্ষায়। এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার ৮৫ শতাংশ মায়েরা রীতিমতো ছেলে-মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে লাভ ম্যারেজকেই সবুজ সংকেত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ৮৫ শতাংশ মায়েরা জীবনসঙ্গী বাছার ক্ষেত্রে ডেটিং অ্যাপের ব্যবহারকেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছেন।
তবে শুধু এই তথ্য়ই নয়, এই সমীক্ষা থেকে সামনে এসেছে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও। যেমন,
১) প্রায় ৪০ শতাংশ ছেলেমেয়ে জানিয়েছেন, তাঁদের বিয়ের ব্যাপারে তাঁদের বাবার থেকে বেশি চিন্তিত মায়েরা।
২) তথ্য বলছে, প্রায় ৫০ শতাংশ মায়েদের ডেটিং অ্য়াপ নিয়ে কোনও ধরনের সমস্য়া নেই। অন্যদিকে, ২০ শতাংশ মায়েরা জানেনই না তাঁদের ছেলে বা মেয়ে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে। মাত্র ৭ শতাংশ মায়েদের কাছে ডেটিং অ্যাপ একেবারে ভাল জিনিস নয়।
৩) এই সমীক্ষা অনুযায়ী, জয়পুর, ইন্দোর, লখনউয়ের মায়েরা বিয়ের ব্যাপারটা তাঁদের মেয়েদের উপর ছেড়ে দেন। অন্য়দিকে এই সব শহরের ৫৫ শতাংশ ছেলেদের উপর বিয়ের চাপ দেওয়া হয়। তবে কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো শহরগুলির ৫৩ শতাংশ মেয়েরা জানিয়েছেন তাঁদের বিয়ের জন্য চাপ দেন তাঁদের মায়েরা।
৪) ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন মেয়েদের কেরিয়ার ও পড়াশুনোর থেকে বিয়েকেই বেশি প্রাধান্য দেন মায়েরা। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্য়াপারটা একটু অন্যরকম। ৪৬ শতাংশ মায়েরা তাঁর ছেলেদের বিয়েকে বেশি প্রাধান্য দেয়, কেরিয়ারের তুলনায়। অন্যদিকে ৫৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বিয়ের থেকে ছেলেদের কেরিয়ারকেই বেশি গুরুত্ব দেন মায়েরা।
৫) তথ্য় বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে মায়েরা সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারটা এখনও সমাজ, নিরাপত্তা এবং বয়সকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে চান। আর এক্ষেত্রে লোকে কী বলবে, সারাজীবন একা থাকার মতো অনিশ্চয়তার কথাও বলা হয় সন্তাদের।
এই সমীক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে এই অ্যাপের কর্ণধার স্নেহিল খানোর জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই সমীক্ষা মূলত ছিল ডেটিং অ্যাপ সম্পর্কে মানুষ ঠিক কী বোঝেন তা জানার জন্য। তবে এই সমীক্ষা থেকে যা তথ্য এসেছে, তার থেকে বোঝাই যাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা, আলোচনাসভার কারণে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে ডেটিং অ্যাপ এবং জীবনসঙ্গী বাছার ক্ষেত্রে অ্যাপের ব্যবহারকে বেশিরভাগ মানুষ ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.